Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

পাইকরের পুকুরে কলেরার জীবাণু

গত ৩১ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে পাইকরের রাজবংশীপাড়া ও হালদারপাড়ায় প্রথম ডায়রিয়া ছড়ায়। পরবর্তীতে গ্রামের অন্য পাড়াগুলিতেও তা ছড়িয়ে পড়ে।

প্রামাণ্য: নাইসেডের সেই রিপোর্ট। নিজস্ব চিত্র

প্রামাণ্য: নাইসেডের সেই রিপোর্ট। নিজস্ব চিত্র

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
পাইকর (মুরারই) শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৮ ১২:০৩
Share: Save:

পাইকর গ্রামে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেওয়ার অন্যতম উৎস যে গ্রামেরই পুকুরের জল, সে প্রমাণ মিলল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস (নাইসেড)-এর রিপোর্টে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, গ্রামের মালাপাড়ার পুকুরের জলের নমুনা পরীক্ষায় ই-কলি অর্থাৎ কলেরা রোগের জীবাণু মিলেছে।

গত ৩ অক্টোবর ওই পুকুরের জল পরীক্ষার জন্য কলকাতার নাইসেডে পাঠানো হয়। সম্প্রতি আসা নাইসেডের রিপোর্টে ই-কলি জীবাণু ও কলিফর্ম পাওয়া গিয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে সরবরাহ করা জলেও কলিফর্ম পাওয়া গিয়েছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত রাজবংশীপাড়ার একটি বাড়ির কলের জলের নমুণাতেও জীবাণুর সন্ধান মিলেছে। সেই জল খেয়েই যে এলাকায় ডায়রিয়া ছড়িয়েছে, তা এখন স্পষ্ট স্বাস্থ্য দফতরের কাছে।

গত ৩১ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে পাইকরের রাজবংশীপাড়া ও হালদারপাড়ায় প্রথম ডায়রিয়া ছড়ায়। পরবর্তীতে গ্রামের অন্য পাড়াগুলিতেও তা ছড়িয়ে পড়ে। মুরারই ২ ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালের পাশাপাশি রামপুরহাট জেলা হাসপাতাল এবং জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালেও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলে। পেটের রোগ নিয়ে ভর্তি তৃষা ভাস্কর (৭) নামে এক শিশুর মৃত্যুতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। এর পরেই নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রশাসন। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ৩১ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত পাইকরে ডায়রিয়ার প্রকোপ চলেছে। আক্রান্ত এলাকায় ডায়েরিয়া রোগীর সংখ্যা ১৩৮ জন।

রামপুরহাটের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পরমার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেতেই স্বাস্থ্য দফতর থেকে ৩ নভেম্বর জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে সরবরাহ করা পাইপলাইনের এবং রিজার্ভারের জল ছাড়াও হালদারপাড়ার ট্যাপের জল, পুকুরের জল, বাড়ির নলকূপের জল পরীক্ষা করার জন্য কলকাতার নাইসেডে পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে পুকুরের জলে কলেরার জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জলেও কলিফর্ম মিলেছে। মুরারই ২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক কার্তিক পাত্র বলেন, ‘‘পাইকর গ্রামে ডায়েরিয়া হয়েছে বলেই যে পুকুরের জল ব্যবহার করতে মানা করা হচ্ছে, তা নয়। সারা বছরই ব্লকের স্বাস্থ্যকর্মী থেকে আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা পুকুরের দূষিত জল ব্যবহার না করার জন্য গ্রামবাসীদের সতর্ক করে আসছেন। তা সত্ত্বেও সচেতনতার অভাবে পুকুরের জলে বাসন ধোয়া থেকে হাত-মুখ ধোওয়া বন্ধ করা যায়নি। এ ব্যাপারে গ্রামবাসীকে আরও সচেতন হতে হবে।’’

পাইকরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপলাইনের জল নিয়েও এলাকাবাসীর মনে ক্ষোভ রয়েছে। তাঁদের দাবি, দফতরের নজরদারির অভাবেই পাইপলাইনের পানীয় জলে জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। এর মূল কারণ, এক বছর যাবত রিজার্ভারের সিঁড়ি খারাপ থাকার জন্য তা পরিষ্কারই করা হয়নি! বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘এলাকায় ডায়রিয়া প্রকোপ দেখা দেওয়ার পরে সবার চোখ খুলেছে। এখন রিজার্ভারে ওঠার সিঁড়ি মেরামত করা হয়েছে। পাইপলাইন সারানো হচ্ছে। নতুন করে স্ট্যান্ড পয়েন্টের বাঁধানো প্ল্যাটফর্ম করতে হচ্ছে।’’ এলাকাবাসীর কটাক্ষ, পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পে ২৫ বছর অন্তর যেখানে পাইপলাইন পরিবর্তন করা দরকার, সেখানে তিন দশকের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও পাইকরে তা করা হয়নি। ডায়রিয়ার প্রকোপ হওয়ায় এখন তা হচ্ছে।

নাইসেডের রিপোর্ট প্রসঙ্গে বিডিও (মুরারই ২) অমিতাভ বিশ্বাস জানান, যে পুকুরের জলে কলেরার জীবাণু পাওয়া গিয়েছে, তার জল বাড়ির কাজে ব্যবহার না করার কথা জানিয়ে এলাকায় প্রতিদিন মাইকিং করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাকে সচেতন করতে পুকুরের জল ব্যবহার না করার জন্য বোর্ড লাগানো হবে। এ ছাড়াও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে পাইপলাইনের যে যে অংশে মেরামতি করা দরকার, তা দ্রুত করতে বলা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বাস্তুকার সরোজ চৌধূরী বলেন, ‘‘পাইকর জলপ্রকল্প অনেক পুরনো। প্রকল্পের পাইপলাইনগুলি নতুন করে সারানোর প্রয়োজন আছে। ডায়রিয়া কবলিত এলাকায় নতুন পাইপলাইন বসানো হয়েছে। রিজার্ভারও পরিষ্কার করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bacteria Cholera Pond
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE