Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাস অনেক কম, ঝুঁকির যাতায়াত ছোট গাড়িতেই

বিক্ষোভ থেমেছে। তবে আতঙ্ক কাটেনি। সেই আতঙ্কের জের পড়ছে জেলার পরিবহণেও।

ঝুঁকি: ছোট গাড়িতে এ ভাবেই যাতায়াতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র

ঝুঁকি: ছোট গাড়িতে এ ভাবেই যাতায়াতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র

তন্ময় দত্ত 
মুরারই শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:০২
Share: Save:

বিক্ষোভ থেমেছে। তবে আতঙ্ক কাটেনি। সেই আতঙ্কের জের পড়ছে জেলার পরিবহণেও।

সংশোধিত নাগরিক আইন ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভের জেরে যে অশান্তি হয় তার প্রভাব এখনও খানিকটা রয়েছে মুর্শিদাবাদে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও আতঙ্কে শনিবার থেকে লাগোয়া বীরভূমের মুরারইয়ের বাস মালিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। সাধারণত দিনে ১৫ জোড়া বাস চললেও এখন দুই থেকে তিনটি বাস চলছে। বাস বন্ধের ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। বাধ্য হয়ে ট্রেকার ও অটো বা ভাড়া করা ছোট গাড়িতে করে ঘুরপথে বেশি টাকা দিয়ে যাতায়াত করছেন।

মুরারই থেকে রঘুনাথগঞ্জের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। পথ অবরোধের ফলে জাজিগ্রামে হয়ে ৪০ কিলোমিটার ঘুরপথে রঘুনাথগঞ্জ যেতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে যাত্রীরা ট্রেকার ও অটোর ছাদে চেপে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন। মুরারই এলাকার বহু মানুষ ডাক্তার ও ব্যবসার কাজে বহরমপুর যায়। সেই বহরমপুর যাওয়ার জন্য এলাকার মানুষের ভরসা ভাড়ার ছোট গাড়ি।

বৃহস্পতিবারের ছবিও ছিল একই রকম। যাত্রী বেশি থাকলেও বাসের সংখ্যা ছিল কম। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। মুরারই ২ ব্লকে পাইকর, হিয়াতনগর, কাশিমনগর ও মুর্শিদাবাদ সীমান্তে মিত্রপুর গ্রামের মানুষজন ব্যবসা ও চিকিৎসা করাতে রঘুনাথগঞ্জ ও বহরমপুর যান। বাস,ট্রেকার ও অটো অন্য সময়ের তুলনায় অনেক কম। তাই বাধ্য হয়ে অনেক যাত্রীকে অটো ও ট্রেকারের ছাদে চেপে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। কাশিমনগরের বাসিন্দা মফিজুল শেখ বলেন, ‘‘আমাদের গ্রাম থেকে রামপুরহাটের দূরত্ব অনেক। কাছে রঘুনাথগঞ্জ হাসপাতাল। তাই এই এলাকার অনেকে চিকিৎসার জন্য রঘুনাথগঞ্জ ও বহরমপুরে যান। বাস না থাকায় অনেক রুগীকে গাড়ি ভাড়া করে যেতে হচ্ছে। যে সব রুগীর গাড়ি ভাড়া করার ক্ষমতা নেই তাদের ট্রেকারে ও অটোতে যেতে হচ্ছে।’’

তাছাড়াও এলাকার অনেক ছাত্রছাত্রী মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন কলেজে পড়েন। তাঁদেরও সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এলাকার এক বাসিন্দা সুখেন টুডু বলেন, ‘‘আমি মুর্শিদাবাদে একটি ইটভাটায় কাজ করি। পরিবার নিয়ে কাজের জায়গা যাচ্ছিলাম পকেটে মাত্র দুশো টাকা আছে ঘুরপথে যাওয়ার জন্য টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। কেমন করে কাজের জায়গায় পৌঁছব।’’

উত্তরবঙ্গগামী ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় অনেককে গাড়ি ভাড়া করেও নিজেদের বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে। মুরারইয়ের মনিরা বেগম বলেন, ‘‘আমি সাত দিন হল বাবার বাড়িতে এসেছি। সাগরদিঘিতে আমার শ্বশুরবাড়ি। বাস না চলায় যেতে পারছি না। মেয়ে স্কুল যেতে পারছে না। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে জানি না। তবে যে কোনও উপায়ে যেতে হবে।’’এক গাড়িমালিক সুমন দত্ত বলেন, ‘‘আমি তিন দিন ঠিকমতো ঘুমোতে পারিনি। আমার চারটি গাড়ি আছে। বাস ও ট্রেন বন্ধের ফলে বহরমপুর, মালদহ ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায় যাত্রীদের পৌঁছে দিতে হয়েছে।’’ তিনি জানান, গণ্ডগোলের ভয়ে ঝাড়খণ্ডের পাকুড় হয়ে ঘুরপথে এক যাত্রীকে মালদহের মানিকচকে রেখে আসতে হয়েছে। সে জন্য ভাড়াও বেশি নিচ্ছেন গাড়ির মালিকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murarai Bus Service NRC CAA Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE