অশোভন: রাসমঞ্চের সামনে বেড়ায় শুকোচ্ছে কাপড়। পর্যটকেরা এসে দেখেন এমনটাই। নিজস্ব চিত্র
শহরে পা দিলেই বিজ্ঞাপন যেন তাড়া করে। বাসস্ট্যান্ড হোক কিংবা রেলওয়ে স্টেশন— সেখান থেকে টেরাকোটার মন্দির যেখানেই যাওয়া যায়, চারপাশে শুধু বিজ্ঞাপন। এমনই খেদ থেকে পর্যটকেরা এ বার বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যশালী মন্দিরের চারপাশ থেকে বিজ্ঞাপন সরানোর দাবি তুললেন।
সপ্তাহ শেষে রবিবারের ছুটির আনন্দ নিতে সপরিবারে উলুবেড়িয়া থেকে এসেছিলেন উৎপল সেন। ক্যামেরা বার করে গড়দরজার ছবি তোলার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু, বিদ্যুতের খুঁটিতে শাড়ির বিজ্ঞাপনের বোর্ডের জন্য মনের মতো ছবি তুলতে পারছিলেন না। আবার রাস মঞ্চের বেড়ার গায়ে জামা-কাপড় শুকোতে দেখে অনেকেই আঁতকে ওঠেন। তাঁদের বলতে শোনা যায়, রাসমঞ্চের অপরূপ স্থাপত্য নিয়ে কত কথা শোনা যায়। সেখানেই এমন দৃষ্টিকটু অবস্থা! তোবড়ানো বিলবোড আর ফেস্টুনে ঘিরে রেখেছে জোড়বাংলা, রাসমঞ্চ, দলমাদল রোডের বিভিন্ন মন্দির যাওয়ার রাস্তা।
প্রশাসন অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছে, পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। দৃশ্য-দূষণের হাত থেকে বিষ্ণুপুরকে রক্ষা করাই শুধু নয়, শহরকে সাজাতেও হাত লাগানো হচ্ছে। মহকুমা গ্রন্থাগারের দেওয়ালে ছবি এঁকে প্রথম কাজ শুরু করেছিল বিষ্ণুপুর পুরসভা। তা মনে ধরে বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসনের।
মহকুমাশাসক মানস মণ্ডল বিষ্ণুপুরের স্থানীয় চিত্র শিল্পীদের নিয়ে শহর সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিষ্ণুপুরের দশাবতার তাস থেকে সহজপাঠের ছবিতে ইতিমধ্যে সরকারি অফিসের দেওয়াল রাঙিয়ে তুলেছেন তাঁরা। এ বার প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি দিল— ‘আসুন নিজের শহরকে ভালবাসুন। পর্যটকদের কাছে আমাদের বিষ্ণুপুরকে সুন্দর করে তুলতে বিষ্ণুপুরবাসীকেই কিছু দায়িত্ব নিতে হবে। আর যেখানে সেখানে বিজ্ঞাপন দেওয়া, বিলবোর্ড টাঙানো, রাস্তা জুড়ে ফেস্টূন, চোখ ধাঁধানো রঙে পোস্টার সাঁটা চলবে না।’
ওই বার্তার সঙ্গেই মহকুমা প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে সরকারি অফিস চত্বর, সরকারি দেওয়াল, বিদ্যুতের খুঁটি, মন্দির সংলগ্ন এলাকা থেকে দ্রুত বিজ্ঞাপন খুলে ফেলতে হবে। পুরসভায় যথাযথ রাজস্ব দিয়ে সরকারের দেখিয়ে দেওয়া জায়গায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে। না হলে বিজ্ঞাপন দাতাদের বিরুদ্ধে যথাযত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) জানান, পর্যটনের উন্নয়নের লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ। ইতিমধ্যে কর্মীদের নিয়ে তাঁরা ২০০ জন বিজ্ঞাপনদাতাকে চিহ্নিত করেছেন। আইনি নোটিস দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে মহকুমা প্রশাসন নিজে উদ্যোগী নিয়ে বিজ্ঞাপনগুলি সরাবে। এই কাজে যা খরচ হবে, সেই টাকা সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপনদাতার কাছ থেকে আদায় করা হবে।
রাসমঞ্চ ঘুরতে এসে বোলপুরের দুই ছাত্রী সায়ন্তনী বসু, মঞ্জুরী রায় প্রশাসনের এই উদ্যোগের কথা শুনে বলেন, ‘‘ভাল কাজ। তবে শুধু প্রশাসন এগিয়ে এলেই হবে না, রাসমঞ্চের ধারে বেড়ায় জামা-কাপড় শুকোতে দেওয়ার মতো কাজ বন্ধ করতে হবে বাসিন্দাদের নিজেদেরই।’’
পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেউ কেউ অনুমতি নিলেও অনেকে অগোচরে যেখানে সেখানে বিজ্ঞাপন দিয়ে শহরে দৃশ্যদূষণ বাড়াচ্ছেন। আমরা মহকুমা প্রশাসনকে সব রকম সাহায্য করব।’’ মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘আমরা আলাদা করে নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন অঞ্চল তৈরি করে দেব। নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে।’’ তবে বাসিন্দাদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, শুধু বিজ্ঞাপন সরালেই তো হবে না, স্থানীয় নেতাদের বসন্ত উৎসবের ছবিও অনেক জায়গায় এখনও রয়ে গিয়েছে। সে সব সরানো হবে তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy