Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
বিতর্কে পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল

ডায়ালিসিস হয়নি, মৃত প্রৌঢ়

কিট না থাকায় গোটা একটা দিন ডায়ালিসিস হয়নি। তারই মধ্যে এক রোগীর মৃত্যুকে ঘিরে বিতর্ক দেখা দিল পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে।কিডনির সমস্যায় ভোগা পুরুলিয়া শহরের অলঙ্গিডাঙার বাসিন্দা তাপসকুমার হালদারকে (৫৮) বুধবার ডায়ালিসিস করাতে মেয়ে পায়েল ওই হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন।

শোকার্ত মেয়ে ও পরিজনেরা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

শোকার্ত মেয়ে ও পরিজনেরা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:২৬
Share: Save:

কিট না থাকায় গোটা একটা দিন ডায়ালিসিস হয়নি। তারই মধ্যে এক রোগীর মৃত্যুকে ঘিরে বিতর্ক দেখা দিল পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে।

কিডনির সমস্যায় ভোগা পুরুলিয়া শহরের অলঙ্গিডাঙার বাসিন্দা তাপসকুমার হালদারকে (৫৮) বুধবার ডায়ালিসিস করাতে মেয়ে পায়েল ওই হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু কিট ফুরিয়ে যাওয়ায় তাপসবাবুর মতো কয়েকজনের ডায়ালিসিস সেদিন করা যায়নি। তাঁর আত্মীয়দের দাবি, বুধবারই তাপসবাবুর ডায়ালিসিস করার দিন দেওয়া হয়েছিল। তিনি কষ্ট পাচ্ছিলেন বলে কিট আসার অপেক্ষায় তাঁরা হাসপাতালেই দীর্ঘক্ষণ ছিলেন। শেষ পর্যন্ত বিকেলে তাঁরা ফিরে যান। বাড়িতে অবস্থার অবনতি হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান। তা শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিবারের লোকেরা। তবে হাসপাতাল সুপার শিবাশিস দাসের বক্তব্য, ‘‘মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক। তবে একদিন ডায়ালিসিস না করাতেই পরেরদিন রোগীর মৃত্যু হতে পারে কি না, তা তদন্ত সাপেক্ষ।’’

বাবাকে হারিয়ে বৃহস্পতিবার কাঁদছিলেন পায়েল। তাঁর কথায়, ‘‘বাবার কিডনির যা অবস্থা তাতে নিয়মিত ডায়ালিসিসের প্রয়োজন। এই হাসপাতালেই ডায়ালিসিস করাতে বাবাকে নিয়ে আসি। বুধবার বাবাকে দিন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এসে দেখি কিট ফুরিয়ে গিয়েছে। আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। এখানে ছাড়া তো পুরুলিয়ার আর কোথাও ডায়ালিসিস করা হয় না।’’ পায়েল জানান, বিকেলে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরে তাপসবাবুর অবস্থার অবনতি হয়। তখনও ডায়ালিসিস বিভাগে ফোন করে তিনি শোনেন, কিট আসেনি। সারা রাত তাপসবাবু কাতরাতে থাকেন। ভোরে সব শেষ হয়ে যায়। পায়েলের ক্ষোভ, ‘‘ডায়ালিসিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিষেবায় এত দায়সারা মনোভাব নিয়ে কী ভাবে এরা কাজ করছেন? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সময়ে কিট আনিয়ে রাখলে বাবাকে এ ভাবে হারাতে হতো না।’’

পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘এ রকম একটা জরুরি বিভাগে কেন কিট শেষ হয়ে যাবে? এর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’’ তিনি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। সদর হাসপাতালের সুপার জানান, ডায়ালিসিস ইউনিটটি পিপিপি মডেলে চলে। কিট সরবরাহ করার কথা সেই বেসরকারি সংস্থার। তিনি বলেন, ‘‘কেন তাঁরা সময়মতো কিট সরবরাহ করেননি, তা জানতে চেয়ে ওই সংস্থাকে চিঠি লিখেছি।’’ পুরুলিয়ায় ওই সংস্থার তরফে কেউ মুখ খুলতে চাননি। তবে সংস্থাটির ব্যারাকপুর অফিসের এক কর্মকর্তা সুব্রত মাইতি দাবি করেছেন, ‘‘ডায়ালিসিসের কিট যে শেষ হয়ে গিয়েছে, তা পুরুলিয়া থেকে আমাদের বুধবারই জানানো হয়। সঙ্গে সঙ্গে আমরা আসানসোল থেকে জরুরি ভিত্তিতে কিট পুরুলিয়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা করি।’’ যদিও বৃহস্পতিবার ভোরে ওই কিট এসে পৌঁছেছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। কিন্তু আগে থেকে কেন তা জানানো হয়নি? সুব্রতবাবুর জবাব, ‘‘পুরুলিয়ায় যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তাঁর কাছে তা জানতে চাওয়া হবে। ভবিষ্যতে যাতে এই অবস্থা এড়ানো যায়, তাও দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Old Man Hospital Dialysis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE