Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
জানে না বন দফতরই, আটক ডাল

গাছ কাটা নিয়ে বিতর্ক বোলপুরে

এক দিকে ইলামবাজারে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ঘটা করে বন-মহোৎসব উদ্‌যাপন, স্কুল পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ— সকলকে গাছের চারা বিতরণ। অন্য দিকে রাজ্য সরকারের প্রকল্পেই রাস্তা চওড়া করার নামে একের পর এক গাছ কাটার অভিযোগ। তা-ও আবার বন দফতরের কোনও অনুমতি না নিয়েই।

রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য কাটা হয়েছে গাছ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য কাটা হয়েছে গাছ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়
বোলপুর শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৮ ০৮:১০
Share: Save:

এক দিকে ইলামবাজারে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ঘটা করে বন-মহোৎসব উদ্‌যাপন, স্কুল পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ— সকলকে গাছের চারা বিতরণ। অন্য দিকে রাজ্য সরকারের প্রকল্পেই রাস্তা চওড়া করার নামে একের পর এক গাছ কাটার অভিযোগ। তা-ও আবার বন দফতরের কোনও অনুমতি না নিয়েই।

পিডব্লিউডি সূত্রে জানা গিয়েছে, বোলপুর জামবুনি বাসস্ট্যান্ড থেকে ট্যুরিস্ট লজ মোড় অর্থাৎ প্রভাত সরণি সম্প্রসারণের কাজ চলছে। প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা ওই রাস্তা বর্তমানে সাত মিটার চওড়া। দু’দিক থেকে সম্প্রসারণ করে ওই রাস্তা ১০ মিটার চওড়া হওয়ার কথা। এরই মাঝে রাস্তায় যে সমস্ত গাছ পড়েছে, সেগুলির মধ্যে বেশ কয়েক’টি বহু দিনের পুরোনো গাছ রয়েছে। সেগুলি কেটে ফেলা হয়েছে বন দফতরের অনুমতি ছাড়াই।

কেন গাছ কাটা হল?

পিডব্লিউডি-এর সহকারি ইঞ্জিনিয়ার (কনস্ট্রাকশন) মনিরুল মল্লিক বলেন, ‘‘খুব বাধা হয়ে না দাঁড়ালে গাছ কাটা হয় না। ডালপালা ছাঁটা হয়। এ ক্ষেত্রেও গাছের ডাল কাটারই কথা ছিল। তাই বন দফতরের অনুমতি নেওয়া হয়নি। কিন্তু, ডাল কাটতে গিয়ে কয়েক’টি গাছও কাটা পড়ে গিয়েছে। কারা কেটেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ বোলপুরের রেঞ্জ অফিসার নির্মল বৈদ্যের কথায়, ‘‘গাছ কাটার কোনও অনুমতি ছিল না। তার পরেও গাছ কাটা হয়েছে। গাছের কাটা অংশ মঙ্গলবার বাজেয়াপ্ত করেছি।’’

প্রতি বছর ১৪-২০ জুলাই বৃক্ষরোপণ, যৌথ পরিচালন কমিটির মধ্যে সমন্বয়, আলোচনার মধ্যে দিয়ে পালিত হয় বন-মহোৎসব। এ বছর দক্ষিণবঙ্গের দুটি জায়গায় সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল, তার একটি ইলামবাজার। সে দিনের অনুষ্ঠান থেকে জানা গিয়েছিল, দক্ষিণবঙ্গের মোট ১১টি শহরকে সাজাতে প্রচুর বৃক্ষরোপণ করা হবে।
বীরভূম জেলায় সেই তালিকায় রয়েছে বোলপুর। সেই বোলপুরেই গত কয়েক দিনে কেটে ফেলা হয়েছে বেশ কিছু প্রাচীন গাছ।

একের পর এক গাছ কাটার ফলে অবাক হয়েছিলেন স্থানীয় মানুষও। জামবুনি বাসস্ট্যান্ডের ঠিক সামনে একটি প্রাচীন ছিল। সেটি সম্পূর্ণ কেটে দেওয়া হয়েছে। নিত্যযাত্রীদের অনেকেই ওই গাছতলায় দাঁড়িয়ে থাকতেন। ছিল একটি ফলের দোকানও। এলাকার অনেকের বক্তব্য, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বোলপুরে অনেক গাছ কাটা পড়েছে। পরিবর্তে কোনও গাছ লাগানো হয়নি। যতই বন-মহোৎসব হোক না কেন, বোলপুরে গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলেও দাবি সাধারণ মানুষের। গ্রাম থেকে প্রতিদিন বহু মানুষ বোলপুরে আসেন। তাঁদেরও একই মত। ইন্দাস গ্রামের মণিরাজ হাজরা, খয়েরবুনি গ্রামের বঙ্কু হাজরা, মহুটার গ্রামের ছোটন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাস্তা সম্প্রসারণের প্রয়োজন আছে ঠিকই। কিন্তু, গাছ বাঁচিয়েও তো রাস্তা করা যায়। তার জন্য নির্বিচারে গাছ কাটার প্রয়োজন নেই। স্কুল শিক্ষক অনির্বাণ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘গাছ না কেটে রাস্তা চওড়া করাই তো আসল পরীক্ষা।’’

টনক নড়েছে প্রশাসনেরও। মহকুমাশাসক অভ্র অধিকারী বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই পিডব্লিউডিকে জানিয়েছি, তারা যেন গাছ না কেটে রাস্তা চওড়া করে।’’
বোলপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তপন সাহার কথায়, ‘‘রাস্তা চওড়া হোক সেটা সকলেই চাইছি। কিন্তু, রাস্তা চওড়া করতে গিয়ে গাছ কেটে যে ভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, সেটা বন্ধ করা দরকার।’’ পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত জানান, রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ হয়ে গেলে রাস্তার দু’পাশে গাছ লাগিয়ে বাগান করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tree Cutting Bolpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE