ভাঙন: গন্ধেশ্বরীর জলের তোড়ে উড়ে গিয়েছে কজওয়ে। সংলগ্ন রাস্তাও ভেঙে গিয়েছে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
বর্ষায় গন্ধেশ্বরী নদীতে বান এলেই সতীঘাটের কজওয়ের দু’পাশের রাস্তা ভেঙে পড়বে। আর সেই ভাঙা রাস্তা সারাই করতে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করবে পূর্ত (সিভিল) দফতর। এটাই যেন দস্তুর হয়ে উঠেছে। গন্ধেশ্বরীর ভাঙা কজওয়ের রাস্তা দেখতে এসে বাঁকুড়া শহরের লোকজন এখন এমনই মন্তব্য করছেন। তাঁদের অভিযোগ, কজওয়ের গঠনগত ত্রুটিতেই গন্ধেশ্বরীর জলের তীব্র স্রোতের ধাক্কায় দু’পাশের রাস্তা ভাঙছে। আর এ নিয়েই চাপানউতোর শুরু হয়েছে পূর্ত (সিভিল) ও সেচ দফতরের মধ্যে।
বছর বছর এই কজওয়ের রাস্তা ভেঙে পড়ায় ভোগান্তির শিকার হওয়া সাধারণ মানুষ তিতি বিরক্ত। তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, প্রতি বছর বর্ষায় এই ভোগান্তির হাত থেকে কি মুক্তি মিলবে না? এই কজওয়ে বন্ধ হয়ে পড়া মানেই, কেশিয়াকোল থেকে সতীঘাট কয়েক মিনিটের হাঁটা পথ বদলে যায় দু’কিলোমিটারের ঘুর পথে। পূর্ত দফতর অবশ্য আশ্বাস দিয়েছে, ইতিমধ্যেই চলতি বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত এই কজওয়ে সারানোর জন্য প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে মেরামতির কাজ শুরু করে দিয়েছে।
আগে কজওয়েটি বেশ নিচু ছিল। বান এলে সেই কজওয়ে ছাপিয়ে তীব্র বেগে নদীর জল বয়ে যেত। তাতে কজওয়ের পিলার একের পর এক ভেঙে পড়লেও রাস্তা ভেঙে পড়ত না। কিন্তু সেই সেই সময় কজওয়ে পারাপার করতে গিয়ে অনেকেই ভেসে যান। তাই বাসিন্দাদের দাবি মেনে কয়েক বছর আগে উঁচু কজওয়ে তৈরি করে পূর্ত দফতর। সেই কাজে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন প্রাক্তন কাউন্সিলর ও সমাজকর্মী দেবী পালিত।
কিন্তু নতুন কজওয়ের রাস্তায় পরপর দু’বছর বন্যায় ভেঙে পড়ায় বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছেন, এই কজওয়ের নির্মাণের পরিকল্পনায় ত্রুটি রয়েছে। তাই বানের জলের তোড় সামলাতে পারছে না কজওয়ের সংযোগকারী রাস্তা।
বাঁকুড়ার লালবাজারের বাসিন্দা সমীর চট্টোপাধ্যায় ওই কজওয়ে পেরিয়ে রোজ কেশিয়াকোলের একটি আবাসনে নিরাপত্তা কর্মীর কাজ করতে যান। তাঁর কথায়, “এই কজওয়ের তলা দিয়ে বানের জল বেরোতে বাধা পাচ্ছে বলেই এমন ভয়ঙ্কর পরিণতি হচ্ছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের। কত ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে।’’ বাঁকুড়ার প্রতাপবাগান এলাকার বাসিন্দা জয়দীপ মুখোপাধ্যায়েরও দাবি, “কজওয়ের নীচে পর্যাপ্ত পাইপ নেই। তার উপরে বানে ভেসে আসা আগাছায় ওই পাইপগুলি বুজে যাচ্ছে। তাই বাধা পেয়ে বানের জল কজওয়ের সংযোগকারী রাস্তা ধাক্কা দিয়ে ভেঙে ফেলছে।’’ বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি, কজওয়ের সংযোগকারী রাস্তার নীচে মোটা পিলার দেওয়া হোক। তাতে জল পেরিয়ে যেতে পারবে।
কয়েক কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তোলা ওই কজওয়ের গঠনগত সমস্যা যে রয়েছে, তা মানছেন প্রশাসনিক মহলের একটা বড় অংশও। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর কথায়, “প্রতি বছর বান এলেই ওই কজওয়েতে সমস্যা হচ্ছে। এ থেকেই স্পষ্ট কজওয়েতে গলদ রয়েছে।’’ বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীরও অভিমত, গন্ধেশ্বরীর বন্যার ক্ষতি আটকাতে ওই কজওয়ের জল পার করার বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, কজওয়ে তৈরির সময় কেন জল নিকাশী ব্যবস্থার দিকটি খতিয়ে দেখা হল না তা নিয়েই।
পূর্ত (সিভিল) বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হেমন্ত বিটের দাবি, “কজওয়ে তৈরির সময় আমরা সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সেচ দফতর যেমন ভাবে কজওয়ের জল নিকাশী ব্যবস্থা তৈরি করতে বলেছিল, তেমন ভাবেই কাজ করা হয়েছে।”
যদিও জেলা সেচ দফতরের অভিযোগ, ওই কজওয়েটি করার সময় পূর্ত দফতর সেচ দফতরের কোনও অনুমতি নেয়নি। বাঁকুড়ার সেচ দফতরের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অশ্বিনীকুমার মণ্ডল বলেন, “গন্ধেশ্বরীতে কজওয়ে করার জন্য পূর্ত দফতর সেচ দফতরের অনুমতি নিয়েছে, এমন কোনও নথি আমাদের কাছে নেই।”
তবে কজওয়ের সমস্যা মেটাতে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে বলেই আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক মৌমিতাদেবী। তিনি বলেন, “শীঘ্রই গন্ধেশ্বরী কজওয়ের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের রাস্তা বের করতে আমরা বৈঠকে বসব।”
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy