Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মর্গে ফের কয়েকশো লাশ, সৎকার কবে হবে?

আবার মুখ্যমন্ত্রীর জেলায় আসার কথা রয়েছে। নতুন মর্গের কাজ কতদূর? সোজা কথায় বলতে গেলে উত্তরটা হবে— বিশ বাঁও জলে। তার উপরে বাঁকুড়া মর্গ সূত্রে জানা যাচ্ছে, হাসপাতাল ও পুলিশের থেকে আসা কয়েকশো বেওয়ারিশ লাশ আবার সেখানে জমে গিয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫০
Share: Save:

প্রায় দেড় বছর ধরে মর্গের একটি ঘরে তালাবন্দি হয়ে পড়ে ছিল পচাগলা হাজার দেড়েক লাশ। গত মার্চে বাঁকুড়া পুলিশলাইনে প্রশাসনিক বৈঠকে সেই কথা শুনে আঁতকে উঠেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, বেওয়ারিশ লাশ রাখার নির্দিষ্ট সময় পেরোলেই সেগুলি সৎকার করে ফেলতে হবে। বলে গিয়েছিলেন, তিনি আবার জেলা সফরে আসার আগেই যেন নতুন মর্গ তৈরির কাজ শেষ হয়ে যায়।

আবার মুখ্যমন্ত্রীর জেলায় আসার কথা রয়েছে। নতুন মর্গের কাজ কতদূর? সোজা কথায় বলতে গেলে উত্তরটা হবে— বিশ বাঁও জলে। তার উপরে বাঁকুড়া মর্গ সূত্রে জানা যাচ্ছে, হাসপাতাল ও পুলিশের থেকে আসা কয়েকশো বেওয়ারিশ লাশ আবার সেখানে জমে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে পুরসভা এক বারই সৎকারের কাজ করেছিল। তার পরে আর কোনও তৎপরতাই দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়লে কী হবে, সেটাই এখন চিন্তা বিভিন্ন মহলের।

বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তের অবশ্য বলছেন, “লাশ জমা হলেই প্রশাসন বা মর্গের তরফে আমাদের জানানোর কথা। কিন্তু কোনও পক্ষ থেকেই আমাদের কিছু জানানো হয়নি। এই মুহূর্তে মর্গে কত লাশ জমে রয়েছে আমার জানা নেই।’’ তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়ে যাওয়ার পরে প্রশাসন, পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেওয়ারিশ লাশের তালিকা দিয়ে সৎকার করার আবেদন জানিয়েছিল। পুরসভা সেটা করেও দিয়েছিল।

পুলিশ কেন তার পরে আর নতুন করে আবেদন করেনি? বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে পুরসভা মর্গের দেহ সৎকার করে ফেলেছিল বলে জানি। বর্তমানে কী পরিস্থিতি, খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলছেন, “এই মুহূর্তে হাসপাতালের তরফে কতগুলি বেওয়ারিশ দেহ মর্গে রয়েছে সেই সংখ্যাটা জানার চেষ্টা করছি। গত মে-র পরে হাসপাতালের তরফে কেন পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি, সেই ব্যাপারেও খোঁজ নেব।”

গত মার্চে প্রশাসনিক বৈঠকে মর্গের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন বাঁকুড়ার বিধায়ক শম্পা দরিপা। তিনি বলছেন, “পুরসভাকে নিয়মিত বেওয়ারিশ লাশ সৎকার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তা হলে মর্গে লাশ জমছে কি না, সেই খবর পুরসভারই রাখা উচিত।” পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘সৎকার করার জন্য লিখিত ভাবে আবেদন না করলে পুরসভা মর্গ থেকে দেহ বার করতে পারে না। এই ব্যাপারে আইনি জটিলতা রয়েছে।’’

বাঁকুড়ায় নতুন মর্গ তৈরির পরিকল্পনা দীর্ঘ দিন ধরে চলছে। কাজ এগোচ্ছে না। গত বার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়ে যাওয়ার পরেও নয়। পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, এখনও প্রকল্পের পরিকল্পনাটাই স্বরাষ্ট্র দফতরে জমা পড়েনি। কেন? বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ বলেন, “আমরা সময় মত জমি দিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু পূর্ত দফতর নতুন মর্গের পরিকল্পনা বানাতে গিয়ে নানা জটিলতা তৈরি করেছে। ওঁদের উদাসীনতার জন্যই এই পরিস্থিতি।’’

মানতে নারাজ জেলা পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার উৎপল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যখনই কোনও পরিকল্পনা করেছি, বাঁকুড়া মেডিক্যাল আপত্তি করেছে। কারণ জানতে চাইলে উত্তর আসতে বিস্তর দেরি হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, মর্গে কতগুলি দেহ রাখার ব্যবস্থা করা হবে, তা নিয়েও চলেছে টালবাহানা। কাজ থমকে গিয়েছে এই সমস্ত মিলিয়েই।

শম্পা মনেক করেন, গোটা বিষয়টিতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, হাসপাতাল ও পুরসভার সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, “বাঁকুড়ার মর্গের সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার জন্য যা দরকার মুখ্যমন্ত্রী তা করেছেন। কিন্তু দফতরগুলির সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে কোনও সমস্যারই সমাধান হচ্ছে না। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবার বিষয়টি তুলে ধরব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Morgue Mamata Banerjee Bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE