Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কাগজে নির্মল, বাস্তবেও? বিশ্ব শৌচাগার দিবসে কী পরিস্থিতি জেলায়

মুরারই ব্লকের মহুরাপুর পঞ্চায়েতের বটতলা গ্রামে নেই একটিও শৌচালয়। ৩০টি পরিবারের বাস এই গ্রামে। এ ছাড়াও রাজগ্রাম পাথর শিল্পাঞ্চলে আদিবাসী গ্রামগুলিতেও একই চিত্র।

বেহাল: কোথাও শৌচাগার অসমাপ্ত, কোথাও পরিত্যক্ত। রামপুরহাটের কুতুবপুরে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

বেহাল: কোথাও শৌচাগার অসমাপ্ত, কোথাও পরিত্যক্ত। রামপুরহাটের কুতুবপুরে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় ও তন্ময় দত্ত
রামপুরহাট, মুরারই শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৫১
Share: Save:

জেলা নির্মল ঘোষিত হয়েছে আগেই। তবে তা কেবলই কাগজে-কলমে। মঙ্গলবার, বিশ্ব শৌচাগার দিবসের দিনও দেখা যাচ্ছে বীরভূমের বহু গ্রামেই শৌচাগার হয়নি। বহু জায়গায় শৌচাগার হলেও তা পরিত্যক্ত বা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে রয়েছে। গ্রামবাসীদের শৌচকর্মের জন্য ছুটতে হচ্ছে মাঠেই।

মুরারই ব্লকের মহুরাপুর পঞ্চায়েতের বটতলা গ্রামে নেই একটিও শৌচালয়। ৩০টি পরিবারের বাস এই গ্রামে। এ ছাড়াও রাজগ্রাম পাথর শিল্পাঞ্চলে আদিবাসী গ্রামগুলিতেও একই চিত্র। গ্রামবাসীরা বাইরে শৌচকর্ম সারতে রাজি নন। তাই শৌচালয় নির্মাণের দাবিতে পঞ্চায়েত ও বিডিও অফিসে আবেদন করেছেন। মঙ্গলবার, বিশ্ব শৌচালয় দিবসের দিনই অবশ্য গ্রােমর এক উপভোক্তার বাড়িতে শৌচালয় তৈরির কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। গ্রামের মহিলারা বলছেন, ‘‘খোলা আকাশের নিচে শৌচকর্ম সারতে সম্মানে লাগছে, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হচ্ছে। তেমনই রোগ সংক্রমণের আশঙ্কাও রয়েছে। এলাকায় দূষণও বাড়ছে। তাই আমরা পঞ্চায়েতে ও বিডিও অফিসে

আবেদন জানিয়েছিলাম শৌচালয় নির্মাণের জন্য।’’

আদিবাসী প্রধান ওই এলাকার মানুষজন পাথর শিল্পাঞ্চলে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গ্রামে পাকা বাড়ি নেই বললেই চলে। গ্রামের বাসিন্দা বলাই সর্দার, রাম মান্ডিরা বলছেন, ‘‘বছর খানেক আগে শৌচালয় নির্মাণের জন্য ৯০০ টাকা দিয়ে রসিদ কেটেছিলাম। আজ পর্যন্ত শৌচালয় নির্মাণ হয়নি। গ্রামের অধিকাংশ মানুষজন দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করেন। আমাদের পক্ষে এত টাকা দিয়ে শৌচালয় নির্মাণ করা সম্ভব নয়।’’ মুরারই ১ ব্লকের বিডিও নিশীথভাস্কর পাল বলেন, ‘‘এ দিনই ওই গ্রােম শৌচালয় তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।’’ মুরারই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শাহনাজ বেগম বলছেন, ‘‘বিভিন্ন গ্রামে শৌচালয় নির্মাণ করছি। কিছু গ্রামে সচেতনতার অভাব রয়েছে। মানুষজনকে সচেতন করছি।’’

মুরারই ২ ব্লকের উত্তর রামচন্দ্রপুর গ্রামে ৪০০ পরিবারের বাস, ভোটার সংখ্যা ৯৫০। কিন্তু শৌচালয় মাত্র ১৫টি। যদিও মুরারই-২ ব্লক ‘নির্মল বাংলা’র সরকারি শংসাপত্র পেয়েছে। ব্লক জুড়ে প্রচার হয়েছে “কোনও গ্রামেই আর মাঠে-ঘাটে, খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করতে যান না কেউ।’’ যদিও এই গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে শৌচাগার মানে খোলা মাঠ বা নদীর পাড়। মহিলাদেরও পুরুষদের মতোই একই ভাবে মাঠে, ঘাটে, খোলা জায়গায় গিয়ে শৌচকর্ম করতে হয়।

গ্রামে সাকুল্যে তিনটে পাকা বাড়ি। অধিকাংশ মানুষই চাষ নির্ভর। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকার সংখ্যাই বেশি। পঞ্চায়েত, ব্লক অফিস, মহকুমাশাসক, জেলাশাসকের দফতরে গিয়ে তাঁদের সমস্যা মিটছে না বলে ক্ষোভ বাসিন্দাদের। গ্রামের বাসিন্দা শ্রীমতি রবিদাস বলেন, ‘‘গ্রামের ছেলে মেয়েরা স্কুলে, কলেজে পড়ছে। তাদের অসুবিধা হচ্ছে। গ্রামের বাইরের জগৎটাই যে আলাদা। ওদের কাছেই নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের। কিন্তু গরিব বলে একটা শৌচালয় বানানোর টাকা নেই। সরকারি সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়।” আরেক গ্রামবাসী কবিরুদ্দিন শেখও বলেন, ‘‘আমরা দিনমজুর। শৌচালয় তৈরির টাকা আমরা কোথায় পাব?”

অভিযোগ, জেলায় কোথাও কাগজে কলমে শৌচালয় নির্মাণ হয়ে থাকলেও আদৌ সেখানে শৌচালয় নির্মাণ হয় নি। আবার শৌচালয় নির্মাণ হয়ে থাকলেও এখনও কোথাও উনুনের জ্বালানি রাখা হয়েছে। কোথাও আবার খড়ের আঁটি বোঝাই করে রাখা আছে। কোথাও আবার ভিজে কাপড় মেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা হয় শৌচাগার। জেলা প্রশাসনের দাবি, শৌচাগার নির্মাণ হয়নি, অথচ কাগজে কলমে দেখানো হয়েছে সেক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে। মুরারই ২ ব্লকের বিডিও অমিতাভ বিশ্বাস বলেন, ‘‘খুব তাড়াতাড়ি ওই গ্রামের উপভোক্তাদের শৌচাগার নির্মাণ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nirmal District Birbhum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE