Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
শুভজিৎ-কাণ্ডে সরব মুকুল

ভিড়ে ঠাসা সভায় খুশি বিজেপি

সোমবার, বড়দিনে মিছিল ও সভা হল পুরুলিয়া শহরে। তাতে লোকের উপস্থিতিতে দেখে আলোচনা হয়েছে জেলার তৃণমূলের অন্দরেও।

ঠাসা: পুরুলিয়ার ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে বিজেপি-র সভা। ছবি: সুজিত মাহাতো

ঠাসা: পুরুলিয়ার ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে বিজেপি-র সভা। ছবি: সুজিত মাহাতো

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:২৫
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলায় জেলায় মিছিল, সভার কর্মসূচি নিয়ে শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়ানো শুরু করেছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। রবিবার বীরভূমে মিছিল-সভা করে সেখানকার তৃণমূল নেতৃত্ব এবং পুলিশকে এক হাত নিয়েছে বিজেপি। সোমবার, বড়দিনে মিছিল ও সভা হল পুরুলিয়া শহরে। তাতে লোকের উপস্থিতিতে দেখে আলোচনা হয়েছে জেলার তৃণমূলের অন্দরেও।

এ দিন শহরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের সভায় ভিড় দেখে উল্লসিত রাজ্যের বিজেপি নেতারাও। মঞ্চ থেকে মুকুল রায় দাবি করে ফেললেন, ‘‘এই আবেগ, এই জন উচ্ছ্বাস আগেও দেখেছি। বলতে পারি, পরিবর্তন আগত!’’

সাম্প্রতিক কালে পুরুলিয়ায় তাঁরা যে এত বড় সভা করতে পারেননি, তা আড়ালে মেনে নিচ্ছেন জেলার বিজেপি নেতৃত্বও। এ দিন শহরের রাঁচী রোড থেকে মিছিল শুরু হয়ে শেষ হয় ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে। সভা শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই জমায়েত শুরু করেছিলেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। মিছিল এসে পৌঁছনোর পরে তা বিশাল চেহারা নেয়। ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ঘিরে শহরের তিনটি রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শহরও কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় ঘণ্টা তিনেকের জন্য। বাড়ির ছাদেও লোক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। বিজেপি নেতাদের দাবি, এ দিন মিছিল ও সভা মিলিয়ে অন্তত ১৫ হাজার লোক এসেছিলেন। যদিও পুলিশের হিসেবে, ভিড় হয়েছিল হাজার পাঁচেক মানুষের। আর জেলা তৃণমূলের নিজস্ব হিসেব সাত থেকে সাড়ে সাত হাজার।

সাম্প্রতিক কালে পুরুলিয়া জেলা বিজেপি বারবার সংবাদ শিরোনামে এসেছে তাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য। গত কয়েক বছরে সভাপতিও বদল করেও সমস্যা মেটেনি। বর্তমান জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধেও একাধিক বার সুর চড়িয়েছে দলের বিরোধী গোষ্ঠী। রাজ্য নেতৃত্বকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। এমন এক পরিস্থিতিতে সোমবারের সভা বিজেপি-র নিচুতলার নেতা-কর্মীদের অনেকটাই চাঙ্গা করবে বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। বস্তুত, এ দিনের সভা থেকেই পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিল দল। বক্তৃতার সময় দলের রাজ্য মহিলা মোর্চার সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এর আগে বরাবাজারে এসে দেখেছি জনসমুদ্র। এ দিনও দেখছি কাতারে কাতারে লোক। আগামী পঞ্চায়েত ভোটেও এর প্রতিফলন চাই।’’

ভিড়ের বহর দেখে বীরভূমের মতোই পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল ও পুলিশের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মুকুলেরা। বিশেষ করে শুভজিৎ মাহাতো গ্রেফতারির ঘটনা নিয়ে মুকুল সরব হয়েছেন। মুকুলের ছায়সঙ্গী সুরজিৎ মাহাতোর ভাই শুভজিৎ। মুকুল মাইক হাতে দাবি করেন, ‘‘পুলিশের তরফে বলা হচ্ছে, সৈনিক স্কুলের সামনে থেকে ২৩ কেজি ৪০০ গ্রাম গাঁজা সমেত গ্রেফতার করা হয়েছে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক শুভজিৎকে। আসলে নিকিকে (শুভজিতের ডাকনাম) বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি ওকে যতদূর জানি, গাঁজা খাওয়া দূরের কথা, ও কখনও চোখেও দেখেনি!’’

ঘটনাও হল, শুভজিতের মুক্তির দাবিতে যারা সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছে, সেই আদিবাসী কুড়মি সমাজের অনেক কর্মী-সমর্থককেও এ দিন বিজেপি-র মিছিলে পা মেলাতে ও সভায় উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে। তবে, কোনও ব্যানার বা পতাকা ছাড়াই। শহরবাসীর একাংশও বলছেন, এ দিনের ভিড়ের পিছনে শুভজিৎকে ঘিরে থাকা আবেগ কাজ করেছে। নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে পুলিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট, প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন বলেও ঘোষণা করেছেন মুকুল। শুনে জনতা ফেটে পড়েছে হাততালিতে।

মুকুল, লকেট ছাড়াও সভায় বক্তৃতা দেন দলের রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার ও জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী। জেলা সভাপতির বক্তব্য, ‘‘আমরা আগেই বলেছিলাম এমন সভা করব, শহর স্তব্ধ হয়ে যাবে। বড়দিনে সেটাই করে দেখালাম।’’ তবে, এই ভিড়কে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ জেলা তৃণমূলের সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এত জন বক্তৃতা দিলেন। কিন্তু, উন্নয়নের কোনও বার্তা বা দিশা নেই। গরম গরম কিছু কথা বললে হাততালি পাওয়া যায় ঠিকই, কাজের কাজ হয় না।’’ পঞ্চায়েত ভোটে এই ভিড়ের কোনও প্রভাব পড়বে না বলেও দাবি শান্তিরামবাবুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE