এই সেই স্পিড ব্রেকার। শুক্রবার সকালে নলহাটির বাউটিয়া এলাকায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
চারশো টাকা তোলা না দেওয়ায় বচসার শুরু। আর তারই জেরে সতেরো বছরের এক কিশোরকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল তোলাবাজদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার রাতে নলহাটি থানার বাউটিয়া গ্রামের কাছে, বাউটিয়া–বৈধরা রাস্তার ঘটনা। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম মোমিন ওরফে রকি শেখ (১৭)। বাড়ি নলহাটি পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত নতুন গ্রামে। ওই খুনের ঘটনায় শুক্রবার সকালে একাধিক যুবকের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তার ভিত্তিতে এ দিনই বাউটিয়া গ্রাম থেকে পুলিশ চিরন কোনাই এবং গৌতম লেট নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। তবে, এ নিয়ে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও এসডিপিও (রামপুরহাট) জোবি থমাস কে ‘ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন রেখে দিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই রাস্তা দিয়ে স্থানীয় বৈধড়া, সোনারকুণ্ড, জয়পুর, লক্ষ্মীজোল— ব্রাহ্মণী নদীর এই সমস্ত ঘাট থেকে বালি বোঝাই করে ২৪ ঘণ্টা ধরে প্রচুর ট্রাক-ট্রাক্টর যাতায়াত করে। বাউটিয়া গ্রামের কাছে রাস্তায় বেআইনি ভাবে স্পিড ব্রেকার বসিয়ে ওই সব গাড়ি থেকে তোলা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার রাতে ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে নিহত রকির বন্ধু আকবর ওরফে সম্রাট শেখের জয়পুর ঘাট থেকে আসা দু’টি বালি ভর্তি ট্রাককে কিছু যুবক আটকায়। সম্রাট এ দিন বলেন, ‘‘স্থানীয় কিছু যুবক দু’টি ট্রাক বাবদ দু’শো করে মোট চারশো টাকা তোলা চেয়েছিল। চালকেরা সেই টাকা দিতে না পারায় আমাকে ফোন করে। তিনটে মোটরবাইকে রকি-সহ ছয় বন্ধুকে নিয়ে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি তখনও চালকদের সঙ্গে ওদের বচসা চলছে।’’ দু’টি ট্রাক বাবদ তাঁরা ১০০ টাকা দিতে চাইলেও তোলাবাজেরা তাতে রাজি হয়নি। তার পরেই দু’পক্ষের মধ্যে জোর বচসা শুরু হয়।
ওই ট্রাক মালিকের দাবি, ‘‘কথা কাটাকাটির মাঝে হঠাৎ-ই ওদের মধ্যে থেকে কয়েক জন লাঠি-বাঁশ নিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে মারতে আসে। আমরা বাকিরা কোনও রকমে পালিয়ে গেলেও রকিকে ওরা ধরে ফেলে।’’ রকিকে একা পেয়ে তখনই বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। অনেক রাতে রকির খোঁজে আরও কিছু লোকজন নিয়ে তাঁর বন্ধুরা ফের ওই এলাকায় যান। তাঁরাই রাস্তার ধার থেকে ওই কিশোরের সাড়হীন রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করেন। সেখান থেকে নলহাটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
এ দিন সকালে এলাকায় পৌঁছে দেখা যায় বাউটিয়া–বৈধরা রাস্তার উপরে যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেই বাউটিয়া গ্রামের ষষ্ঠীতলা এলাকার গোটা পঞ্চাশেক দোকানের সব ক’টিই বন্ধ। বেআইনি স্পিড ব্রেকার তখনও অটুট রয়েছে। তবে, রাস্তা দিয়ে বালি ভর্তি ট্রাক-ট্রাক্টর চলাচল করছে। ওই সব গাড়ির সংখ্যাগরিষ্ঠ চালক এ দিনও অভিযোগ করেন, ওই ষষ্ঠীতলা এলাকা থেকে কিছু বাসিন্দা তোলা আদায় করেন। অভিযোগ জানালেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা নিয়ে সেখানকার বাসিন্দারও এখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে, গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের পিনাকীরঞ্জন ওঝা তোলাবাজির অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ঘটনার সময় আমি এলাকায় ছিলাম না। যতটুকু যা শুনেছি, ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে। প্রথমে রাস্তার উপর স্পিড ব্রেকার দেওয়াকে কেন্দ্র করে নতুন গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে বাউটিয়া ষষ্ঠীতলা এলাকার কয়েক জন ছেলের বচসা হয়। সেই থেকে ঘটনার সূত্রপাত বলে জেনেছি।’’ তাঁর দাবি, ওই ছেলেরা চিরন কোনাইকে মারধর করে। তাতেই এলাকায় জনরোষ তৈরি হয়। সেই ‘জনরোষ’ই তরতাজা ওই কিশোরের প্রাণ কেড়ে নিল কিনা, তা নিয়ে অবশ্য পিনাকীবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। উল্টো দিকে, চিরনকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ট্রাক মালিকও।
এ দিকে, শোকের ছায়া নেমেছে নিহত কিশোরের বাড়িতে। এ দিন নতুন গ্রামের বাড়িতে গেলে রকির মা নাজিমা বিবি বলেন, ‘‘ছেলেটা সকাল সাড়ে ৭টার সময় একটু ভাত খেয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। তার পর সারা দিন খোঁজ পাইনি। রাতে ওর মৃত্যুর খবর পেলাম। আমরা দিশেহারা হয়ে গিয়েছে।’’ দোষীদের ফাঁসি চেয়েছেন সন্তানহারা মা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy