Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

ফেরার অপেক্ষায় ভিন্ রাজ্যের শ্রমিক, রোগীরা 

পুরাতন দিল্লির গাঁধীনগর এলাকায় দর্জির কাজ করেন নলহাটি, পাইকর থানা এলাকার শ্রমিকেরা। কাজের সূত্রে কয়েকটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন তাঁরা।

 বন্দি:  দিল্লিতে একটি ঘরে আটকে পাইকরের শ্রমিকেরা। নিজস্ব চিত্র

বন্দি: দিল্লিতে একটি ঘরে আটকে পাইকরের শ্রমিকেরা। নিজস্ব চিত্র

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২০ ০২:৩১
Share: Save:

ওঁদের কেউ দিল্লিতে রেডিমেড পোশাক তৈরির কারখানায় দর্জির কাজ করেন। কেউ রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। কেউ তামিলনাড়ুর ভেলোরে চিকিৎসা করাতে গিয়েছেন। প্রত্যেকেরই বাড়ি রামপুরহাট মহকুমা এলাকায়। প্রত্যেকেই বাড়ি ফিরতে চান। কিন্তু করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বর্তমানে গোটা দেশ জুড়ে লকডাউন চলতে থাকার জন্য ওরা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। বাড়ি ফেরার জন্য ওদের কেউ কেউ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ভিডিয়ো বার্তার মাধ্যমে তাঁদের অসহায় অবস্থার কথা জানিয়েছেন। কেউ বা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছে, তাঁদের আবেদন গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে।

পুরাতন দিল্লির গাঁধীনগর এলাকায় দর্জির কাজ করেন নলহাটি, পাইকর থানা এলাকার শ্রমিকেরা। কাজের সূত্রে কয়েকটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন তাঁরা। একটি একটি বাড়িতে ৫ – ৬ জন করে মাসে ৬০০ –৭০০ টাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়। নলহাটি থানার গোঁসাইপুর, রামপুর, ভেলিয়ান, সুকরাবাদ-সহ পাইকর থানা এলাকার করমজি, কুশমোড়ের মতো গ্রাম থেকে ২০০ থেকে ৩০০ জন শ্রমিক গাঁধীনগর এলাকায় রেডিমেড জামাকাপড় তৈরির করেন। কাজ থাকলে দৈনিক ৪০০- ৫০০ টাকা আয় হয়।

নলহাটি থানার রামপুর এলাকার বাসিন্দা, কলিমউদ্দিন মোল্লা নামে এক শ্রমিক জানালেন সম্প্রতি দিল্লিতে এনআরসি নিয়ে গন্ডগোল এবং দিল্লিতে ভোটের জন্য বাজারে তেমন কাজ ছিল না। তাই জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। পরে ফেব্রুয়ারির ১৪-১৫ তারিখ নাগাদ দিল্লিতে কাজে যোগ দেন। বাড়ি থেকে ফেরার পরে কাজ ঠিকঠাকই চলছিল বলে জানান কলিমউদ্দিন। কিন্তু লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে কাজও নেই, তাঁরাও আটকে পড়েছেন।

পাইকর থানার করমজি গ্রামের যুবক রহমত শেখ, সরিফ হোসেনরা জানান, দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ার পরে বাড়িভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ঘর ছেড়ে দেওয়ার জন্য বাড়ির মালিক নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কোনও ট্রেন চলছে না। তাই কীভাবে তাঁরা বাড়ি ফিরবেন বুঝতে পারছেন না। তাঁর কথায়, “এখানে শুকনো খাবার বলতে বিস্কুট ছাড়া তেমন কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। আমরাও যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি ফিরতে চাই। কারণ পরিবারের লোকও চিন্তায় আছে।” দিল্লির ওই শ্রমিকেরা জানান, ভিডিয়ো বার্তায় তাঁরা তাঁদের অসহায় অবস্থার কথা জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের ফেরাতে আবেদন জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, প্রশাসনের পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।

অন্য দিকে ভেল্লোরে চিকিৎসা করাতে গিয়ে রামপুরহাট থানার কুশুম্বা গ্রামের ক্যানসার আক্রান্ত যুবক উজ্জ্বল মণ্ডল আটকে পড়েছেন। উজ্জ্বল জানান, ২৩ মার্চ ডাক্তার দেখানো হয়েছে। তার মধ্যেই লকডাউন শুরু হয়েছে। ১ এপ্রিল তাঁর বাড়ি ফেরার প্লেনের টিকিট কাটা ছিল। কিন্তু লকডাউনের জন্য বাড়ি ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাঁর কথায়, “আমি নিজে একজন ক্যানসার আক্রান্ত রোগী। ভাল পুষ্টিকর খাবার না পাওয়া গেলে বেঁচে থাকা মুশকিল। কিন্তু এই অবস্থায় হোটেলে ঘরবন্দি অবস্থায় থেকে ভাল খাবার পাব কোথায়? সেই কারণে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের মতো রোগীদের বাড়ি ফেরানোর জন্য প্রশাসনকে পদক্ষেপ করতে হবে।” বেঙ্গালুরুতেও আটকে পড়েছেন রামপুরহাট মহকুমা এলাকার অনেকে।

লকডাউনের জেরে রাজ্যের বাইরে আটকে পড়া জেলার বাসিন্দাদের বাড়ি ফেরানোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “লকডাউনের জন্য যাঁরা রাজ্যের বাইরে আটকে পড়েছেন তাঁদের তালিকা সংগ্রহ করে নবান্নে পাঠানো হচ্ছে। নবান্ন যা করার করবে।”

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE