Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঐতিহ্য চিনতে সাইকেলে সফর

দেখা: বিষ্ণুপুরের জয়পুরের গোকুলনগরে গোকুলচাঁদ মন্দিরে পড়ুয়ারা। রবিবার। ছবি: শুভ্র মিত্র

দেখা: বিষ্ণুপুরের জয়পুরের গোকুলনগরে গোকুলচাঁদ মন্দিরে পড়ুয়ারা। রবিবার। ছবি: শুভ্র মিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জয়পুর শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭ ১৫:০০
Share: Save:

রাজপথে রথ নামার আগেই রবিবার সকালে পথে নেমে পড়েছিল অনেক সাইকেল। সামনের সারিতে খোদ মন্ত্রী। পিছনে পড়ুয়ারা। এলাকায় ঘুরে ঘুরে পড়ুয়াদের চেনানো হল স্থানীয় ঐতিহ্য।

বাঁকুড়ার জয়পুর ব্লক অফিস, পঞ্চায়েত সমিতি ও একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে এই আয়োজন হয়েছিল। ‘স্থানীয় ঐতিহ্য চেনো ও বাঁচাও’— এই ব্যানার নিয়ে আশি জন পড়ুয়া পথে নেমেছিল। যাত্রা শুরু হয় ব্লক অফিসের সামনে থেকে। সামনে সাইকেলে সওয়ার হয়ে ছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা। পিছনে বিডিও (জয়পুর) ধ্রুবপদ শাণ্ডিল্য, জয়পুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চণ্ডীচরণ কর্মকার, হেতিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রশান্তকুমার ঘোষ, জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নবকুমার রুইদাস প্রমুখ।

প্রথমেই সবাই মিলে যান জয়পুর সিনেমাতলায় একটি প্রাচীন জোড় মন্দিরে। কিছুদিন আগেই স্থানীয় মানুষজন উদ্যোগী হয়ে সেটি সংস্কার করেছেন। এর পরে একে একে জয়পুরের দত্তপাড়ার ন’টি চূড়া বিশিষ্ট রাধা-দামোদর মন্দির, দেপাড়ার শ্রীধর লালজিউ মন্দির। হ্যান্ড মাইক নিয়ে কখনও মন্ত্রী কখনও বিডিও পড়ুয়াদের মন্দিরগুলি সমন্ধে বিস্তারিত তথ্য দিচ্ছিলেন।

হটাৎ এই উদ্যোগ কেন?

বিডিও ধ্রুবপদবাবু বলেন, ‘‘জয়পুরকে আমরা পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরতে চাই। এর এক দিকে বিশাল শাল জঙ্গল। অন্য দিকে সদ্য সংস্কার হওয়া সমুদ্রবাঁধ। তার সঙ্গে প্রচুর পুরনো টেরাকোটা মন্দির। এগুলি এলাকার পড়ুয়াদের ভাল করে চেনানো দরকার। তারাই ভবিষ্যতের নাগরিক। সচেতন হলে এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে উদ্যোগী হবে।’’ সরকারি আধিকারিকদের মতে, এলাকার অনেক পুরনো মন্দিরের কারুকার্য একটু একটু করে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারি সাহায্য এনে সেগুলি সংস্কারের চেষ্টা চলছে। তবে এক দফায় সমস্ত মন্দির সংস্কার করা সম্ভব নয়। তাই এগুলি রক্ষা করার জন্য স্থানীয় মানুষজনের সচেতনতা জরুরি। ছাত্রছাত্রীরা সচেতন হলে তারাই স্থাপত্যগুলি রক্ষা করার কাজে এগিয়ে আসবে বলে তাঁরা মনে করছেন। আর এর ফলে পর্যটনের দিশাও খুলে যেতে পারে।

সাইকেল যাত্রার সাময়িক বিরতি হয়েছিল জয়পুর থানার গোকুলনগর গ্রামে। বাঁকুড়া জেলার সব থেকে বড় মাকড়া পাথরের মন্দির গোকুলচাঁদ মন্দির প্রাঙ্গণে কিছু ক্ষণের বিশ্রাম। সেখানে জয়পুর হাইস্কুলের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির কার্তিক মণ্ডল, সাগর দুলে, মেঘা পাল, সোনিয়া দত্তদের সঙ্গে পরিক্রমায় যোগ দেয় সলদা বোড প্রাথমিক স্কুলের প্রথম শ্রেণির পিয়ালী লাহা, তৃতীয় শ্রেণির বৃষ্টি অধিকারি, প্রিয়াঙ্কা কাঁদাররা।

পড়ুয়াদের গল্প বলে মন্দিরের ইতিহাস বোঝান মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা। তিনি বলেন, ‘‘দিনটা একটু অন্য রকম করে কাটানোর চেষ্টা করলাম। অনেক দিন পরে স্কুল জীবনের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল। এটা পড়ুয়াদের নিজেদের শিকড় চেনানোর এটা চেষ্টা।’’

ভবিষ্যতে অন্য গ্রামে গিয়ে সেখানকার পড়ুয়াদের নিয়ে এই ধরণের সফরের আয়োজন করার ইচ্ছার কথা জনিয়েছেন আয়োজক বেসরকারি সংস্থার কলকাতা চ্যাপ্টারের সদস্য কমল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘জয়পুর একটা হেরিটেজ সাইট হতে পারে। বহু প্রাচীন মন্দির রয়েছে। সামান্য সংস্কার করলেই পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে সেগুলি।’’

যাত্রা শেষে পড়ুয়ারা বলে, ‘‘অনেক কিছু জানলাম। শিখলাম। মন্দিরের পাথর আর পুকুরের ঘাট বানানোর জন্য ব্যবহৃত হতে দেব না আমরা। এ বার থেকে এগুলি রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE