Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কয়লা ‘করিডর’ দখলেই দ্বন্দ্ব

খয়রাশোল আর বিস্ফোরণ— গত কয়েক বছরে একের পরে এক ঘটনায় দু’টি শব্দ যেন অনেকটাই সমার্থক হয়ে উঠেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৩৮
Share: Save:

খয়রাশোল আর বিস্ফোরণ— গত কয়েক বছরে একের পরে এক ঘটনায় দু’টি শব্দ যেন অনেকটাই সমার্থক হয়ে উঠেছে। সোমবার খয়রাশোলে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে বিস্ফোরণের পরে এমনই বলছেন ওই ব্লকের বাসিন্দাদের একাংশ। গত তিন বছরে ৭টি এমন কাণ্ড ঘটেছে। বিস্ফোরণে কখনও মাটিতে মিশেছে নবনির্মিত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, কখনও বা তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ি, তৃণমূল নেতার ঘরের দেওয়াল, তৃণমূল নেতার গোয়ালঘর। প্রাণহানির সংখ্যা চার।

প্রশ্ন একটাই, এত বিস্ফোরণ কেন?

খয়রাশোলে কান পাতলে শোনা যাবে, তার নেপথ্যে রয়েছে কয়লা। অবৈধ ভাবে কয়লা উত্তোলন, পাচার, দু’টি খোলামুখ কয়লাখনির নিয়ন্ত্রণ— এই কয়লা ‘সাম্রাজ্যের’ দখল কার হাতে থাকবে, সেটাই দ্বন্দ্বের মূলে। সহজ সমীকরণ হল, কয়লা সাম্রাজ্য হাতে রাখতে গেলে চাই রাজনৈতিক ক্ষমতাও। তা নিয়েই নিত্য লড়াই খয়লরাশোলে।

২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে খয়রাশোল থানার এলাকার পাঁচরা পঞ্চায়েতের আহম্মদপুর গ্রামে বিস্ফোরণ ঘটেছিল আগের পঞ্চায়েত ভোটে নির্বাচিত বোর্ড সদস্য শেখ জাবিরের বাড়িতে। তীব্রতা এতটাই ছিল, পাকা বাড়ির ঢালাই ছাদ ভেঙে পড়েছিল সে বারও। মৃত্যু হয়েছিল পঞ্চায়েত সদস্যের দুই ভাই শেখ হাফিজুল, শেখ তারিক হোসেনের। লোকপুর থানা এলাকায় ওই বছরই ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বিতীয় বিস্ফোরণ হয়। এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত বিপদ বাউরির খামারবাড়িতে বোমা ‘তৈরির’ সময় শ্রীনাথ বাউরি, পূর্ণচন্দ্র বাউরি নামে দুই যুবকের মৃত্যু হয়। এই দুই ক্ষেত্রেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টিই প্রকট হয়ে ওঠে। সব চেয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে ২০১৬ সালের জুন মাসে। বিস্ফোরণে উড়েছিল একটি আদর্শ নবনির্মিত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র।

বিস্ফোরণ-নামা

জানুয়ারি, ২০১৬

• পাঁচরা পঞ্চায়েতের আহম্মদপুরে, নিহত ২

ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

• লোকপুরে বোমা ফেটে নিহত ২

জুন, ২০১৬

• বিস্ফোরণে ধ্বংস খয়রাশোলের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র

বিস্ফোরণের মান যাই হোক, অবৈধ কয়লা কারবার এবং এলাকা দখলের লড়াইয়ের জন্যে প্রতিনিয়ত এই ধরনের সংঘাত লেগেই থাকে। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত অশোক ঘোষ ও অশোক মুখোপাধ্যায়ের গোষ্ঠীর মাধ্যমে। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে গোষ্ঠীবিবাদের জেরে দুই নেতাকেই খুন করা হয়। দলের অন্দরমহলের খবর, ঘোষ গোষ্ঠীর দায়িত্ব এখন গিয়েছে নিহত অশোক ঘোষের ভাই দীপক ঘোষের হাতে। কিছু দিন আগে পর্যন্ত খয়রাশোল ব্লকে তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দলের ‘রাশ’ ছিল দীপকবাবু হাতেই। মুখোপাধ্যায় গোষ্ঠীর তেমন কোনও নেতা আসরে না থাকলেও বিবাদ থেকে গিয়েছে। দল বলছে, বিক্ষুব্ধদের পঞ্চায়েত নির্বাচনে টিকিট দিয়ে দ্বন্দ্ব অনেকটাই মিটিয়ে ফেলেছিলেন দীপকবাবু। এক জন বিরোধীকেও পঞ্চায়েতের লড়াইয়ে সামনে আসতে দেখা যায়নি। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডল কিছু দিন আগে সুকুমারবাবু সরিয়ে ওই পদে দীপকবাবুকে আনলেও, ব্লক কার্যকরী সভাপতি করে দেন বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর উজ্জ্বল হক কাদেরীকে। ঠিক সেই দিন থেকেই দ্বন্দ্ব ফের প্রকট হয়।

এলাকাবাসীর বক্তব্য, ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে বড়রা গ্রামটি অবৈধ কয়লা কারবারের ‘করিডর’। তা-ই ওই গ্রাম নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে দু’পক্ষই মরিয়া হয়ে ওঠে। কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। ক্রমে তেতে উঠছিল বড়রা। পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন দফতরের বিজ্ঞপ্তির পরে ১৪ সেপ্টেম্বর বোর্ড গঠনের প্রস্তুতি শুরু হতেই দু’পক্ষ আরও তৎপর হয়ে ওঠে। পুলিশের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘এই বিস্ফোরণ হয়তো তারই বহিঃপ্রকাশ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Conflict Coal Corridor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE