Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভরদুপুরে বোমায় ফের কাঁপল বড়রা

বিজেপি-র দাবি, মজুত বোমা ফেটেই সোমবার তীব্র বিস্ফোরণ ঘটেছে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে। যদিও সেই দাবি নস্যাৎ করেছে তৃণমূল।

চুরমার: বোমায় ভেঙেছে বাড়ি। শনিবার কাঁকরতলার নিচুপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

চুরমার: বোমায় ভেঙেছে বাড়ি। শনিবার কাঁকরতলার নিচুপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁকরতলা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৯ ০১:৫৫
Share: Save:

দিনে দুপুরে কানফাটানো আওয়াজে কেঁপে উঠল কাঁকরতলা থানার বড়রা গ্রামের নিচুপাড়া। চমকে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এলেন গ্রামবাসীরা। বোঝা গেল, বোমা ফেটেই ওই আওয়াজ। জায়গাটি কাঁকরতলা হওয়ায় এবং বোমা ফাটার পূর্ব ইতিহাস থাকায় শনিবারের এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।

বিজেপি-র দাবি, মজুত বোমা ফেটেই সোমবার তীব্র বিস্ফোরণ ঘটেছে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে। যদিও সেই দাবি নস্যাৎ করেছে তৃণমূল। জেলা নেতৃত্বের তরফে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ওই বাড়িতে বোমা ফাটিয়েছে। কাঁকরতলার পাশেই যে ঝাড়খণ্ড রাজ্য, সেটাও বলা হয়েছে ওই রিপোর্টে। বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘ডেপুটি পুলিশ সুপার(সদর) কাশীনাথ মিস্ত্রির নেতৃত্বে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেলে তবেই কিছু বলা সম্ভব।’’

কী হয়েছিল এ দিন?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বড়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য শেখ মহিবুলের বাড়িতে বোমা মজুত রয়েছে, এই খবর পেয়েই এলাকায় গিয়েছিল পুলিশ। এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ মহিবুলের বাড়িতে যখন পৌঁছয় পুলিশ, তখন ঝেঁপে বৃষ্টি নেমেছে। পুলিশকর্মীরা কাছেই অন্য বাড়ির চালের নীচে দাঁড়িয়েছিলেন। ঠিক সেই সময়েই মহিবুলের বাড়িতে বোমা ফাটে। উড়ে যায় বাড়ির মাঝের অংশের অ্যাসবেস্টসের চালা এবং পাকা দেওয়াল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আসবাবপত্র এবং গৃহস্থালীর জিনিসপত্র। তবে, কেউ হতাহত হননি।

জেলা পুলিশের একটি সূত্র বলছে, এ দিন দুপুরে মহিবুলের প্রথম পক্ষের স্ত্রী কাঁকরতলা থানায় এসে মৌখিক অভিযোগ করেন, শুক্রবার রাতে তাঁর স্বামী তাঁকে মারধর করেছেন। তার পরে অন্য স্ত্রীর কাছে গ্রামের অন্য পাড়ায় চলে গিয়েছেন। কিন্তু বাড়িতে কিছু ‘সন্দেহজনক’ জিনিস

রেখেছেন। তার পরেই গ্রামে যায় পুলিশ। কী ভাবে বোমা ফাটল, তা জানতে ফোন করা হয়েছিল মহিবুলকে। ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। এলাকায় তাঁর দেখাও মেলেনি। পুলিশের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি। কেউ আটক বা গ্রেফতারও হয়নি। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করছে। পুলিশের দাবি, পঞ্চায়েত সদস্য হলেও মহিবুলের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।

খয়রাশোলের কাঁকরতলা এই অঞ্চলে বোমা ও বিস্ফোরণ আগেও ঘটেছে। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, এলাকা দখল ও কয়লা সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, এই নিয়ে শাসকদলেরই দু’টি গোষ্ঠীর লড়াই চলে এখানে। গত বছর অক্টোবরেই তৃণমূলের বড়রা অঞ্চল কার্যালয় বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছিল। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন শেখ আজফার (তৃণমূলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতা) ওরফে কালো। শেখ মহিবুল তাঁরই অনুগামী বলে পরিচিত। চলতি বছরের মে মাসে ইদের আগে কালো শেখ গ্রামে ফিরতেই তাঁর বাড়ি ঘিরে বোমাবাজি হয়। রাতভর বোমাগুলির লড়াইয়ের পরে অবশ্য কালো-সহ আট জনকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র-সহ পুলিশ গ্রেফতার করে। সেই তালিকায় ছিলেন শেখ মহিবুলও। দিন কয়েক আগেই জামিন পেয়ে গ্রামের বাড়িতে ফেরেন মহিবুল। তার পরেই আবার বোমার আওয়াজে কেঁপে উঠল গ্রাম।

তৃণমূলের খয়রাশোলের পর্যবেক্ষক তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর দাবি, ‘‘বড়রার পাশেই ঝাড়খণ্ড। বিজেপি সেখান থেকে লোক নিয়ে এসে এমন কাণ্ড করেছে।’’ বিজেপি-র জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘উনি বোধহয় ভুলে গিয়েছেন, গত বছর ওঁদের দলীয় কার্যালয় বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়ার পরে একই কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের মামলায় বিজেপি নয়, নাম ছিল তৃণমূলের লোকেদের। প্রকৃত তদন্ত হলে এ বারও জানা যাবে, মজুত বোমা ফেটেই বিস্ফোরণ ঘটেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Bombing TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE