Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

কাঁপছে সেতু, শিউরে উঠছে বাঁকুড়া

বছর বছর বন্যায় ফুঁসে ওঠা নদীর স্রোতের ধকল তো নিতে হচ্ছেই। তার উপর মাসখানেক ধরে পাশের কজওয়ে ভেঙে পড়ায় এখন দ্বিগুণ যানবাহনের ভার নিতে হচ্ছে গন্ধেশ্বরী সেতুকে।

জীর্ণ: গন্ধেশ্বরী নদীর উপরে এই সেতু দিয়ে চলে প্রচুর ভারী গাড়ি। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

জীর্ণ: গন্ধেশ্বরী নদীর উপরে এই সেতু দিয়ে চলে প্রচুর ভারী গাড়ি। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৪৭
Share: Save:

অনবরত কেঁপে চলেছে। বছর বছর বন্যায় ফুঁসে ওঠা নদীর স্রোতের ধকল তো নিতে হচ্ছেই। তার উপর মাসখানেক ধরে পাশের কজওয়ে ভেঙে পড়ায় এখন দ্বিগুণ যানবাহনের ভার নিতে হচ্ছে গন্ধেশ্বরী সেতুকে। কলকাতায় মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরে এখন বাঁকুড়া-রানিগঞ্জ ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের গন্ধেশ্বরী সেতুর স্বাস্থ্য কতটা ভাল, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে। অনেকেই দাবি করছেন, যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ার পরে এই সেতু কতটা পোক্ত তা যাচাই করা খুবই প্রয়োজনীয়। শীঘ্রই প্রশাসন তা খতিয়ে দেখুক। যদিও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই সেতুতে কোনও সমস্যা নেই।
এত দিন, দুর্গাপুর, রানিগঞ্জমুখী কিছু বাস ও যানবাহন বাঁকুড়া শহর থেকে বের হওয়ার সময় সতীঘাটের কজওয়ে দিয়ে যেত। শহরে ঢুকত গন্ধেশ্বরী সেতু দিয়ে। কিন্তু, বন্যায় কজওয়ে সংলগ্ন রাস্তা অনেকখানি ভেঙে যাচ্ছিল। বন্যায় ভাঙে কজওয়ে লাগোয়া নদী পাড়ের আশপাশের এলাকাও। এ বারও বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাই কজওয়েটি ভেঙে সেতুর তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সে কারণে সমস্ত গাড়ি এখন গন্ধেশ্বরী সেতু দিয়ে যাতায়াত করছে।
বাসিন্দাদের দাবি, এর ফলে ওই সেতুতে গাড়ির সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই ভারী গাড়িও চলছে। অনেক সময় পারাপার করতে গিয়ে পথচারীদের মনে হয়েছে, সেতু যেন কাঁপছে। বাঁকুড়ার কাটজুড়িডাঙার বাসিন্দা শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বন্যার সময় সেতুটা নড়ছিল। এতে সেতুর পিলারের ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে।’’
অরবিন্দনগরের বাসিন্দা জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ভারী যানবাহন চলাচল করলে সেতুটা এমন কাঁপে যে মনে হয়, পার হতে পারলে রক্ষা পাই। অবিলম্বে সেতুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখুক প্রশাসন।”
যাত্রীদের অভিযোগ, বৃষ্টি হলেই সেতুতে জল জমে যায়। কারণ নিকাশি ব্যবস্থার হাল খারাপ। লালবাজারের বাসিন্দা বিপ্লব বরাট বলেন, “অল্প বৃষ্টিতেই জল দাঁড়িয়ে যায় গন্ধেশ্বরী সেতুর উপর। জল নিকাশী কোনও ব্যবস্থা নেই। এর ফলেও তো সেতুর ক্ষতি হতে পারে।”
গন্ধেশ্বরী সেতু ছাড়াও বাঁকুড়া-রানিগঞ্জ ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে গঙ্গাজলঘাটির অমরকানন সেতুর হাল নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দীর্ঘ দিন ধরেই। প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকেও সেতুটিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেন। সেতুটি খুবই সঙ্কীর্ণ ও দুর্বল। গন্ধেশ্বরীর মতো শালি নদীতেও বর্ষায় জল বেড়ে বন্যা হতে দেখা যায়। সেই বন্যায় ওই সেতুর পরিকাঠামোর ব্যাপক্ষ ক্ষতি হয়েছে। গঙ্গাজলঘাটি ব্লক অফিসের এক আধিকারিক বলেন, “সেতুটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই। আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছি বিষয়টিকে নিয়ে।”
বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস জানান, অমরকানন সেতুটিকে নতুন করে তৈরি করার পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে। সেতুর জন্য জমি অধিগ্রহণ করার প্রক্রিয়াও চলছে। তাঁর আশ্বাস শীঘ্রই সেতুটি নতুন করে নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
তিনি বলেন, “পূর্ত দফতরকে আমি রুটিন মাফিক জেলার সেতুগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েই রেখেছি। দফতরের আধিকারিকেরা নিয়মিত পরিদর্শন করে দেখেন সেতুর অবস্থা।” বাঁকুড়ার গন্ধেশ্বরী সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়েও জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক। তিনি বলেন, “আমি নিজে গন্ধেশ্বরী সেতুর সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখব। সেতুটি কী ভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল, তা নিয়েও খোঁজ নিচ্ছি। কোনও সমস্যা ধরা পড়লে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের দুর্গাপুর ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রলয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রতি মাসেই সেতুগুলি এক বা দু’বার করে পরিদর্শন করি। গন্ধেশ্বরী ও অমরকাননের সেতু বন্যার পরেই
পরিদর্শন করেছি।’’
তিনি জানান, গন্ধেশ্বরী সেতুতে গাড়ির গতি কমানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন। ইতিমধ্যে তাঁরা সেতুর দুই প্রান্তে গাড়ির গতি কমাতে কিছু ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন। সেতুর জল নিকাশি ব্যবস্থা করতে বর্ষার পরেই কাজ করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আপাতত ওই সেতুতে পরিকাঠামোগত কোনও
সমস্যা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bridge Infrastructure Uralpool Gandheswari River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE