Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পিকনিকে মাতল মণিপুরের হোমের আবাসিকেরা

কারও বাবা-মা নেই। কেউ বা আবার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। অনেকে আবার কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত পরিবারের। এমনই শিশু, কিশোর, কিশোরীদের আশ্রয় হয়েছে আদ্রার মণিপুর হোমে। রবিবার হোমের সেই ছেলেমেয়েরাই দল বেঁধে পিকনিকে মাতল। 

নিজের হাতে: পাঞ্চেতে পার্কে পিকনিকে পরিবেশন করছেন বিধায়ক। নিজস্ব চিত্র

নিজের হাতে: পাঞ্চেতে পার্কে পিকনিকে পরিবেশন করছেন বিধায়ক। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নিতুড়িয়া শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:১৮
Share: Save:

কারও বাবা-মা নেই। কেউ বা আবার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। অনেকে আবার কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত পরিবারের। এমনই শিশু, কিশোর, কিশোরীদের আশ্রয় হয়েছে আদ্রার মণিপুর হোমে। রবিবার হোমের সেই ছেলেমেয়েরাই দল বেঁধে পিকনিকে মাতল।

পুরুলিয়ার সীমানা লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের চিরকুণ্ডা থানা এলাকায় পাঞ্চেত জলাধারের নেহেরু পার্কে পিকনিক করল আদ্রার মণিপুর গ্রামের কুষ্ঠ পুর্নবাসন কেন্দ্রের হোমের ছেলেমেয়েরা। আয়োজন করেছিলেন রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি ও আড়রা পঞ্চায়েতের প্রধান মধুসূদন দাস।

গত কয়েক বছর ধরেই মণিপুর গ্রামের কুষ্ঠ পুর্নবাসন কেন্দ্র পরিচালিত কটেজ হোম ও সিএনসিপি হোমের আবাসিকদের নিয়ে পিকনিকের ব্যবস্থা করছেন পূর্ণবাবু। প্রথমে স্থির হয়েছিল, এ বার পিকনিক হবে গড়পঞ্চকোট পাহাড়ে। পরে স্থান বদলে হয়েছে পাঞ্চেত জলাধারের পাশের ওই পার্কে।

সাত সকালেই হোমগুলির ২০০ আবাসিকদের নিয়ে পাঞ্চেতে পৌঁছে গিয়েছিলেন কুষ্ঠ পুর্নবাসন কেন্দ্রের সম্পাদক নবকুমার দাস।

মণিপুর থেকে পাঞ্চেত পর্যন্ত চারটে বাসে করে হোমের আবাসিকদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান। সকাল ১০টা নাগাদ নেহেরু পার্কে পৌঁছে পিকনিকের শুরু হয় কেক, কচুরি, তরকারি মিষ্টির প্রাতরাশ দিয়ে। দুপুরের মেনুতে ছিল ভাত, ডাল, বাঁধাকপির তরকারি, মুরগির মাংস, চাটনি ও মিষ্টি।

একটা গোটা দিন হোমের বদ্ধ পরিবেশ ও বাঁধাধরা জীবন থেকে একটু অন্য ভাবে খোলা আকাশের নীচে কাটাতে পেরে খুশী আবাসিকেরা। পার্কে পৌঁছেই শুরু হয়েছিল হুল্লোড় আর খেলা। দল বেঁধে কিশোরীরা মেতেছিল নাচে-গানে।

বেলার দিকে পার্কে পৌঁছে বিধায়কও ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলতে নেমে পড়েন। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে রান্নার তদারকি করেন পঞ্চায়েত প্রধান। বিধায়ক পরিবেশনে নেমে পড়েন।

বিধায়কের কথায়, ‘‘রাজনৈতিক কর্মব্যস্ততাকে সরিয়ে রেখে বছরে অন্তত একটা দিন এই পরিবার পরিজন হারানো ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করি। একটা দিনের জন্য হলেও ওরা জীবনের কষ্টকর দিনগুলিকে সরিয়ে আনন্দে
মাততে পারে।’’

খোলা আকাশের নীচে জলাধারের পাশে নেহেরু পার্কে গোটা একটা দিন কাটিয়ে দৃশ্যতই খুশী হোমের আবসিক পার্বতী মান্ডি, সবিতা মাহাতো, সুচিত্র মাহাতো, সন্দীপ মাল, উদয় মুখোপাধ্যায়েরা। তাদের কথায়, ‘‘এমএলএ কাকুর পিকনিকের ব্যবস্থা করেন বলেই একটা দিন আমরা সবাই মিলে খুব আনন্দ করতে পারি।”

পিকনিকের জন্য হোমের আবাসিকেরা বছরভর অপেক্ষায় থাকে বলে জানাচ্ছেন কুষ্ঠ পুর্নবাসন কেন্দ্রের সম্পাদক।

তিনি বলেন, ‘‘ডিসেম্বরের শেষ থেকেই ছেলেমেয়েগুলো পিকনিক কবে হবে, আদৌও এ বছর হবে কি না, হাজারো প্রশ্নে জেরবার করে দিচ্ছিল। ওরা এই দিনটার জন্য মুখিয়ে থাকে। পিকনিকে এসে বাঁধাধরা জীবন থেকে একটা দিন প্রাণভরে ছুটি উপভোগ করে ওরা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Picnic Manipuri Home Children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE