Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দাপট না দেখিয়েই উধাও ফণী

ফণী-র তাণ্ডবের যে রূপ ওড়িশা শুক্রবার দেখেছিল, শনিবার রাতে এ রাজ্যে আছড়ে পড়লেও ঘূর্ণিঝড়ের সেই রুদ্র রূপ একেবারেই ছিল না।

 চিহ্ন: ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙেছে শান্তিনিকেতনের সোনাঝুড়ি হাটের গাছ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

চিহ্ন: ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙেছে শান্তিনিকেতনের সোনাঝুড়ি হাটের গাছ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৯ ০৩:৪৫
Share: Save:

তখন রাত সাড়ে সাতটা। পঞ্চায়েতের তরফে মাইকে ঘোষণা হচ্ছিল....‘প্রবল ঝড় আসছে। কাঁচা বাড়িতে থাকলে তাড়াতাড়ি কাছের প্রাথমিক স্কুল, কমিউনিটি হল, মহিলাদের সঙ্ঘ সমবায়ের ঘরে সরে আসুন....।’

তাঁদের বাড়িটা একেবারেই জীর্ণ। প্রবল ঝড় আসছে লোকমুখে একথা শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন দুবরাজপুরের হাজরাপুর গ্রামের বুড়ো দাস ও চম্পা দাস। সেই আতঙ্ক কয়েকগুন বেড়ে যায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ পঞ্চায়েতের তরফে মাইকে ঘোষণা শুনে। কাল বিলম্ব না করে চম্পারা এক কাপড়েই সপরিবার চলে গিয়েছিলেন গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে। গিয়ে দেখেন সেখানে উপস্থিত লাখাই অঙ্কুর, শম্পা চট্টোপাধ্যায়ের মতো বহু মানুষ। যাঁদের বাড়ি দুর্বল। বৃষ্টি সারারাত চলেছে। তবে যতটা সতর্কতার কথা ঘোষণা হয়েছিল ঝড় তেমনটা হয়নি। ঘর ছেড়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিলেও নিজেদের ঘর পূর্বাবস্থায় ফিরে পেয়েছে লাখাই, শম্পারা।

ফণী-র তাণ্ডবের যে রূপ ওড়িশা শুক্রবার দেখেছিল, শনিবার রাতে এ রাজ্যে আছড়ে পড়লেও ঘূর্ণিঝড়ের সেই রুদ্র রূপ একেবারেই ছিল না। ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা যতটুকু করা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেকটাই কম প্রভাব পড়েছে এ রাজ্যে। বীরভূমে সেটা আরও কম। কিন্তু সতর্কতা ছিল জেলা জুড়েই। কলকাতার পাশ কাটিয়ে হুগলির আরামবাগ, বর্ধমানের কাটোয়া হয়ে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ ছুঁয়ে বাংলাদেশ হবে ফণীর গতিপথ এই খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের তরফে বীরভূমে সব বিডিওর কাছে একটি বার্তা যায়। জেলার একধিক বিডিও জানান, সব ধরনের সতর্কতা নেওয়া ছিল। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ জেলাশাসকের কাছ থেকে আসা বার্তায় বলা ছিল ‘যাদের পাকা বাড়ি নেই বা বাড়ি দুর্বল তাঁদের নিরাপদ স্থানে সরাতে হবে বা তৈরি থাকতে হবে সরে যাওয়ার জন্য। প্রতিটি পঞ্চায়েতকে সতর্ক করুন।’

বিডিওদের কাছ থেকে বার্তা পেয়ে গোটা বীরভূমের সবকটি পঞ্চায়েতেই তৎপরতা শুরু হয়। দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তথা ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা বাসিন্দাদের সতর্ক করতে মাইকে ঘোষণা করেছিলাম। তাতেই ভয়ে এলাকার অসংখ্য মানুষ বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন।’’ চম্পা, লখাই, শম্পারা বলেন, ‘‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে কিছু হয়নি। কিন্তু সত্যিই যদি খুব ঝড় হত, তাহলে তো আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকত না। প্রশাসন অতি সতর্ক ছিল বলেই আমরাও নিরাপত্তা পেয়েছি।’’

সিউড়ি-১ ব্লকের মল্লিকপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুকুমার দে বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সদস্যদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল। মাইকিং করা হয়েছিল। আমাদের এলাকার লোকজন বাড়ি ছাড়েনি ঠিকই, তবে এলাকার দুটি প্রাথমিক স্কুল, ২টি উচ্চবিদ্যালয়ের চাবি নিয়ে রাখা হয়েছিল। ভাগ্য ভাল কিছু হয়নি।’’

প্রশাসন সূত্রে খবর, ঝড় তেমন না হলেও জেলায় বেশ কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Fani ফণী Birbhum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE