Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

ক্যানসারকে হারিয়ে করোনার সঙ্গে যুদ্ধে

পুরুলিয়ার কেন্দা থানার ভাণ্ডারপুয়াড়া গ্রামে গোলোকবাবুর বাড়ি। ২০০৬ সালে প্রথম চাকরিতে যোগ দেন। প্রথমে ব্যারাকপুর। তার পরে বাঁকুড়ার রানিবাঁধ, মেজিয়া ঘুরে এখন জয়পুর থানায় কর্মরত।

হারমোনিয়ামে মগ্ন। নিজস্ব চিত্র

হারমোনিয়ামে মগ্ন। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ অধিকারী
জয়পুর শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ০৮:৪৬
Share: Save:

‘করোনাকে ডরো না ভাই, সাবধানে শুধু থাকা চাই।’

গান বেঁধেছেন যিনি, তিনি গত আট বছর ধরে লড়াই চালিয়ে ক্যানসারকে পিছু হটিয়ে দিয়েছেন। এ বার করোনার সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছেন বাঁকুড়ার জয়পুর থানার কনস্টেবল গোলোকবিহারী মাহাতো। লাঠি-বন্দুক ধরা হাত সুর তুলছে হারমোনিয়ামে। ছন্দে বাঁধা সতর্কবার্তা ছড়িয়ে পড়ছে শহরে-গঞ্জে-গ্রামে। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজনের মোবাইলে মোবাইলে বেজে উঠছে।

পুরুলিয়ার কেন্দা থানার ভাণ্ডারপুয়াড়া গ্রামে গোলোকবাবুর বাড়ি। ২০০৬ সালে প্রথম চাকরিতে যোগ দেন। প্রথমে ব্যারাকপুর। তার পরে বাঁকুড়ার রানিবাঁধ, মেজিয়া ঘুরে এখন জয়পুর থানায় কর্মরত। ছেলে অভিজিৎ, মেয়ে অঞ্জলি এবং স্ত্রী মিঠু থাকেন কেন্দার গ্রামের বাড়িতেই।

গোলোকবাবুর নেশা গান বাঁধা। দাদু জয়ন্তী মাহাতো ছিলেন ঝুমুরের বিশারদ। কাজের ফাঁকে গান বেঁধে কেটে যাচ্ছিল দিন। এরই মধ্যে, ২০১২ সালে ক্যানসার ধরা পড়ে। তাঁর বন্ধু গিরিধারী মুখোপাধ্যায় পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। তিনিই নিয়ে গিয়েছিলেন মুম্বই।

গিরিধারীবাবুর কথায়, ‘‘বন্ধুর প্রতি যেমন কর্তব্য ছিল, তেমনই এক জন শিল্পীকে সুস্থ রাখাটাও আমার দায়িত্ব বলে মনে করেছিলাম।’’

এখন স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরেছেন গোলোকবাবু। রোজ কাজে যান। বাল্যবিবাহ রোধ, ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচি, রক্তদান, কন্যাশ্রী প্রকল্প, পানীয় জলের অপচয় বন্ধ করার মতো নানা কিছু নিয়ে জেলা প্রশাসনের জন্য গান বেঁধেছেন তিনি। সরকারি উদ্যোগে জনসচেতনতা সংক্রান্ত তাঁর গানের দু’টি সিডিও প্রকাশিত হয়েছে।

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “গোলোকবাবু অসুস্থ হলেও দায়িত্ব পালনে কোনও ত্রুটি রাখেন না। বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে পুলিশের জন্য গান বাঁধেন তিনি। করোনা নিয়ে তাঁর বাঁধা গান মানুষের মনে বেশ প্রভাব ফেলেছে।’’ তিনি জানান, এই গান মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশও বিভিন্ন জায়গায় ওই গান বাজিয়ে মানুষকে সচেতন করছে।

আর গোলোকবাবুর নিজের কথায়, ‘‘নিজে রোগী বলেই বুঝি মারণ রোগের যন্ত্রণা। বাবাও কিডনির অসুখে ভুগছেন। রোগ নিয়ে ঘর করি। তাই অন্যের ঘরে যাতে রোগ না ঢুকতে পারে, সেই চেষ্টা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE