Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

প্রধানকে মারধরের নালিশ

যে দু’জনের বিরুদ্ধে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ, তাঁদের একজন বর্তমানে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর মাথায় গুরুতর চোট রয়েছে।

জখম: হাসপাতালে অর্চনাদেবী।  মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

জখম: হাসপাতালে অর্চনাদেবী। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৭ ০১:২৭
Share: Save:

পঞ্চায়েত মহিলা প্রধানকে মারধরের অভিযোগ উঠল কিছু গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সকালে পাত্রসায়রের জামকুড়ি পঞ্চায়েতের হবপুষ্করিণী গ্রামের ঘটনা। জামকুড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের অচর্না বাগদি আপাতত বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শারীরীক পরীক্ষা করানো হয়েছে। গুরুতর কোনও আঘাত নেই। তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ঘটনায় অভিযুক্ত তাঁর দুই পড়শির এক জনও ওই হাসপাতালে ভর্তি।

অর্চনাদেবী জানান, মঙ্গলবার ছিল হবপুষ্করিণী গ্রামের বাগদি পাড়ার দু’টি পাম্প বসানোর দিন। তাঁর অভিযোগ, দুই পড়শির নেতৃত্বে কিছু গ্রামবাসী সোমবার সন্ধ্যায় তাঁর বাড়ি গিয়ে দাবি করেন, বাগদি পাড়ার বদলে মাঝিপাড়ায় পাম্প বসাতে হবে। রাজি না হওয়ায় গালিগালাজ করে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে চলে যান। অর্চনাদেবীর ছেলে সুব্রত থানায় দায়ের করা অভিযোগে দাবি করেছেন, মঙ্গলবার সকালে তাঁরা ফের লাঠি, টাঙি, রড, শাবল আর পিস্তল নিয়ে বাড়িতে চ়ড়াও হন। দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে অর্চনাদেবীর শ্লীলতাহানি করা হয়। মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে লুঠ করা হয় সোনার গয়না, নগদ টাকা। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছে, এ দিনের হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া দুই পড়শি কিছুদিন আগে প্রধানের রায়তি জমি দখল করে রাস্তা বানিয়েছে। আরও লেখা হয়েছে, ওই দু’জন তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের অনুগামী।

যে দু’জনের বিরুদ্ধে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ, তাঁদের একজন বর্তমানে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর মাথায় গুরুতর চোট রয়েছে। ওই ব্যক্তির দাবি, গ্রামের একটি কাঁচা রাস্তা দীর্ঘ দিন ধরে বেহাল। পঞ্চায়েত প্রধানকে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি। শেষে নিজেরাই রাস্তা বানাবেন বলে তো়ড়জোড় শুরু করেন। রাস্তার মধ্যে কিছুটা জমি পঞ্চায়েত প্রধানের। তা নিয়ে কথা বলতে সোমবার তাঁরা পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, একশো দিনের কাজের মজুরি দীর্ঘ দিন ধরে বকেরা রয়েছে। মনসা পুজোর আগে সেই বকেয়া মজুরি যাতে মিটিয়ে দেওয়া হয়, সেই ব্যাপারেও অনুরোধ করবেন বলে ঠিক করেছিলেন তাঁরা। সেই সময়ে প্রধান বাড়িতে ছিলেন না। তাই মঙ্গলবার সকালে ফের তাঁরা ছ’-সাত জন মিলে প্রধানের বাড়ি যান। তাঁর অভিযোগ, তখন প্রধান এবং প্রধানের স্বামী তাঁদের উপরে বাঁশ, লোহার রড আর মুগুর নিয়ে চড়াও হন। তাঁরাও থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

মঙ্গলবার প্রধানের বাড়িতে গিয়ে ভাংচুরের চিহ্ন দেখা যায়। অভিযুক্ত এক ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি। অন্য জনকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘‘পাম্প সংক্রান্ত গল্পটা পুরো মিথ্যা। রাস্তার জমি নিয়েই আসলে ঝামেলা।’’ তাঁর দাবি, জমি নিয়ে কথা বলতেই এ দিন তাঁরা গিয়েছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু পড়শি মহিলা বলেন, ‘‘প্রধান এবং তাঁর স্বামী যখন আমাদের উপরে চড়াও হন, আমরাও তাঁদের কয়েক ঘা দিই। তবে আমাদের কাছে অস্ত্র ছিল না।’’

বিডিও (পাত্রসায়র) অজয়কুমার সাহা বলেন, ‘‘রাস্তা বা বকেয়া মজুরির ব্যাপারে আমায় বললে দেখতাম।’’ আর তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘জামকুড়িতে দলের কোনও দ্বন্দ্ব নেই। অভিযুক্তদের মতো প্রধানও আমারই অনুগামী। সবার সঙ্গে কথা বলে ব্যাপারটা মিটিয়ে নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE