ব্যস্ত: মাস্ক তৈরি করছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। নিজস্ব চিত্র
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ এবং স্যানিটাইজ়ারের চাহিদা বেড়েই চলেছে। আম জনতা দোকানে গিয়েও সে-সব পাচ্ছে না। চাহিদার তুলনায় বাজার চলতি নামী সংস্থাগুলি ওই সব সামগ্রী জোগান দিতে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে। সেই সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কালোবাজারি শুরু করেছেন বলে অভিযোগ। সেই কালোবাজারি রুখতে ইতিমধ্যেই সস্তায় নিজেদের হাতে তৈরি জৈব হ্যান্ডওয়াশ তৈরি করে কিছুটা হলেও পরিস্থিতির সামাল দিয়েছেন লাভপুরের জামনা নিত্য সঙ্ঘের সদস্যারা। এ বার তাঁরা সস্তায় মাস্ক এবং স্যানিটাইজ়ার তৈরি করতে শুরু করেছেন।
৩০টি সেলাই মেশিন-সহ টেলারিং ইউনিট আছে। সেই ইউনিটেই সেলাইয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ৩০ জন মহিলা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মাস্ক তৈরি করতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সরকারি দফতর থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মাস্ক তৈরির বরাত এসেছে। ফলে, নাওয়াখাওয়া ভুলে কাজে লেগে পড়েছেন ওই মহিলারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, একটি মাস্ক তৈরি করতে সেলুলার কাপড়, ইলাস্টিক, টিসুপেপার সহ প্রায় ৭-৮ টাকার উপকরণ লাগে। প্রতিদিন তাঁরা প্রায় ৩০০০ পিস মাস্ক তৈরি করছেন। বিক্রি করছেন ১০ টাকায়। এই মাস্ক হাতে পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান। লাভপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার স্বপন দাস, কীর্ণাহারের সুনীল পালেরা বলেন, ‘‘সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন জায়গায় মাস্ক বিলি করছি। কিন্তু চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২৫-৩০ টাকা দিয়েও মাস্ক কিনতে হয়েছে। জামনার মাস্ক পাওয়ায় সমস্যার অনেকটা সুরাহা হবে।’’
ওই সঙ্ঘের টেলারিং ইউনিটের সম্পাদিকা মৌসুমী পাল, শম্পা বাগদি বলেন, ‘‘কালোবাজারি রুখতেই আমরা সস্তায় মাস্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নিই। ১০ টাকায় মাস্ক বিক্রি করেও আমাদের দিনের শেষ যা লাভ থাকে, তা নেহাত কম নয়। সর্বোপরি এই পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারাটাই সব থেকে বড় পাওনা।’’
ওই নিত্যসঙ্ঘের সদস্য মামণি ঘোষ, সীমা চৌধুরীরা জানান, তাঁরা ১৩ জন মহিলা বছর তিনেক আগে সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, জৈব হ্যান্ডওয়াশ, স্যানিটাইজ়ার, কীট ও ছত্রাকনাশক তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবিলায় তাঁরা আরও ৫৭ জন মহিলাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে বর্তমানে ৭০ জন মহিলা স্যানিটাইজ়ার তৈরি করছেন। তাঁদের হিসেব অনুযায়ী, ১০০ মিলিলিটারের স্যানিটাইজ়ার তৈরি করতে গ্লিসারিন জেল, অ্যালোভেরা জেল, সার্জিক্যাল স্পিরিট, বোতল-সহ খরচ পড়ছে প্রায় ৮০ টাকা। দৈনিক প্রায় ১০০০ বোতল স্যানিটাইজ়ার তৈরি করছেন তাঁরা।
১০০ ও ২০০ মিলি বোতল স্যানিটাইজ়ার বিক্রি করছেন যথাক্রমে ১০০ ও ১৮০ টাকা দামে। ইতিমধ্যেই তাঁরা বিভিন্ন সরকারি দফতর থেকে প্রায় ২০০০ বোতল স্যানিটাইজ়ার সরবরাহের অর্ডার পেয়েছেন। ওই নিত্য সঙ্ঘের প্রোমোটার বিশ্বজিৎ পাল জানান, প্রতিদিনই বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ারের বরাত দিচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy