Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাঁধের ‘স্বাদ’ মণ্ডপে মেটাচ্ছেন সেচকর্মীরা

মশানজোড় বাঁধে নীল-সাদা রং করা যায়নি তো কী হয়েছে? বাঁধের আদলে তৈরি দুর্গা পুজোর মণ্ডপ হবে নীল-সাদা রঙেই।

অর্ধসমাপ্ত: মাঝপথেই থমকে রঙের কাজ। মশানজোড় বাঁধে। ফাইল চিত্র

অর্ধসমাপ্ত: মাঝপথেই থমকে রঙের কাজ। মশানজোড় বাঁধে। ফাইল চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৭:৩০
Share: Save:

এ যেন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো!

মশানজোড় বাঁধে নীল-সাদা রং করা যায়নি তো কী হয়েছে? বাঁধের আদলে তৈরি দুর্গা পুজোর মণ্ডপ হবে নীল-সাদা রঙেই। সিউড়ির সেচ কলোনির মাঠে এই পুজোর উদ্যোক্তা সিউড়ি ইরিগেশন কলোনি পুজো কমিটি। এই কমিটির প্রত্যেক সদস্যই সেচ দফতরের সঙ্গে যুক্ত।

স্থানীয়দের কথায় ঝাড়খণ্ডে বাঁধ রং করতে না পারার আক্ষেপ থেকেই এই ধরনের মণ্ডপ তৈরির কথা ভেবেছেন উদ্যোক্তারা। অবশ্য সে কথা মানতে নারাজ পুজো কমিটির সদস্যরা। কমিটির সম্পাদক পরিতোষ শিকদার, সহ-সম্পাদক তপন লেট ও কোষাধ্যক্ষ দেবজিৎ ঘোষেরা বলছেন, বিতর্কের কথা ভেবে কিছু করি নি। এখানে সকলেই যেহেতু এই দফতরের সঙ্গে যুক্ত তাই পুজো মণ্ডপের থিম সেচ বিষয়ক কিছু হবে, সেটাই স্বভাবিক। গতবছর থেকেই মশানজোড় বাঁধের আদলে মণ্ডপের ভাবনা ছিল। গতবার হয় নি, এবার হল। ময়ূরাক্ষী ক্যানাল সেচের এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (বীরভূম) তথা পুজোকমিটির উপদেষ্টা কিংশুক মণ্ডল বলেন, ‘‘মণ্ডপ গড়ার ভাবনায় আমার কোনও ভূমিকা নেই। প্রসঙ্গ উঠতেই পারে। তবে এটা দুর্গাপুজোর মণ্ডপ হিসাবে ধরলেই ভাল।’’ তবে মুখে স্বীকার না করলেও পরোক্ষে তাঁরাও মানছেন মণ্ডপ দেখে বাঁধের রং-বিতর্কের প্রসঙ্গ উঠবে।

মশানজোড় বাঁধের গায়ে ‘নীল’-এর ছোঁয়া কিছুতেই নয়। বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এ রাজ্যের সেচ দফতরকে এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে ঝড়খণ্ডের শাসক দল বিজেপি। রং বদলের অনুরোধ করা হয়েছে স্থানীয় দুমকা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও। পুজো কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘রং নিয়ে সেই বিতর্কের মাঝেই এবার নীল-সাদা রঙে সেজে উঠছে মাশানজোড় বাঁধ। কোনও বাধা ছাড়াই পুজোর আগেই শেষ হয়ে যাবে কাজ।’’

দুমকার কাছে মযূরাক্ষী নদীর উপর স্বাধীনতার পর ১৯৫৫সালে নির্মিত হয়েছে মশানজোড় বাঁধ। ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলার উপর অবস্থিত হলেও তা আগে বিহার সরকারের হাতে ছিল। অতীত চুক্তি মোতাবেক প্রশাসনিক ভাবে বাংলার সেচ দফতরই তার দেখভাল করে। বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে জল ছাড়া সবই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ দফতরের অধীনেই রয়েছে। সেচ দফতর সূত্রের খবর, ১কোটি ২০লক্ষ টাকা ব্যয়ে ওই বাঁধকে আকাশি ও স্যাটিন নীলে রাঙিয়ে তোলার কাজে হাত দেওয়া হয়েছিল। কিছুটা কাজ এগোতেই আপত্তি তোলে পড়শি রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। আপত্তি ছিল নীল রঙে। তাঁদের বক্তব্য ছিল নীল রং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতীক। ঝাড়খণ্ডে এমন খবরদারি বরদাস্ত করা হবে না। তারপর থেকেই বন্ধ রয়েছে কাজ।

এর পর দুটি রাজ্যের প্রশাসনিক স্তরের বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সমাধান এখনও অধরা। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে মশানজোড়ে সরকারি অতিথি নিবাসের বুকিংও বন্ধ রাখা হয়েছে। এই সময় তাই মণ্ডপে মশানজোড় বাঁধের আদল এবং তাতে নীল রং অন্য বার্তা দেয় বলে অভিমত স্থানীয়দের।

তবে সম্পূর্ণ বাঁধ অবশ্য নীল-সাদা রঙে নয়, বাঁধের দরজার রং লাল। পুজো কমিটির কথায়, ২১টি গেট রয়েছে ওই বাঁধে সেটার অনুপুঙ্খ যতটা সম্ভব তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। ওই গেটগুলির রং আদতে কালো। কিন্তু পুজোয় কালো অশুভ বলে প্রাইমার(রেজ অক্সাইড)এর রং রাখা হয়েছে। থাকছে জলবিদ্যুৎ তৈরির ঘরটাও। বাঁধের একটি দরজা খোলা। সেটাই প্রতিমা দর্শনের প্রবেশপথ। থাকছে সাবেকি প্রতিমা। উদ্যোক্তাদের দাবি, রং-বিতর্ক হোক বা বাঁধের আদল এবার পুজোয় দর্শক সমাগম হবে সেচ কলোনির মাঠে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dam Massanjore Pandal Puja Workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE