খালি: বোলপুরের একটি হোটেল। নিজস্ব চিত্র
দোলের আগেই অধিকাংশ হোটেল সাজানো হয়েছিল নতুন করে। শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসব বাতিল হওয়ায় বোলপুর, শান্তিনিকেতনের অধিকাংশ হোটেলের ব্যবসা মার খেয়েছিল শেষ মুহূর্তে। শান্তিনিকেতনের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখে মূলত হোটেল ব্যবসা। দেড়শোটিরও বেশি হোটেল আর শতাধিক রেস্তোরাঁকে ঘিরেই পর্যটন এবং পরিবহনের ব্যবসাও টিকে থাকে। করোনাভাইরাসের আতঙ্কের জেরে এখন সব বন্ধ।
শান্তিনিকেতন রোডে ভুবনডাঙার কাছে চারতলা হোটেল। রিসেপশনের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। ৪৩টা ঘরের এই হোটেলে এখন সাকুল্যে চারজন কর্মী। হোটেলের রেস্তোরাঁ বন্ধ। তাই নিজেরাই স্টোভ জ্বেলে রান্না করে নিচ্ছেন। হোটেলের সব বুকিং বাতিল হয়েছে সপ্তাহ খানেক আগেই। হোটেল মালিক প্রবীর তালুকদারের তারাপীঠ, দীঘা এবং কলকাতাতেও একাধিক হোটেল আছে। তাঁর কথায়, ‘‘এতবড় লোকসান আমার হোটেল ব্যবসার জীবনে কখনও হয়নি। একদম মুখ থুবড়ে পড়েছি। এই অবস্থাতে কেউ থাকতে চাইলেও রাখতে পারছি না আসলে কোথা থেকে এসেছে বুঝতে না পারায়। হোটেল কর্মী কমিয়ে ফেলতে হয়েছে রাতারাতি।’’ শান্তিনিকেতনের হোটেল ও রিসর্টগুলিতে বিদেশি পর্যটকদের ভিড় সারাবছরই থাকে। করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়ানোর পরেও বেশ কয়েকজন বিদেশি পর্যটক শান্তিনিকেতনে এলেও হোটেল বন্ধ থাকায় তাঁরা ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তবে বিশ্বভারতী বন্ধ হওয়ার পরে বেশ কয়েকজন বিদেশের পড়ুয়া বাড়ি ফেরার পথে মেস ছেড়ে হোটেলে এসে ওঠেন। তবে সোনাঝুরির হাট বন্ধ হওয়ার পরে এই সপ্তাহে সব হোটেলই কার্যত খালি। কেউ কেউ ঝাঁপ বন্ধ করেছেন সচেতনভাবেই। কেউ আবার খুলে রেখেছেন নামকাওয়াস্তে। রুটিন মাফিক ঘর পরিষ্কার ছাড়া কিছুই হচ্ছে না সেসব হোটেলে।
বোলপুর বা শান্তিনিকেতনের রেস্তোরাঁগুলোর অধিকাংশতেই স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার জন্য সাবানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বেসিনের সামনে হাত ধোয়ার অনুরোধ করে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। তবে ইতিমধ্যেই বাইরের খাবার নিয়েও আতঙ্ক দেখা দেওয়ায় রেস্তোরাঁয় খাওয়ার লোক অনেক কমে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী বিনয় সাউ, রণজিৎ সিংহরা। তাঁদের দাবি, ‘‘বাজার অত্যন্ত খারাপ । সারাদিনে যেখানে ২০০ থেকে ২৫০ জন খেতে আসতেন সেখানে এখন ৫০ থেকে ৬০ জন আসছেন। এখানে তো করোনাভাইরাসের যে রকম আতঙ্ক ছড়িয়েছে তাতে এভাবে আর কিছুদিন চললে আমাদের অন্য পেশার কথা ভাবতে হবে।’’
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে পর্যটক আসা বন্ধ হওয়ায় এমনিতেই কর্মী কমেছে হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলিতে। এই পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে আরও কর্মী কমানোর কথা ভাবছেন হোটেল মালিকরা। যাঁরা আছেন তাঁরা টিভি দেখে, কাগজ পড়ে আর নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করে সময় কাটাচ্ছেন। সজল ঘোষ, প্রবাল সিংহ, সুমিত সিংহদের বেশ কয়েকজন হোটেল মালিকের কথায়, ‘‘আমরা কেউ হোটেল বন্ধ করিনি। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে বন্ধই হয়ে আছে। এভাবে যদি চলতেই থাকে তবে কর্মীদের বেতন দেব কি করে?’’ পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে জানা নেই কারও। এরমধ্যে বাজারদরও চড়া হচ্ছে। হোটেলে যাঁরা আছেন তাঁদের জন্য খাবার মজুত করছেন হোটেল মালিকরা। বিদ্যুৎ ও জলের অপচয় যাতে না হয় সেদিকেও কর্মীদের নজর রাখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এই পরিস্থিতিতেও হোটেলে কেউ থাকতে চাইলে তার বিষয়ে সঠিক খোঁজ খবর নিয়ে রাখার কথা বলা হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকেও।
বোলপুর শান্তিনিকেতন হোটেল মালিক সমিতির সম্পাদক প্রসেনজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘‘সবাই ভেবেছিলাম এবার শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবে প্রচুর পর্যটক আসবেন এবং ব্যবসা ভাল হবে , সেইমতো অনেক হোটেল মালিক প্রচুর টাকা খরচ করে নিজেদের হোটেলকে নতুন করে সাজিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের আতঙ্কের কথা মাথায় রেখে এবার বসন্ত উৎসব না হওয়ায় আমাদের অনেক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হল। সেই আতঙ্ক বাড়ছে ক্রমশ। পর্যটকহীন শান্তিনিকেতনে হোটেল ব্যবসার উপরে ভর করেই বাণিজ্য চলে। সামগ্রিকভাবে সমস্ত ব্যবসা মার খাচ্ছে এর জেরে।’’ (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy