হুড়ার জবররা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাইরে বিজেপির উচ্ছ্বাস।
প্রথম দিনে এগিয়ে গেল বিজেপি। দ্বিতীয় স্থানে তৃণমূল।
পুরুলিয়া জেলায় স্থগিত হয়ে যাওয়া ৪৪টি পঞ্চায়েতে বুধবার থেকে বোর্ড গঠন শুরু হয়েছে। প্রথম দিন সাতটি ব্লকের ১৯টি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন ছিল। তার মধ্যে বিজেপির হাতে এসেছে ন’টি পঞ্চায়েত। শাসকদল তৃণমূল বোর্ড গড়েছে সাতটিতে। একটি করে পঞ্চায়েতে প্রধান হয়েছেন সিপিএম, কংগ্রেস ও নির্দল প্রার্থীরা।
ঘটনা হল, প্রধান ও উপপ্রধান পদ সংরক্ষিত হওয়ায় বেশ কিছু পঞ্চায়েতে উলটপুরাণ ঘটেছে। পাড়া ব্লকের পাড়া পঞ্চায়েতে প্রধান পদে সিপিএমের প্রার্থীকে সমর্থন করেছে বিজেপি। হুড়ার লক্ষ্মণপুরে তৃণমূলের প্রধান হলেও উপপ্রধান হয়েছে বিজেপির। জয়পুরের বড়গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। বান্দোয়ানের কুইলাপাল পঞ্চায়েতে আবার ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সমর্থন নিয়ে প্রধান হয়েছে তৃণমূলের। ওই পঞ্চায়েতে উপপ্রধান হয়েছে জেএমএমের। ওই ব্লকেরই ধাদকা পঞ্চায়েতে টসে জিতে প্রধান হয়েছেন নির্দল প্রার্থী বুল্টি সিংহ।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বোর্ড গঠনের দ্বিতীয়-পর্বের প্রথম দিন নির্বিঘ্নে কাটায় স্বস্তিতে পুলিশ ও প্রশাসন। তবে, আজ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বাকি পঞ্চায়েতগুলি ও একটি পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন রয়েছে। সে দিনগুলি এমনই নির্বিঘ্নে পার করতে চাইছে প্রশাসন। সে জন্য ওই এলাকায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জয়পুর ব্লকের ঘাঘরা পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনকে ঘিরে গোলমালে গুলিতে দু’জনের মৃত্যু ঘটায় এবং জেলার অন্যান্য এলাকায় বোর্ড গঠনকে ঘিরে বোমা, গুলিতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় পুরুলিয়ার ৪৪টি পঞ্চায়েত ও তিনটি পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গঠন স্থগিত করে দিয়েছিল প্রশাসন। ডিসেম্বরের গোড়ায় প্রশাসন দ্বিতীয় দফায় বোর্ড গঠনের কথা ঘোষণা করে।
এ দিন সকাল থেকেই প্রতিটি পঞ্চায়েতের সামনে মোতায়েন ছিল পুলিশ বাহিনী। ক’দিন ধরেই ঝাড়খণ্ড সীমানাতেও নাকা তল্লাশি থেকে পুলিশ টহল দিয়েছে। এ দিন সকাল থেকে পঞ্চায়েত ভবনগুলির সামনে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পঞ্চায়েত ভবনের সামনে ভিড় দেখলেই পুলিশ গিয়ে সরিয়ে দিয়েছে। তবে, পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হয়ে যাওয়ার পরে কিছুটা ছাড় দেয় পুলিশ। বিভিন্ন দলের কর্মীরা সদ্য নির্বাচিত প্রধান ও উপপ্রধানের নিয়ে মিছিল করেন।
প্রত্যাশা মতোই বেশির ভাগ পঞ্চায়েতগুলিতে যেখানে যে দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল, তারাই বোর্ড গড়ছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু পাড়া ব্লকের পাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত। এখানে সিপিএমের প্রার্থী কাবুল শেখ বিজেপির সমর্থন নিয়ে প্রধান হয়েছেন। ঘটনা হল, প্রথম পর্যায়ের পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনেও পাড়া ব্লকের নডিহা-সুরুলিয়া পঞ্চায়েতে তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে প্রধান হয়েছেন সিপিএমের প্রার্থী।
পঞ্চায়েতে নির্বাচনে পাড়ায় বিজেপি জিতেছিল ৯টি আসনে, তৃণমূল জিতেছে দু’টি আসনে। একটি করে আসনে জিতেছিলেন সিপিএম, কংগ্রেস ও নির্দল প্রার্থীরা। এই পঞ্চায়েতের প্রধান পদটি ওবিসিদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। ওবিসি প্রার্থী হিসাবে জিতেছিলেন শুধু সিপিএমের কাবুল শেখ ও নির্দলের দিলীপ আনসারি। বোর্ড গঠনে প্রধান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সিপিএমের কাবুল ও নির্দলের দিলীপ।
সূত্রের খবর, ভোটাভুটিতে দিলীপকে সমর্থন করেন তৃণমূলের সদস্যেরা। আর কাবুলকে সমর্থন করেন বিজেপি ও কংগ্রেসের সদস্যেরা। স্বভাবতই জিতেছেন কাবুল শেখ। বিজেপির সমর্থন নিয়ে পাড়ায় সিপিএমের প্রধান হওয়ার ঘটনায় কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল।
দলের জেলা সহ-সভাপতি রথীন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, ‘‘সিপিএম মুখে নীতি, আর্দশের কথা বললেও ক্ষমতার গন্ধ পেলেই সব ভুলে যায়। পাড়া ব্লকের দু’টি পঞ্চায়েতে কোথাও তৃণমূলের কোথাও বা বিজেপির সমর্থন নিয়ে সিপিএম প্রার্থীদের প্রধান হওয়ার ঘটনাতেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ তবে, তাঁদের প্রার্থীকে প্রধান পদে সমর্থন করার জন্য তাঁরা কোনও দলের সমর্থন চাইতে যাননি বলে দাবি করেছেন পাড়ার সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্ব। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীননাথ লোধা বলেন, ‘‘পাড়ায় প্রধান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে দলগত ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কাবুল শেখকে পঞ্চায়েতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা যোগ্য বলে মনে করেছেন বলেই সমর্থন করেছেন।” আর বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘আমরা আগেই জানিয়েছি, তৃণমূলকে রুখতে নিচুতলার কর্মীরা যা ভাল মনে করবেন, তাতে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। পাড়ায় ওবিসি পদে আমাদের কোনও জেতা প্রার্থী ছিল না। নিচুতলার লোকজন তৃণমূলকে আটকাতে সিপিএমকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy