Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

রক্তদান শিবির করে মা-কে শ্রদ্ধা নেতার

শনিবার পুরুলিয়া আদালতের আইনজীবী বিশ্বরূপ পট্টনায়কের দেশবন্ধু রোডের বাড়িতে তাঁর পরিচিত জনেরা এসে ৩৭ প্যাকেট রক্ত দিলেন। এই উদ্যোগের প্রশংসা করে অন্যদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

শিবিরে: রক্ত দিচ্ছেন বিশ্বরূপবাবু। নিজস্ব চিত্র

শিবিরে: রক্ত দিচ্ছেন বিশ্বরূপবাবু। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৭
Share: Save:

পড়শিরা কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনলে খোঁজখবর করতে ছুটতেন তিনি। রক্তের অভাবে কেউ ভুগছেন শুনলে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তেন। সেই মায়ের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে বাড়িতেই রক্তদানের আয়োজন করলেন তাঁর ছেলে। শনিবার পুরুলিয়া আদালতের আইনজীবী বিশ্বরূপ পট্টনায়কের দেশবন্ধু রোডের বাড়িতে তাঁর পরিচিত জনেরা এসে ৩৭ প্যাকেট রক্ত দিলেন। এই উদ্যোগের প্রশংসা করে অন্যদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বরূপবাবুর অন্য পরিচয়, তিনি শহর কংগ্রেসের সভাপতি। সেই সূত্রেই তাঁর বাড়িতে দলের লোকজনের আনাগোনা লেগে থাকত। অসুস্থদের সাহায্য চেয়ে অনেকে আসতেন। তাঁদের কাছেও রোগীর খোঁজখবর রাখছেন বিশ্বরূপবাবুর মা পূর্ণিমা পট্টনায়ক। দত বছর তিনি ক্যানসারে মারা যান। বিশ্বরূপবাবুর কথায়, ‘‘মাকে নিয়ে অনেক হাসপাতালে ঘুরেছি। কতবার রক্ত লেগেছে মায়ের। কোনও কোনও ব্লাড ব্যাঙ্কে আবার নিজেই রক্ত দেওয়ার পরে তবে মায়ের রক্ত পেয়েছি। অনেকেও রক্ত দিয়ে সাহায্য করেছেন সেই সময়ে। তাই মনে হল, মায়ের মৃত্যু বার্ষিকীতে রক্তদান শিবির করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর মতো ভাল কাজ আর হতে পারে না। মায়ের মতো কতো মুমূর্ষু রোগীদের এতে সাহায্য করা হবে।’’

সেই ভাবনা নিয়েই তিনি বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতজনদের এ দিন তাঁর বাড়িতে আয়োজিত রক্তদান শিবিরে আসার অনুরোধ করেছিলেন। এ দিন বিশ্বরূপবাবুর অনুরোধে তাঁর বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতজনেরা-সহ মোট ৩৭ জন বাড়িতে এসে রক্তদান করেন। দুপুরে পুরুলিয়া ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা চলে যাওয়ার পরে আরও কিছু পরিচিত ব্যক্তি রক্ত দিতে এসেছিলেন। বিশ্বরূপবাবু বলেন, ‘‘তাঁদের ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে রক্ত দিয়ে আসতে বলি। সব মিলিয়ে এ দিন প্রায় ৫০ জন রক্তদান করেছেন। সবাই এগিয়ে আসায় এই কাজ করতে পেরেছি।’’

রক্ত দিতে এসেছিলেন পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা হারাধন সাউ, পল্লব সাহানি, সমীর বাউরি, অমিত দাসেরা। তাঁরা বলেন, ‘‘বন্ধুর মায়ের স্মৃতিতে এই আবেদনে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারিনি। তা ছাড়া যাঁর স্মৃতিতে এই আয়োজন, তিনি আমাদের স্নেহ করতেন।’’ বিশ্বরূপবাবু ও তাঁর স্ত্রী ঈশানী পট্টনায়কও এ দিন রক্ত দিয়েছেন। ঈশানীদেবী বলেন, ‘‘যাঁরা আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন, সবার কাছেই আমরা কৃতজ্ঞ।’’

মাস খানেক আগে সারেঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূল নেতা ধীরেন্দ্রনাথ ঘোষ তাঁর ছেলের বৌভাতের দিন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিলেন। এই ভাবে মানুষজনের রক্তদানকে অন্যমাত্রায় পৌঁছে দেওয়ার ঘটনাকে দৃষ্টান্তমূলক বলে মনে করছেন পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের সহকারী সুপার শান্তনু মুখোপাধ্যায়। তিনি নিজেও বহু ক্ষেত্রে রোগীদের রক্ত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে বেশ কিছু দিন ধরেই রক্তের চরম অভাব চলছে। অন্য জেলা থেকে চেয়ে এনে সামাল দিতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বরূপবাবু ও তাঁর সঙ্গীরা রক্ত দিয়ে যা করলেন, তার তুলনা হয় না। অন্যেরাও এই পথ ধরলে জেলার অনেক রোগীকে আর রক্তের সমস্যায় হন্যে হতে হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE