গুনুটিয়া সেতুর কাজ। নিজস্ব চিত্র
প্রচারে হাতিয়ার করার জন্য ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের মুখে বামেরা দুটি সেতুর শিলান্যাস করেছিল। সেই সেতু দুটিই এখন শাসকদলের প্রচারের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। প্রচারে সেতু নিয়ে তরজাও শুরু হয়েছে শাসক ও বামেদের মধ্যে। একদল বলছে, পুরনো উন্নয়নকেই নতুন বলেই চালানোর চেষ্টা করছে অন্যেরা। আর একদলের দাবি, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে।
ঘটনা হল, ময়ূরেশ্বর থানার আমড়া এবং লাভপুর থানার গুনুটিয়ার মাঝে বয়ে গিয়েছে ময়ূরাক্ষী নদী। দুই পাড়ের বিস্তীর্ন অঞ্চলের মানুষজনকে জীবন জীবিকার তাগিদে বহুবার নদী পারাপার করতে হয়। কিন্তু নদী পারাপারের মাধ্যম বলতে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের তৈরি বাঁশের সাঁকো এবং নৌকা। তাই এলাকার বাসিন্দাদের নদী পারাপার করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। লাভপুরের লাঘাটায় কুঁয়ে নদী পারাপার করতেও বর্ষাকালে একই দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। কুঁয়ে নদী লাঘাটায় লাভপুরকে কার্যত দ্বিখণ্ডিত করে বয়ে গিয়েছে। সেখানে একটি সেতু থাকলেও তা বর্ষাকালে কোনও কাজেই আসে না বলে অভিযোগ।
কারণ, সেতুটি এতই নিচু যে প্রায় প্রতিবছর বর্ষাকালে নদীতে একটু জল বাড়লেই তা তলিয়ে যায়। তখন দুর্ভোগ চরমে ওঠে। কারণ ওই সেতুর উপর দিয়েই গিয়েছে সিউড়ি-কাটোয়া সড়ক। সেতু তলিয়ে যাওয়ায় দিনের পর দিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে দুই অঞ্চল। তখন দুই পাড়ের বাসিন্দা তথা ওই রুটের যাত্রীদের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করতে হয় তাঁদের। ওইভাবে নদী পারাপার করতে গিয়ে বহুবার নৌকাডুবির ঘটনাও ঘটে। তাই এলাকার বাসিন্দাদের ওই দুই নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, সেই দাবি মেনেই ২০১০ সালে সেতু দুটির শিলান্যাস করেন তদানীন্তন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী। গুনুটিয়ার সেতু নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হয় ১৩ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। কাজ শুরুও হয়। সেতু তৈরির জন্য সময়সীমা ধার্য হয় দু-বছর। কিন্তু দুই পারের রাস্তার সংস্থান না করে কাজ শুরু করায় আইনি জটিলতায় থমকে যায় সেতু নির্মাণের উদ্যোগ। অন্যদিকে লাঘাটায় সেতু নির্মাণের জন্য কোন আর্থিক সংস্থান না থাকায় কাজ শুরুই হয়নি। বর্তমান সরকার গুনুটিয়ায় জট কাটিয়ে ফের পুরোদমে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। লাঘাটাতেও সেতু নির্মাণ শুরু হয়েছে। লাভপুর এবং ময়ূরেশ্বর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে সেতু দুটির কথা তুলে ধরছেন শাসক দলের নেতারা। সেতু নির্মাণের কারণে স্থানীয় জনমানসেও বইছে খুশীর হাওয়া। লাভপুরের আবাডাঙার সুনীল সুত্রধর, ময়ূরেশ্বরের রামনগরের আশিস মণ্ডলেরা জানান, নির্বাচনী প্রচার নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। রুটি-রুজি থেকে কেউ অসুস্থ হলে সেতু দুটি আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যা আমাদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ দূর করবে।
জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘বামেদের মতো আমরা অর্থের সংস্থান না করেই নির্বাচনী চমকের জন্য কোন কিছুর শিলান্যাস করে দিই না। যা করি সব দিক খতিয়ে দেখেই করি। সেটাই প্রচারে তুলে ধরা হচ্ছে।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা তথা বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম অবশ্য শাসকদলকে কৃতিত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘কোনও রাজনৈতিক চমক নয়, আর্থিক সংস্থান করেই সেতু দুটির অনুমোদন করে বাম সরকার। কাজও শুরু হয়েছিল। তাই বর্তমান সরকার নতুন কিছু করছে না। রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে আমাদের প্রকল্পকেই নিজেদের বলে চালানোর চেষ্টা করছে শুধু।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy