তফাৎ: নিরাপদ দূরত্বে বেচাকেনা। বিষ্ণুপুরে। নিজস্ব চিত্র
কেউ বেশি রাত পর্যন্ত ওষুধের দোকান খুলে রেখে খদ্দেরদের চাহিদা মেটাচ্ছেন। কেউ আবার চাহিদা মেটাতে ডিস্ট্রিবিউটরের গাড়ি আসার অপেক্ষায় না থেকে নিজেরাই ওষুধ কিনতে গাড়ি পাঠাচ্ছেন পড়শি জেলায়। ওষুধের জোগান নিয়ে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্য নজর রাখছে ড্রাগ কন্ট্রোলও।
এ দিকে অনেকেই বিনা প্রেসক্রিপশনে কিছু বিশেষ ওষুধ কিনছেন বলে বাঁকুড়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে। তা নজরে আসায় বাঁকুড়ার ড্রাগ কন্ট্রোল জানিয়েছে, বিনা প্রেসক্রিপশনে কাউকে ওষুধ দেওয়া যাবে না।
বাঁকুড়ার ড্রাগ কন্ট্রোল দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর জয়ন্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘কয়েকটি বিশেষ ওষুধ কিনতে মানুষের লম্বা লাইন লেগে যাচ্ছে দোকানগুলিতে। ক্রেতারা ভাবছেন, ওই ওষুধগুলি খেলে করোনা ভাইরাসের হাত থেকে মুক্তি মিলবে। তবে এটা ভ্রান্ত ধারণা।’’ তাঁর সংযোজন: “সমস্ত ওষুধ দোকানিদের নির্দেশ দিয়েছি, বিনা প্রেসক্রিপশনে কাউকে ওই বিশেষ ওষুধ বিক্রি করা হলে চরম পদক্ষেপ করব। দোকানের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে।”
বাঁকুড়া জেলার ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে জেলা জুড়ে যে পরিমাণ ওষুধ মজুত রয়েছে, তাতে আগামী ১৫ দিন মানুষকে পরিষেবা দেওয়া যাবে। তবে করোনাভাইরাস রুখতে ‘লকডাউন’ শুরু হওয়ায় ওষুধ পরিবহণে যুক্ত কর্মীরা কী ভাবে বাড়ি থেকে কাজে যোগ দেবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সে কারণে অনেকে কাজে যাচ্ছেন না। ‘প্যাকেজিং’ বা ‘লোডিং-আনলোডিং’-এ যুক্ত কর্মীরাও সব জায়গায় কাজ করছেন না বলে সমস্যা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
‘বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সম্পাদক সজল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ওষুধের সরবরাহ ধাক্কা খাচ্ছে। কখনও শুনছি পরিবহণ কর্মীরা ধর্মঘট করছেন, কখনও ‘প্যাকেজিং’ বন্ধ থাকছে। ফলে, জোগান স্বাভাবিক গতিতে হচ্ছে না।” সমস্যাটি ড্রাগ কন্ট্রোলারের দফতরে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সজলবাবু। বাঁকুড়ার ড্রাগ কন্ট্রোল দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর বলেন, “সমস্যাটি রাজ্যকে জানানো হয়েছে। জেলার ওষুধ দোকানগুলিতে মজুতের উপরেও আমরা নজর রাখছি।”
সোমবার ‘লকডাউন’-এর প্রথম দিনে অনেক রাত পর্যন্ত বেচাকেনা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন পুরুলিয়া শহরের সাহেববাঁধ রোডের একটি খুচরো ওষুধের দোকানি মোহিত আগরওয়াল। তিনি বলেন, ‘‘অনেকে সারা মাসের ওষুধ কিনতে এসেছিলেন। আমরা প্রেসক্রিপশন নিয়ে জমা রেখে খদ্দেরদের বাইরে অপেক্ষা করতে বলছি। পালা এলে ডেকে নেওয়া হচ্ছে।’’ নডিহার বাসিন্দা সিদ্ধার্থ সিংহ ব্লাড সুগারের ওষুধ খান। তিনি বলেন, ‘‘কখন কী হয়, তার ঠিক নেই। তাই ওষুধ কিনে রাখলাম।’’
চাঁইবাসা রোডের ওষুধ বিক্রেতা দেবকুমার মুখোপাধ্যায়, ঝালদা বাসস্ট্যান্ড মোড়ের দোকানি আশিসকুমার সাহা জানান, এখনও পর্যন্ত সরবরাহ ঠিকই রয়েছে। কিন্তু এই অবস্থা চললে জোগান কত দিন ঠিক থাকবে, তা নিয়ে তাঁরা চিন্তায়। আদ্রা ও কাশীপুর এলাকার ওষুধের সরবরাহ নির্ভর করে আসানসোল পাইকারি বাজারের উপরে। তাই সেখানকার ব্যবসায়ীরা আসানসোল থেকে ওষুধ কিনে আনছেন।
বেঙ্গল কেমিস্টর্স অ্যান্ড ড্রাগিস্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের পুরুলিয়া সদর জ়োনের সভাপতি আনন্দ কেডিয়া বলেন, ‘‘ওষুধ দোকানের কর্মীদের বাইরে থেকে শহরে ঢুকতে পুলিশ গোড়ায় বাধা দিচ্ছিল। পরিচয়পত্র দেওয়ায় সেই সমস্যা মিটেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy