ফের রাজ্য পুলিশের তদন্তে ক্ষোভ প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট। যার পরিণতিতে এ রাজ্যের আরও একটি মামলার ভার গেল সিবিআইয়ের হাতে।
বীরভূমের কাঁকরতলা থানার এক তরুণীর অপহরণের মামলায় মঙ্গলবার এই নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চ। মেয়েটির পরিবারের তরফে আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত সেপ্টেম্বর থেকে ওই তরুণী নিখোঁজ। অপহরণের অভিযোগ দায়ের হলেও পুলিশ জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁকে উদ্ধার করতে পারেনি। শেষমেশ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে জানুয়ারি মাসে তার বাবা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সেই মামলাতেই মেয়েটিকে উদ্ধার করতে হাইকোর্ট এ দিন সিবিআই-কে তদন্তের ভার দিয়েছে।’’
কাঁকরতলার হজরতপুরের বাসিন্দা সতেরো বছরের ওই তরুণী গত ২৩ সেপ্টেম্বর আসানসোল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিখোঁজ। তাঁর বাবা আসানসোল (দক্ষিণ) থানায় গিয়ে জানান, তিনি মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আসানসোলে ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলেন। মেয়েকে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড় করিয়ে তিনি শৌচাগারে যান। ফিরে দেখেন, মেয়ে নেই। খোঁজাখুঁজির পরে গত ৫ অক্টোবর তরুণীর বাবা ওই থানাতেই অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর দাবি, মেয়েকে বর্ধমানের অন্ডালের দুই বাসিন্দা অপহরণ করেছে। কিন্তু তার পরে ছ’মাস পেরিয়ে গেলেও তরুণীর হদিস পাওয়া যায়নি।
তদন্তে পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য না করে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ হাতে পাইনি। পেলে এ নিয়ে বিশদে বলতে পারব।’’
আইনজীবীর দাবি, মেয়েটির পরিবার হাইকোর্টে মামলা করার পরে, জনৈক মানস মল্লিক তাঁদের বাড়িতে ফোনে হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। সেই হুমকি-ফোনের কথা হাইকোর্টে জানানো হয়। অপহরণের তদন্ত নিয়ে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চ পুলিশকে হলফনামা দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
উদয়শঙ্করবাবুর দাবি, ‘‘পুলিশ এ দিন হলফনামা দাখিল করে জানায় তারা তদন্তে জেনেছে, যে নম্বর থেকে হুমকি-ফোন এসেছিল তা বর্ধমানের উদয়পল্লির বাসিন্দা মানস মল্লিকের। কিন্তু সেই ব্যক্তি অসমে রয়েছে বলে জানা গেলেও তাকে ধরা যায়নি।’’ তা জেনে ডিভিশন বেঞ্চ পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে জানায়, কোনও তরুণী এক রাতের জন্যও এ ভাবে বাড়ির বাইরে থাকলে, তা নিরাপদ নয়। এ ক্ষেত্রে এত দিন কেটে গেলেও পুলিশ মেয়েটির হদিস পায়নি। তার পরেই সিবিআই-কে তরুণীকে উদ্ধার করার নির্দেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।
মাসখানেক আগেই রাজ্য পুলিশের তদন্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে নদিয়ার নাকাশিপাড়ার গোয়ালডাঙা গ্রামের এক কিশোরীর বছর দু’য়েক ধরে নিখোঁজ থাকার মামলার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। কলকাতার এক কিশোরীর বহরমপুর থেকে নিখোঁজ হওয়ার অন্য একটি মামলাও এখন সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে বিচারাধীন।
কাঁকরতলার তরুণীর বাবা-মা এ দিন ফোনে বলেন, ‘‘মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে বর্ধমান ও বীরভূম জেলার পুলিশ অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেছে। মন ভেঙে গিয়েছিল। হাল প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাইকোর্টের নির্দেশে আবার ভরসা পাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy