Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

শৌচাগারহীন সদস্যকে নিয়েই সচেতনতার পাঠ কর্তাদের

প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১২ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী বাঁকুড়া জেলার শৌচালয়হীন প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এ বার উপভোক্তাদের শৌচাগার ব্যবহারে অভ্যস্ত করতে গ্রামে গ্রামে যাচ্ছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা।

মনই দশা হয়েছে শৌচাগারের দরজার। (ইনসেটে) মিত্তন লোহার। নিজস্ব চিত্র

মনই দশা হয়েছে শৌচাগারের দরজার। (ইনসেটে) মিত্তন লোহার। নিজস্ব চিত্র

শুভ্র মিত্র
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৩৯
Share: Save:

সরকার তো শৌচাগার তৈরি করে দিচ্ছে, কিন্তু, মানুষ কি ব্যবহার করছেন? সরেজমিন দেখতে সাতসকালে সাইকেলে চেপে গ্রামে গিয়েছিলেন মহকুমাশাসক, বিডিও। ডেকে নিয়েছিলেন পঞ্চায়েত সদস্যকে। তাঁর গায়ে চাপিয়ে দেওয়া হয় মিশন নির্মল বাংলার সচেতনতার বার্তা লেখা টি-শার্ট। কিন্তু, সেই পঞ্চায়েত সদস্যেরই বাড়িতে শৌচালয় নেই। তিনিও মাঠে যান শৌচকর্ম সারতে। বুধবার বিষ্ণুপুরের মড়ার পঞ্চায়েতের চৌকান গ্রামে সচেতনতার প্রচারে গিয়ে এমনই অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলেন প্রশাসনের আধিকারিক, কর্মীরা।

প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১২ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী বাঁকুড়া জেলার শৌচালয়হীন প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এ বার উপভোক্তাদের শৌচাগার ব্যবহারে অভ্যস্ত করতে গ্রামে গ্রামে যাচ্ছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। গত কয়েক মাস ধরেই ভোরে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে ঝোপঝাড়ে লোকজনকে শৌচকর্মে যেতে দেখলেই আধিকারিকেরা সতর্ক করছেন। কেউ বা মিষ্টি খাইয়ে পরিবারকে সুস্থ রাখার জন্য, পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে শৌচগার ব্যবহারের কথা বোঝাচ্ছেন। কোথাও কোথাও এ সব ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সদস্যদেরও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। তাঁরাও গ্রামবাসীদের খোলা জায়গায় শৌচকর্মের বিপদের কথা বোঝাচ্ছেন।

কিন্তু, এ দিন বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া জঙ্গল ঘেরা চৌকান গ্রামে গিয়ে অন্য অভিজ্ঞতা হল মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল ও বিডিও (বিষ্ণুপুর) স্নেহাশিস দত্তদের। তাঁরা গ্রামে ঢুকে ডেকে নেন মড়ার পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য চৌকান গ্রামের বাসিন্দা মিত্তন লোহারকে। শিয়ালকোন্দায় যাওয়ার পথে পিচ রাস্তার ধারে জঙ্গলবাঁধের ধারে সবে বসতে যাচ্ছিলেন শ্যামল লোহার, অজিত লোহার, হাবল লোহাররা। আধিকারিকদের বাঁশি বাজাতে দেখে তাঁরা পোশাক ঠিক করে বেরিয়ে আসেন। তাঁরা বলেন, ‘‘বিডিও, এসডিওকে কথা দিয়েছি, আর মাঠেঘাটে যাব না। বাড়ির শৌচাগারই ব্যবহার করব।’’

বিষ্ণুপুর ব্লক অফিসের নথি বলছে, ইতিমধ্যে করা সমীক্ষা অনুযায়ী এই ব্লকে ১৫ হাজার ৮৪৭টি শৌচালয় তৈরি করা হয়েছে। নির্মল ব্লকও ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু, বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য মিত্তনবাবুর বাড়িতেই শৌচাগার নেই। নিজেও সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন দু’বারের ওই পঞ্চায়েত সদস্য। তাঁর দাবি, ‘‘আমি রাজমিস্ত্রি। একটু বড় করে ভাল শৌচালয় তৈরি করার ইচ্ছা রয়েছে বলে দেরি হচ্ছে। সে জন্য এত দিন গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলেই বাড়ির সবাই যেতাম।’’

ওই পঞ্চায়েত সদস্যের শৌচাগার নেই শুনে বিডিও বলেন, ‘‘ওই সদস্যেরই যে শৌচাগার নেই, তা জানতাম না। তবে, তাঁরও আর সময় নষ্ট না করে শৌচাগার তৈরি করা উচিত।’’ মিত্তনবাবুও বলেন, ‘‘এ দিন বিডিও-র কাছে সচেতনতার কথা শুনে ভাবছি, দেরি করব না। শীঘ্রই শৌচাগার তৈরি করব।’’ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মথুর কাপড়ি বলেন, ‘‘অন্যকে বোঝানোর আগে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত সদস্যেরা যাতে নিজেরাই শৌচাগার তৈরি করে ফেলেন, সে কথা বলব।’’

চৌকানের অদ্বৈত্য লোহার, লখীন্দর লোহার, জ্যোৎস্না লোহারের অভিয়োগ, এক বছর আগে পঞ্চায়েত থেকে শৌচালয় পেয়ে মাস দুয়েক তাঁরা ব্যবহার করেন। কিন্তু, টিনের পাতের তৈরি দরজা খুলে পড়ে যাওয়ায় এখন তাঁরা ব্যবহার করেন না। তাই তাঁরা ফের জঙ্গলেই যাচ্ছেন।

বিডিও বলেন, ‘‘বাসিন্দারা চাইলেই দরজা সারিয়ে নিতে পারেন। অজুহাত নয়, সুস্থ ভাবে বাঁচতে গেলে গ্রামবাসীকে সচেতন হতেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nirmal Bangla Bishnupur Campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE