Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বৃদ্ধাকে বাড়ি ফেরাতে নির্দেশ কোর্টের

ছেলে ও বৌমার অত্যাচারে চার মাস ধরে বাড়ি ছাড়া বৃদ্ধার পাশে পুলিশকে দাঁড়াতে বলল কলকাতা হাইকোর্ট।

বন্দনা চট্টরাজ। নিজস্ব চিত্র

বন্দনা চট্টরাজ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:২০
Share: Save:

ছেলে ও বৌমার অত্যাচারে চার মাস ধরে বাড়ি ছাড়া বৃদ্ধার পাশে পুলিশকে দাঁড়াতে বলল কলকাতা হাইকোর্ট। পুরুলিয়া শহরের কাপড়গলি এলাকার বাসিন্দা বন্দনা চট্টরাজকে তাঁর বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মানতা পুলিশের ডিএসপি-কে (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) নির্দেশ দিয়েছেন।

পুরুলিয়া শহরের কাপড়গলি এলাকার বাসিন্দা বন্দনাদেবীর স্বামী বছর চারেক আগে মারা যান। তারপরেই তিনি এক মাত্র ছেলের বিয়ে দেন। কিন্তু, এরপরেই সংসারে অশান্তি শুরু হয়। শুক্রবার পুরুলিয়া শহরের আমডিহা এলাকায় মেয়ের বাড়িতে বসে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে বৌমা আমার সঙ্গে অশান্তি শুরু করে। পরে ঠিক হয়ে যাবে ভেবে, প্রথম দিকে সব মেনে নিচ্ছিলাম। কিন্তু, যত দিন যেতে থাকে, আমার উপরে নির্যাতন বাড়তে থাকে। চাকরের মতো খাটাতে থাকে। বাজার-হাট করা, রেশন আনা থেকে বাড়িতে কাজের লোক না এলে নানা ফাইফরমাস খাটাত আমাকে। ছেলের চায়ের দোকানেও বসতাম। কাজ না করতে পারলেই জুটত বৌমার গঞ্জনা। এরপরে মারধর শুরু হল।’’

অবস্থা চরমে ওঠে গত জুন মাসে। বন্দনাদেবীর অভিযোগ, ‘‘এক রাতে ছেলে ও বৌমা দু’জনে আমাকে মারধর করতে শুরু করে। ভয়ে বাড়ির নীচের তলার একটি বাথরুমে ঢুকে দরজা আটকে সারা রাত কাটাই। সকালে ছিটকিনি খুলে পালিয়ে বাঁচি।’’ সে দিন থেকে তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। গিয়ে ওঠেন মেয়ের কাছে। বন্দনাদেবীর মেয়ে সুদেষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছোটখাটো ঘটনা নিয়ে ভাই ও তার স্ত্রী মায়ের উপরে যা নির্যাতন করেছে ভাবা যায় না।’’

ইতিমধ্যে বন্দনাদেবী পুলিশের দ্বারস্থ হন। পুলিশ সূত্রের খবর, বন্দনাদেবীর পুত্রবধূও পাল্টা অভিযোগ করেন। দু’টি মামলার তদন্ত করে পুরুলিয়া আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়ার হয়েছে। এরই মধ্যে ৩০ অক্টোবর তিনি হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। তাঁর আইনজীবী সৌগত মিত্র জানান, বৃদ্ধার আবেদনের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিচারপতি বন্দনাদেবীকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরুলিয়া জেলা পুলিশের ডিএসপিকে (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁর নিরাপত্তাও সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ দিন হাইকোর্টের নির্দেশ শুনে বন্দনাদেবী কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি তো বাড়িতেই ফিরতে চাই। কিন্তু আর অত্যাচার হবে না তো?’’ তাঁর মেয়েও বলেন, ‘‘মা সম্মান নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলে, সেটা সব থেকে ভাল হবে।’’

বৃদ্ধার ছেলে আকাশ চট্টরাজ বলেন, ‘‘সংসারে কখনও কখনও ঝামেলা হয়। কিন্তু আমরা মাকে মারধর করব কেন? স্ত্রী একটি শপিং মলে কাজ করে। সে জন্য মাকে রান্নাবান্না করতে হয়। তবে মা চাইলে আলাদাও থাকতে পারে। আমাদের সঙ্গেও থাকতে পারে। বিজয়ার দিন মাকে বাড়ি ফেরাতে গিয়েছিলাম।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ হাতে পাইনি। এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Court Old woman harrassed High Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE