Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

লাঠি উঁচিয়ে দিনভর ছুট পুলিশের

‘লক-ডাউন’-এর সময় ওষুধ, মুদিখানা, আনাজ দোকান, ফল, মাছ, মাংস, পাউরুটি এবং দুধের দোকান ছাড়া বাকি সব ধরনের দোকান বন্ধ থাকার নির্দেশ রয়েছে।

তাড়া: লকডাউন না মানায় রামপুরহাটের জয়কৃষ্ণপুরে সক্রিয় পুলিশ। মঙ্গলবার। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

তাড়া: লকডাউন না মানায় রামপুরহাটের জয়কৃষ্ণপুরে সক্রিয় পুলিশ। মঙ্গলবার। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদন
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০ ০২:১৪
Share: Save:

করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় সোমবার বিকেল ৫টা থেকে রাজ্যের বিভিন্ন অংশের পাশাপাশি গোটা বীরভূমে ‘লক-ডাউন’ ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। তার পরেও অকারণ রাস্তায় ঘোরাঘুরি, আড্ডা, বাইকে চড়ে হাওয়া খাওয়া চলছিল। পুলিশ, প্রশাসন তৎপর হওয়ার পর হুঁশ ফেরে জনতার। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে এমনটা করতে হয়েছে, সেটা সোমবার বিকেলেও বোঝেননি কিছু মানুষ। মঙ্গলবার লকডাউনের দ্বিতীয় দিনও ছবিটা কার্যত একই থাকল জেলার বিভিন্ন অংশে। এটা ছুটির মেজাজে থাকার সময় নয়, মারণ ভাইরাস কোভিড-১৯ রুখতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নিজেদের গৃহবন্দি রাখা আবশ্যিক, সেটা কিছু মানুষকে বোঝাতে পুলিশকে শক্তি প্রয়োগের রাস্তায় হাঁটতে হল। কিছু লোককে কার্যত তাড়িয়ে বে়ড়াতে হল দিনভর।

‘লক-ডাউন’-এর সময় ওষুধ, মুদিখানা, আনাজ দোকান, ফল, মাছ, মাংস, পাউরুটি এবং দুধের দোকান ছাড়া বাকি সব ধরনের দোকান বন্ধ থাকার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু, গোটা জেলা জুড়ে এর বাইরেও সকাল থেকে বেশ কিছু দোকান খোলা ছিল। প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহের নামে বাজারগুলিতে ভিড় জমানো তো ছিলই। রাস্তার ধারে চায়ের দোকানে পাড়ার মোড়ে, রক, নাটমন্দির, পার্কের পাঁচিলে ক্লাবের দাওয়ায় আড্ডা জমল। অকারণ বাইকে চড়ে কেমন বনধ হল, দেখার হিড়িকও ছিল। তাঁদের বোঝায় কে, নিজের, পরিবারের ও প্রতিবেশীর সুরক্ষার জন্যই বাড়িতে থাকতে হবে। জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, "সরকারি নির্দেশ অগ্রাহ্য করায় ২২ জনকে আটক করা হয়। পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। নির্দেশ না মানলে আরও শক্ত পদক্ষেপ করবে প্রশাসন।"

মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলা সদর সিউড়িতে লক-ডাউনের আওতায় থাকা অনেক দোকান খোলা ছিল। বড়বাগান, হাটজনবাজার, মাদ্রাসা রোড বাসস্ট্যান্ড সর্বত্র বেশ কিছু মানুষকে আড্ডা মারতে দেখা দিয়েছে। পুলিশ প্রথমে সকলকে অনুরোধ করে বাড়ি ফেরার। কথায় কাজ না হওয়ায় লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করতে হয়। দু'চার ঘা খাওয়ার পর রাস্তা ফাঁকা হয়। এ ছাড়া প্রত্যেক বাইক আরোহীকে থামিয়ে জানতে চাওয়া হয় কেন তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন। সদুত্তর না দিতে পারলেই দু'এক ঘা দেওয়া হয়েছে।

একই ছবি দুবরাজপুরেও। কামারশাল মোড় থেকে পাওয়ার হাউস মোড় যাওয়ার রাস্তা হোক, পাড়ার মধ্যে পার্কের পাঁচিল। চায়ের দোকান ক্লাবের রক, লক-ডাউন সত্বেও আড্ডা জমিয়েছিলেন বেশ কিছু মানুষ। পুলিশ গিয়ে সব জায়গায় লাঠি উঁচিয়ে গিয়ে জনতাকে বাড়ি ফিরতে বাধ্য করেন। সোমবার স্কুল থেকে চাল-আলু না পেয়ে মঙ্গলবার দুবরাজপুর আব়বিএসিড উচ্চ বিদ্যালয়ে শ'খানেক পড়ুয়া ভিড় করে। পরে পুলিশ গিয়ে স্কুলে সঙ্গে যোগাযোগ করে পড়ুয়াদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।

রামপুরহাট শহরের বিভিন্ন এলাকাতেও একই ছবি লক্ষ্য করা গিয়েছিল মঙ্গলবার সকালে। এসডিপিও সৌম্যজিৎ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন বিশাল পুলিশ বাহিনী কড়া হাতে সে সব সামলান। বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে মার খেয়েছেন অনেকেই। শহরের বিভিন্ন প্রান্তেই কার্যত ছুটে বেরিয়েছে পুলিশ। পুলিশের লাঠির ঘা যাঁদের ছুঁয়েছে, লকডাউনের প্রকৃত অর্থ বুঝে বাড়ির দিকে ছুটেছেন।

লাভপুর, নানুর, ময়ূরেশ্বর, সাঁইথিয়া, খয়রাশোল মহম্মদবাজারের বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালায়় পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বের না হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। অন্য দিকে, এ দিন বিভিন্ন জায়গায় এক ধাক্কায় পোলট্রি মুরগির দাম দ্বিগুণ হয় যায়। সোমবার কেজি প্রতি (কাটা) ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সেটাই এ দিন প্রায় ১৫০ টাকা উঠেছে।

ঝাড়খণ্ড থেকে মুরারই ঢোকার সীমান্তে ব্যাপক চেকিং চালিয়েছে পুলিশ। একমাত্র রোগী ছাড়া কাউকেই জেলায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। নলহাটি পুরসভার পক্ষ থেকে লক-ডাউনে এক জন পুরবাসীর কী করণীয় তা নিয়ে প্রচার করা হয়।

বোলপুর শহরের চৌরাস্তা, চিত্রা মোড়, স্টেশন মোড়ে সকালের দিকে জনতাকে ঘরে ফেরাতে পুলিশ অভিযান চালায়। লক-ডাউন কতটা কার্যকর হচ্ছে তা দেখতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বোলপুর শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালান বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ। সঙ্গী ছিলেন বোলপুরের মহকুমাশাসক অভ্র অধিকারী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বোলপুর) শিবপ্রসাদ পাত্র সহ পুলিশ আধিকারিকেরা। পাশাপাশি লকডাউন-এ যে সমস্ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, ওষুধের দোকান, মুদিখানার দোকান, আনাজ বাজার খোলা ছিল। সেই সব ব্যবসায়ীদের হাতে মাস্ক ও স্যানিটাইজার তুলে দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE