Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Rampurhat

ত্রাণ শিবিরে দু’বেলা খাবার জোগাচ্ছেন কমল, হাসিবুল

ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ টিনের টোকা বাক্স তৈরি করেন, কেউ বা ভাঙা লোহা টিনের কারবারি।

সুরাহা: গ্রামবাসীর দেওয়া খাবার নিচ্ছেন এক শ্রমিক। নিজস্ব চিত্র

সুরাহা: গ্রামবাসীর দেওয়া খাবার নিচ্ছেন এক শ্রমিক। নিজস্ব চিত্র

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২০ ০৩:৩১
Share: Save:

তাঁরা সকলেই বাইরে কাজ করেন। কিন্তু, বাসিন্দা এ রাজ্যেরই। কেউ বীরভূম, কেউ মুর্শিদাবাদের। তেমনই পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন রামপুরহাট থানার পানিশাইল, সইপুর গ্রামের শ্রমজীবী মানুষজন। নিজেদের অসুবিধার তোয়াক্কা না করে সীমিত সাধ্যেই শ্রমিকদের দু’বেলা খাওয়াচ্ছেন গ্রামবাসী।

ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ টিনের টোকা বাক্স তৈরি করেন, কেউ বা ভাঙা লোহা টিনের কারবারি। কর্মসূত্রে এত দিন ওঁরা উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড বা বিহারে থাকেন। লকডাউন তাঁদের রুজি কেড়েছে। এই অবস্থায় বিদেশ-বিভুঁয়ে না থেকে গ্রামের বাড়িতে ফেরার জন্য কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটেছেন, কেউ বা সাইকেলের প্যাডেলে পা রেখে বিরাম মানেননি, কেউ বা মাইলের পর মাইল মোটরবাইক চালিয়েছেন। তাঁদের ক্লান্তি, অবসাদ দূর করতে এবং পথে দুর্ঘটনা এড়াতে রামপুরহাট ১ ব্লক প্রশাসন স্থানীয় বাতাসপুর গ্রাম সংলগ্ন বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে ত্রাণ শিবির খুলেছে।

কিন্তু, শিবিরে পরিযায়ীদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার না থাকার অভিযোগ উঠেছে। এই অবস্থায় পথশ্রমে ক্লান্ত, অবসাদগ্রস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করছেন পানিশাইল ও সইপুর গ্রামের বাসিন্দারা। সইপুরের যুবক কমল খান, বুলবুল খান কিংবা পানিসাইল গ্রামের হাসিবুল শেখ, রবিউল শেখরা বলছেন, ‘‘ভিন্ রাজ্য থেকে আসা এই সমস্ত শ্রমিক কোথাকার বাসিন্দা, সেটা আমরা দেখছিনা। ওঁরাও মানুষ। তাই আমরা দু’বেলা যদি খেতে পারি, ওঁরা কেন পাবেন না? এই ভাবনা থেকে ওঁদের পাশে দাঁড়িয়েছি।’’ তাঁরা জানালেন, ত্রাণ শিবির থেকে কিছুটা দূরে একটি বাড়িতে শ্রমিকদের জন্য রান্না করা হচ্ছে। যত দিন এই শিবির খোলা থাকবে, ততদিন আশ্রয় নেওয়া শ্রমিকদের খাবার জোগান তাঁরাই দেবেন বলে যুবকেরা জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার দুপুরের ত্রাণ শিবিরের ২৮ জন শ্রমিকদের জন্য গ্রামের পুকুর থেকে মাছ ধরে মাছের ঝোল, ভাত খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন কমল, হাসিবুলেরা। তাঁদের দাবি, প্রশাসন থেকে সামান্য খাবার দেওয়া হচ্ছে। অথচ যে সমস্ত শ্রমিক এখানে ঠাঁই পাচ্ছেন, তাঁদের কেউ কেউ ছ’দিন-সাত দিন খাবার পাননি। আমাদের দুই গ্রামের দিন আনি দিন খাওয়া শ্রমিকেরা, যাঁদের কেউ ভ্যান রিকশা চালক,কেউ রাজমিস্ত্রির কাজ করে, কেউ বা চাষের জমিতে কাজ করেন, তাঁরা ওঁদের কষ্ট বোঝেন।’’

ওই শিবিরে ঠাঁই নেওয়া পাইকর থানার বোনহা গ্রামের আখতার আলম বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে টিনের টোকা বাক্স তৈরির কাজ করতাম। টানা ছ’দিন সাইকেল চালিয়ে এখানে পৌঁছেছি। ভাত জোটেনি। এখানে ভাত খেতে পেয়ে ভাল লাগছে।’’ মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙার বাসিন্দা, পেশায় ভাঙা লোহা টিনের কারবারি ফিরোজ আলির কথায়, ‘‘দুমকায় কাজ করতাম। লকডাউনে আটকে পড়ে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছি। এখানে ক্লান্ত হয়ে ঠাঁই নিয়ে দু’বেলা ভাত-মাছ- তরকারি খেতে পেয়ে যেন প্রাণ পেয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rampurhat Migrant Workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE