আশি পেরিয়েছে তাঁর বয়স। হাঁটাচলার শক্তি কমেছে। বিপদে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে অবশ্য কমেনি এতটুকুও। সেই ইচ্ছে থেকেই লকডাউনে কর্মহীন মানুষদের পাশে দাঁড়ালেন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মন্মথনাথ চট্টোপাধ্যায়। নিজের বাড়ি থেকেই তিনি বৃহস্পতিবার ত্রাণ বিলি করলেন গ্রামের দুঃস্থ বাসিন্দাদের।
দীর্ঘদিন ইলামবাজার ব্লকের ক্ষুদ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করে এসেছেন মন্মথবাবু। অবসর নেওয়ার পরে কেটে গিয়েছে কুড়ি বছরেরও বেশি সময়। এখন বয়স ৮৪। বয়সের ভারে ইদানীং দৃষ্টিশক্তি, হাঁটাচলার শক্তিও কমে এসেছে মন্মথবাবুর। সেই অবস্থাতেই নিজের হাতে সাহায্য করেন ২০০টি পরিবারকে।
এ দিন নিজের বাড়ির উঠোনে বসেই দেবীপুর গ্রামের ২০০টি পরিবারের হাতে দু’কেজি করে চাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার জন্য নিজের পেনশনের টাকা থেকে ১০০ করে টাকা দিয়ে মোট ২০ হাজার টাকা দেন মন্মথবাবু। শুধু এই পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিলিই নয়, প্রত্যেক বছর দুর্গাপুজোর সময়ও গ্রামের গরিব দুঃস্থ মানুষদের বস্ত্র বিতরণ করেন মন্মথবাবু।
মন্মথবাবুর ছয় ছেলে মেয়ে। সকলেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে মন্মথবাবুর স্ত্রী প্রয়াত হন। এখন মেজো ও ছোট ছেলের কাছে গ্রামেই থাকেন মন্মথবাবু। তাঁর বড় ছেলে প্রবীর কর্মসূত্রে ইলামবাজারে থাকেন। মঙ্গলবার তিনি গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। সেখানেই বাবার সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে ইলামবাজার ব্লকে সকলের যৌথ উদ্যোগে করোনা নিয়ে একটি ত্রাণ সামগ্রী বিলি করার উল্লেখ করেন প্রবীর। ছেলের মুখে ত্রাণ বিলির কথা শুনে মন্মথবাবুও রাতেই ঠিক করেন দেবীপুর গ্রামের যে সমস্ত গরীব দুঃস্থ পরিবার রয়েছে সেই পরিবারগুলিকে নিজের পেনশনের টাকা থেকে সাহায্য করবেন। সেই মতো পরিবারগুলির তালিকা তৈরি করা থেকে শুরু করে খাদ্যসামগ্রী সমস্ত জোগাড় করে বাবাকে সাহায্য করেন মন্মথবাবুর দুই ছেলে সুখেন্দু ও অমলেন্দু। সেই সমস্ত খাদ্যসামগ্রী এ দিন বাড়ির উঠোনে বসেই গ্রামবাসীদের মধ্যে বিলি করেন মন্মথবাবু। ছেলেরা সাহায্য করে।
মন্মথবাবুর কথায়, ‘‘লকডাউনে বহু মানুষের রুজি-রুটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গ্রামের বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাই এ দিন সেই পরিবারগুলিকে যেটুকু পারি সাহায্য করে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’’ চাল ও খাদ্য সামগ্রী কেনার টাকা পেয়ে খুশি গ্রামবাসীরাও। স্থানীয় গ্রামবাসী সুকলা মার্ডি, অনিলা রুইদাস, লক্ষী মুর্মুরা বলেন, ‘‘এই দুঃসময়ে মাস্টারমশাইয়ের কাছ থেকে সাহায্য পেয়ে আমরা খুব খুশি। আমরা চাই আমাদের এই দুর্দিনে মাস্টারমশাইয়ের মতো সহৃদয় মানুষেরা আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy