Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

তীরে এসে ডুবে গেল নৌকো, বাঁশ-দড়িতে রক্ষা ৫০ জনের

বাঁধের ছাড়া জলে ফুঁসে ওঠা নদী পার হতে গিয়ে ডুবে গেল যাত্রীবোঝাই একটি নৌকা। তবে পাড় থেকে লোকজন বাঁশ ও দড়ি ফেলে তাঁদের উদ্ধার করায় কোনও বিপর্যয় ঘটেনি। রবিবার দুপুরে রামপুরহাট থানার দেবগ্রাম এলাকার ঘটনা। তবে জলের স্রোতে তলিয়ে গিয়েছে নৌকা, পাঁচটি সাইকেল ও কয়েক বস্তা সব্জি।

নৌকো নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কড়াইয়ে চেপে গোপিবন্দপুর থেকে জুনিদপুরে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। ছবি: অনির্বাণ সেন।

নৌকো নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কড়াইয়ে চেপে গোপিবন্দপুর থেকে জুনিদপুরে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। ছবি: অনির্বাণ সেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট ও সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০১:৪৮
Share: Save:

বাঁধের ছাড়া জলে ফুঁসে ওঠা নদী পার হতে গিয়ে ডুবে গেল যাত্রীবোঝাই একটি নৌকা। তবে পাড় থেকে লোকজন বাঁশ ও দড়ি ফেলে তাঁদের উদ্ধার করায় কোনও বিপর্যয় ঘটেনি। রবিবার দুপুরে রামপুরহাট থানার দেবগ্রাম এলাকার ঘটনা। তবে জলের স্রোতে তলিয়ে গিয়েছে নৌকা, পাঁচটি সাইকেল ও কয়েক বস্তা সব্জি। শনিবার রাতে সাঁইথিয়ার সলফা ও কুনুরী গ্রামের ময়ূরাক্ষী নদীর পাড়ে একটি নৌকা যাত্রীদের নিয়ে বেসামাল হয়ে পড়ে। কয়েকজন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে পাড়ে আসেন। বাকিরা পাড়ের লোকেদের বাড়িয়ে দেওয়া দড়ি ধরে রক্ষা পান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় রামপুরহাট থানার দেবগ্রাম ও নাছিয়া গ্রামের লোকেরা নিজেরাই চাঁদা তুলে বর্ষার সময় ব্রাহ্মণী নদী নৌকায় পার হয়ে ওপাড়ে নলহাটি থানার সোনারকুণ্ড ঘাটে যাতায়াত করেন। প্রতিদিনের মতো এ দিন দুপুরেও মাঠে চাষের কাজ সেরে এবং জমি থেকে পটল, কুঁদরি বস্তায় ভরে সোনারকুণ্ড ঘাট থেকে দেবগ্রাম ঘাটে ফিরছিলেন দেবগ্রাম ও নাছিয়া গ্রামের কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে আবদুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা নৌকায় প্রায় ২৫ জন ছিলাম। নদীতে প্রচণ্ড স্রোত ঠেলে দেবগ্রাম ঘাটের কাছাকাছি আসতে হঠাৎ কী ভাবে নৌকা উল্টে গেল বুঝতে পারিনি। তবে নদী পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা সঙ্গে সঙ্গে দড়ি, লম্বা বাঁশ ফেলে দেয়। সেই দড়ি এবং বাঁশ ধরে আমরা সবাই পাড়ে উঠি।’’ নৌকার যাত্রী মুরাসালিম সেখ, গণেশচন্দ্র লেটরা জানান, নদীটা প্রায় নির্বিঘ্নে পার হয়ে গেলেও তীরে এসে তরি যে এ ভাবে ডুবে যাবে তাঁরা ভাবতে পারেননি। তবে তাঁদের আফশোস, নৌকা এবং সাইকেলগুলো পাওয়া যায়নি।

উদ্ধারকারী দেবগ্রামের আকরাম আলি, আব্দুর সুকুর, আজফার আলি বলেন, ‘‘নৌকাডুবির খবর পেয়ে তাড়াতাড়ি দড়ি ও লম্বা বাঁশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। অনেকেই সাঁতার জানতেন। তাঁরা তাড়াতাড়ি করে সাঁতরে পাড়ে উঠে আসেন। অসুবিধায় পড়েন দুই মহিলা এবং দু’জন সাত-আট বছরের বালক। মহিলাদের কিছুক্ষণের মধ্যে দড়ি ফেলে উদ্ধার করা হলেও বালকগুলো নদীর জলে ভাসতে ভাসতে নদী পাড় সংলগ্ন বাঁশের ঝাড়ে আটকে যায়। বাসিন্দারা তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করেন।’’

এ দিকে নৌকাডুবির ঘটনার খবর পেয়ে বিকেলে স্থানীয় আয়াষ অঞ্চলের প্রধান তৃণমূলের রেজাউল করিম গেলে বাসিন্দারা তাঁকে নদীর পাড় পাথর দিয়ে বাঁধানোর জন্য দাবি জানান। রেজাউল করিম বলেন, ‘‘এলাকাবাসীর দাহি বিডিও-কে জানিয়েছি। সমস্যার সমাধান না করা হলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের অঘটন ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’’

অন্যদিকে, শনিবার রাতেও ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে সাঁইথিয়ার সলফা ও কুনুরী এলাকার লোকজন। শুক্রবার ময়ূরাক্ষী ও কানা নদীর দুই নদীর মাঝে থাকা চরের গ্রামগুলি থেকে বহু মহিলা ও পুরুষ সাঁইথিয়ার কুনুরী, সলফা, পাইসর, সিউড়ির জুনিদপুর, ইটাগটিয়া ইত্যাদি গ্রামে চাষের কাজে আসেন। হঠাৎ করে তিলপাড়া জলাধার থেকে বেলা ১১টা নাগাদ নদীতে জল ছাড়ে। ময়ূরাক্ষী ও কানা নদীর দু’কূল ছাপিয়ে জল বইতে শুরু করে। খবর পেয়ে চাষের কাজ ছেড়ে নদী পাড়ে ছুটে যান দু’নদীর মাঝের চরের বাসিন্দারা। নদী পাড়ে গিয়েই তাঁদের থমকে যেতে হয় নদীর জল দেখে। যে কড়াইয়ে চেপে তাঁরা কাজে এসেছিলেন সেই কড়াই চালক জানিয়ে দেন, এই ভরা নদীতে কড়াইয়ে নদী পারাপার কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। কড়াই আসবে না খবর পেতেই বাড়িতে শাশুড়ি-ননদদের কাছে ছোট ছোট বাচ্চা রেখে অভাবের তাড়নায় এ পাড়ে কাজ করতে আসা অনেক মায়েরাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। একই অবস্থা এ পাড় (কুনুরীর দিক) থেকে ও পাড়ে কাজ করতে যাওয়া লোকজনেরও।

একটা নৌকার জন্য শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে অপেক্ষা করতে থাকেন তাঁরা। ব্লক ও জেলা প্রশাসন ট্রাকে চাপিয়ে নদীর পাড়ে শনিবার রাত্রি ৯টায় একটা নৌকা পাঠান। সলফা ও জুনিদপুরের মাঝের নদী ঘাটে নৌকা লাগানো হয়। কী হয় না হয় এই দুঃশ্চিন্তায় নৌকার প্রথম সাওয়ার হিসাবে নদী মাঝের গোবিন্দপুর গ্রামের ২৫ জন পুরুষ চাপেন। জলের স্রোতে নৌকার টাল মাটাল অবস্থা দেখে ২৫ জন যাত্রীর ২২ জনই ঝাঁপ দেন জলে। তাঁদেরই রণজিৎ বাউড়ি, বিকাশ বাউড়ি, আনিসুর রহমান, শেখ ময়নারা বলেন, ‘‘নৌকা পাড় থেকে ছাড়ার কিছুক্ষণ পরেই দেখি টলমল করছে। কিছুটা যেতেই বুঝতে পারলাম মাঝি একরকম হাল ছেড়ে দিয়েছেন। ততক্ষণে নৌকা ও পাড়ের গোবিন্দপুর এলাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। মাঝিকে প্রশ্ন করলে সে ঢোক গিলে বলে কিছুই বুঝতে পারছেন না। নৌকায় থাকলে মৃত্যু অনিবার্য ধরে নিয়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে করতে প্রাণ ভয়ে নদীতে ঝাঁপ দিই।’’ তবে পাড়ের লোকেরা দড়ি ফেলে তাঁদের উদ্ধার করেন। মাঝি ও তিন যাত্রী নৌকাতেই ছিলেন। তাঁরাও দড়ি টেনে পাড়ে আসেন।

সারা রাত ভিজে জামা কাপড় পরে না খেয়ে নদীর পাড়েই বসেছিলেন ওই লোকজন। রবিবার সকাল থেকে মাঝি ফের নৌকা ছাড়ার উদ্যোগ নেন। সাড়ে ৯টা নাগাদ নৌকা ফের ছাড়ে। কিন্তু মাঝনদীতে গিয়ে জলের তোড়ে নৌকা ফের টলমল করতে থাকে। যাত্রীদের চিৎকারে এ বার গোবিন্দপুর গ্রামের লোকেরা দড়ি ফেলে নৌকা-সহ সবাইকে পাড়ে টেনে নিয়ে যান। নৌকা চালক চন্দন হালদার বলেন, ‘‘জলে অসম্ভব স্রোত থাকায় বার বার এই বিপত্তি হচ্ছে।’’

স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ আরিবুল হক জানান, নৌকার এই হাল দেখে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান গ্রামের লোকেরা। শেষে সবাই মিলে কড়াই চালকদের বুঝিয়ে সলফা জুনিদপুর-সহ ও পাড়ে আটকে থাকা গ্রামের লোকেদের উদ্ধার করে আনার জন্য পাঠানো হয়। কড়াই চালক শেখ কিরমানি, শেখ কদম রসুল ও সুফল মাল নৌকার ওই হাল দেখে নৌকা নিয়ে পারাপারে নামেন। আটকে থাকা সকলকে তাঁদের নিজেদের গ্রামে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

সাঁইথিয়ার বিডিও অতুনু ঝুরি বলেন, ‘‘মাঝিকে রাতে নৌকা ছাড়তে বারবার বারণ করেছিলাম। কিন্তু আটকে থাকা লোকজনের কাতর অনুরোধে নৌকা চালাতে তিনি রাজি হন। কোনও দুর্ঘটনা না ঘটায় রক্ষা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE