Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বালি চুরি রুখবে ক্যামেরা

জেলার মধ্যে বিষ্ণুপুর মহকুমা এলাকার বালিঘাটগুলি থেকে প্রচুর পরিমাণে বালি তোলা হয়। সেই সঙ্গে বেনিয়মের অভিযোগও বেশি ওঠে ওই এলাকা থেকেই।

নাকের-ডগায়: বিষ্ণুপুর ব্লকের ধরাপাট গ্রামের অদূরে দারকেশ্বরে যন্ত্র নামিয়ে দিনে দুপুরেই চলছে বালি তোলা। ছবি: শুভ্র মিত্র

নাকের-ডগায়: বিষ্ণুপুর ব্লকের ধরাপাট গ্রামের অদূরে দারকেশ্বরে যন্ত্র নামিয়ে দিনে দুপুরেই চলছে বালি তোলা। ছবি: শুভ্র মিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৮ ১২:০৩
Share: Save:

বর্ষার জন্য কয়েক মাস ছিল নিষেধাজ্ঞা। সম্প্রতি ফের বাঁকুড়া জেলার নদ-নদী থেকে বালি তোলা শুরু হয়েছে। অভিযোগ, সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠতেই আবার নিয়ম ভেঙে মেশিন নামিয়ে বালি তোলা শুরু হয়েছে। তবে অনিয়ম ধরতে এ বার বালির ঘাটে সিসিক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু, ফাঁকা জায়গায় বসানো সেই ক্যামেরার নজরদারি কে করবে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।

জেলার মধ্যে বিষ্ণুপুর মহকুমা এলাকার বালিঘাটগুলি থেকে প্রচুর পরিমাণে বালি তোলা হয়। সেই সঙ্গে বেনিয়মের অভিযোগও বেশি ওঠে ওই এলাকা থেকেই। বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া উত্তর দিকে বয়ে যাওয়া দ্বারকেশ্বর নদ থেকে বিভিন্ন জায়গায় তোলা হয় বালি। বিষ্ণুপুর মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা যায়, বিষ্ণুপুর ব্লকের চারটি পয়েন্ট হিংজুড়ি, কাটনা, ঠাকুরপুকুর আর পাইকপাড়া মৌজায় ইজারাদাররা রাজস্বের বিনিময়ে নির্দিষ্ট অঞ্চল জুড়ে দ্বারকেশ্বর নদ থেকে বালি তোলার অনুমতি পায়।

কিন্তু, বাসিন্দাদের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ম ভাঙা হয়। যেমন, অযোধ্যা পঞ্চায়েত এলাকায় পাইকপাড়া মৌজায় ২৮০ দাগ নম্বরে প্রায় পাঁচ একর জায়গা জুড়ে এক ইজারাদার বালি তোলার অনুমতি পেয়েছেন। কিন্তু, মহালয়ার দিন ধরাপাট গ্রামে বাসিন্দারা দেখেন, নদে দু’টি মেশিন নামিয়ে অবাধে বালি তুলে ট্রাক ও ট্রাক্টরে বোঝাই করতে দেখা গিয়েছে।

ভাঙন কবলিত ধরাপাট গ্রামের বাসিন্দারদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘নদী এখানে বাঁক নিয়েছে। কিন্তু, মেশিন দিয়ে অপরিকল্পিত ভাবে বালি তোলায় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। তার জেরে প্রতি বছর বর্ষায় ফুঁসে ওঠা দ্বারকেশ্বরের বন্যায় বিঘার পর বিঘা তিন ফসলি জমি নদীর গর্ভে চলে যাচ্ছে। নিজেদের জমি হারিয়ে অনেক চাষি এখন দিনমজুরে পরিণত হয়েছেন। কিন্তু, প্রশাসনের নিষেধ সত্ত্বেও মেশিনে বালি কাটা বন্ধ হয়নি। দিনমজুররা যে বালিঘাটে কাজ পাবেন, সেই উপায়ও নেই ওই মেশিনের জন্য।’’

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইজারাদার বা তাঁর কর্মীদের এ নিয়ে কিছু বলতে গেলেই গালিগালাজ শুনতে হয়। মারও খেতে হয়েছে। ক্ষোভের কথা শোনা যায়, বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির সদ্য নির্বাচিত সহ-সভাপতি অযোধ্যা অঞ্চলের বাসিন্দা দেবনাথ বাউরির গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘নদীর গর্ভে জমি, ভিটে হারিয়ে অনেকে পিছিয়ে গিয়ে ঘর তুলছেন। তাতেও স্বস্তি কত দিনের? এ ভাবে কতটা পিছিয়ে যেতে হবে?’’ তাঁর অভিযোগ, বালি বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণও হারাচ্ছেন কেউ কেউ। অতিরিক্ত বালি নিয়ে যাওয়া নিয়ে বহু বার অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু, অতিরিক্ত বালি নিয়ে যাওয়া কী বন্ধ হয়েছে? তিনি বলেন, ‘‘আামাদের নজরেও এসেছে আবার মেশিন নামিয়ে বালি তোলা হচ্ছে। পুজো মিটলেই পদক্ষেপ করা হবে। যন্ত্রের বদলে স্থানীয় মানুষদের বালিখাদানে কাজের দাবিতে আন্দোলনও হবে।’’

বিষ্ণুপুর মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক ফাল্গুনী শতপথী জানান, ইজারাদারদের কঠোর ভাবে নিষেধ করা আছে নদীতে যেন মেশিনে বালি না তোলা হয়। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের মধ্যে বালি তুলতে হবে। এর বাইরে কোনও সময় বালি তোলা যাবে না। কিন্তু, তা যে মানা হচ্ছে না। তিনি অবশ্য দাবি করেন, ‘‘মেশিন দিয়ে বালি তোলার অভিযোগ নেই। কেউ খবরও দেয়নি। কানে এলেই ব্যবস্থা নেব।’’ তাঁর আশ্বাস, বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস-এর নির্দেশে মহকুমা জুড়ে সমস্ত বালি খাদে এক থেকে একাধিক সিসিক্যামেরা বসতে চলেছে। ট্রাকে অতিরিক্ত বালি তোলা হচ্ছে কি না, ইজারাভুক্ত এলাকা নাকি তার বাইরে থেকে বালি তোলা হচ্ছে, সব কিছুই সিসিক্যামেরায় নজরদারি চলবে। মহকুমার দু’টি জায়গায় বসছে চেকপোস্ট। কিন্তু, নদী তীরের বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ‘‘ধু ধু বালিঘাটে দুষ্কৃতীরা সিসিক্যামেরা আস্ত রাখবে তো? শেষে না সিসিক্যামেরার পাহারায় পুলিশ না ডাকতে হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sand Sand mafia CCTV
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE