Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
coal mine

ন’মাস পার করে রিপোর্ট অজানা

বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কয়লা তোলার ফলে খনির আশপাশে প্রচুর বাড়িতে ফাটল ধরছে বলে অভিযোগ পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার কিছু এলাকার বাসিন্দাদের। সমস্যার খোঁজ নিল আনন্দবাজার।লাগাতার আন্দোলনের জেরে এলাকায় প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে সমীক্ষাও করা হয়েছিল চলতি বছরের গোড়ায়। কিন্তু মাসের পরে মাস পার হয়ে গেলেও প্রশাসনের তরফে গ্রামবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি বলে অভিযোগ। সমীক্ষায় ঠিক কী উঠে এসেছে, তা-ও জানাতে পারছেন না প্রশাসনিক কর্তারা।

চিন্তা: মাটির দেওয়ালে ফাটল। বাঁশের ঠেকা। ছবি: তারাশঙ্কর গুপ্ত

চিন্তা: মাটির দেওয়ালে ফাটল। বাঁশের ঠেকা। ছবি: তারাশঙ্কর গুপ্ত

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বড়জোড়া শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২০ ০২:৫৪
Share: Save:

কোলিয়ারির বিস্ফোরণে বাড়িতে ফাটল ধরছে বলে অনেক দিন ধরেই অভিযোগ তুলে আসছেন বাঁকুড়ার বড়জোড়ার মনোহরগ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। লাগাতার আন্দোলনের জেরে এলাকায় প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে সমীক্ষাও করা হয়েছিল চলতি বছরের গোড়ায়। কিন্তু মাসের পরে মাস পার হয়ে গেলেও প্রশাসনের তরফে গ্রামবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি বলে অভিযোগ। সমীক্ষায় ঠিক কী উঠে এসেছে, তা-ও জানাতে পারছেন না প্রশাসনিক কর্তারা।

মনোহরগ্রামের ডাঙাপাড়ায় বেশির ভাগ বাড়িই কাঁচা। গ্রামবাসীর অভিযোগ, প্রায় সব বাড়িতেই কমবেশি ফাটল ধরেছে। তেমনই এক গৃহস্থ ডাঙাপাড়ার ফটিক বাউড়ি। তাঁর স্ত্রী ঝর্নাদেবী বলেন, “রাতে বিস্ফোরণ হলে ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠে। ছেলেদের নিয়ে ভয়ে বাইরে বেরিয়ে যাই।”

ফটিকবাবুর পড়শি বরেন বাউড়ি বলেন, “বাড়িতে বাচ্চাদের রেখে বাইরে কাজে গিয়েও সব সময়ে আশঙ্কায় থাকি। ভয় হয়, এই বুঝি চালা ভেঙে পড়ল।” ওই গ্রামেই সরকারি প্রকল্পে পাকা বাড়ি পেয়েছেন মুক্তারাম বাউড়ি। তাঁর বাড়ির দেওয়ালেও দেখা দিয়েছে ফাটল। মুক্তারামবাবু জানান, গর্ত দিয়ে বাড়ির ভিতরে পোকামাকড় ঢুকে যায়। বৃষ্টির জলও ঢোকে। মুক্তারামবাবুর পড়শি বালি বাউড়ি বাড়ির ফাটল দেখিয়ে বলেন, “ফাটলে কাদা লেপে রাখতে হয় সাপ ঢোকা বন্ধ করতে”।

ডাঙাপাড়ার দম্পতি মানিক বাউড়ি দেওয়ালের চারপাশে বাঁশের খুঁটির ঠেকা দিয়ে রেখেছেন। তাঁরা বলেন, “দেওয়াল এতটাই আলগা হয়ে গিয়েছে, যে কোনও সময়ে পড়ে যেতে পারে।’’ ফটিকবাবু, মুক্তারামবাবু, মানিকবাবুর আক্ষেপ, “পরিদর্শনের পরে, ন’মাস কেটে গেলেও প্রশাসনের তরফে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি।”

বড়জোড়ার সিপিএম বিধায়ক সুজিত চক্রবর্তী বলেন, “মনোহর গ্রামের সমস্যাটি আমি বিধানসভায় তুলেছিলাম। প্রশাসনের তরফে সমীক্ষা করতেও নামা হয়েছিল। কিন্তু সে সমীক্ষায় কী উঠে এল, তা তারা জানাতে পারছেন না। সমস্যা যেমন ছিল, তেমনই রয়েছে। সাধারণ মানুষকে কেবল বোকা বানানো হচ্ছে।”

মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) সুদীপ্ত দাস বলেন, “তদন্ত দল গড়ে মনোহর গ্রামের পরিস্থিতির রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছিল। ওই রিপোর্টে ঠিক কী উঠে এসেছে তা ব্লক দফতরের কাছে খোঁজ নেব।” বিডিও (বড়জোড়া) ভাস্কর রায় ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজের।

গ্রামবাসীর দাবি, ওই গ্রামের জমি কোলিয়ারি অধিগ্রহণ করে বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিক। কোলিয়ারিতে কয়লা উত্তোলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট অমল সেনগুপ্ত অবশ্য বলেন, “আমরা কোলিয়ারিতে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ করি। নিয়মকানুন মেনেই সব হয়।”

বাঁকুড়ার জেলাশাসক এস অরুণপ্রসাদ বলেন, “গোটা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।” (শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coal Coal Mine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE