Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ভেঙে পড়া রেলিং সেজেছে নীল-সাদায়

কাটা হয়েছে আগাছা। আর বেরিয়ে এসেছে লোহার রড। নিট ফল, এখনও হরিণমুড়ির সেতু পেরোতে গিয়ে বুক কেঁপে উঠছে চালকদের।

সঙ্কীর্ণ: বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রাস্তায় রাধানগর ও জয়রামপুর গ্রামের মাঝে এমনই দুরবস্থা সেতুর। ছবি:শুভ্র মিত্র

সঙ্কীর্ণ: বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রাস্তায় রাধানগর ও জয়রামপুর গ্রামের মাঝে এমনই দুরবস্থা সেতুর। ছবি:শুভ্র মিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৮:০০
Share: Save:

ক’দিন আগেও রাস্তার দু’পাশ ভরা ছিল আগাছায়। মাঝেরহাটে সেতু বিপর্যয়ের পরে টনক কিছুটা নড়েছে। কাটা হয়েছে আগাছা। আর বেরিয়ে এসেছে লোহার রড। নিট ফল, এখনও হরিণমুড়ির সেতু পেরোতে গিয়ে বুক কেঁপে উঠছে চালকদের। বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রাস্তায় রাধানগর ও জয়রামপুর গ্রামের মাঝে এমনই দুরবস্থা খালের উপরে থাকা সঙ্কীর্ণ ও দুর্বল সেতুটির।

তবে পূর্ত দফতর থেকে পুরনো সেতুটি ভেঙে নতুন করে তৈরির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বিষ্ণুপুর শহর থেকে এগারো কিলোমিটার দূরে ওই সেতু ঘুম ছুটিয়েছে স্থানীয় ভড়া, লায়েকবাঁধ, রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের জয়রামপুর, মেটেপাতন, তিলাশোল, বলরামপুর, রাধানগর, ভড়া গ্রামের মতো দশটি গ্রামের বাসিন্দাদের। ওই সব এলাকার দৈনিক কয়েক হাজার মানুষ সেতু দিয়ে যাতায়াত করেন।

রাধানগর গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা গোপাল চট্টোপাধ্যায়, মদন শর্মা জানান, জঙ্গলের বয়ে যাওয়া জল শালবাঁধ ধরে হরিণমুড়ি খাল হয়ে দ্বারকেশ্বর নদে গিয়ে মেশে। আশাপাশের বিস্তীর্ণ জমির সেচ হয় ওই খালের জলেই। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘এমনিতেই সেতুর বয়স কম নয়। সংস্কারেরর অভাবে দু’পাশের গার্ডওয়াল ভেঙে পড়েছে। সেতুর তলার অবস্থা কেমন কে জানে? তার উপরে এত দিন আগাছায় ঢাকা থাকায় আরও জীর্ণ অবস্থা হয়েছে। যে কোনও দিন ওই সেতু ভেঙে পড়লে বড়সড় বিপর্যয় ঘটে যাবে।

রাধানগর গ্রামীণ হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স চালক পিনাকী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাস্তা ১৮ ফুট চওড়া। কিন্তু, সেতু আট ফুটের। তার উপর ইংরেজি ‘এস’ হরফের মতো বাঁকা রাস্তার মধ্যে আলোহীন ওই সেতু দূর থেকে রাতের বেলায় ঠাহর করাও মুশকিল। স্থানীয়েরা রাস্তা চেনেন। কিন্তু বাইরের অনেকেও গাড়ি নিয়ে সেতু পার হন। অসাবধান হলেই দুর্ঘটনা অবধারিত।’’

দুর্ঘটনা যে হয়নি তা নয়। জয়রামপুরের বিষ্ণুপদ ঘোষ বলেন, ‘‘৯ জুন রাতে এই গ্রামের কৃষ্ণপদ ভুইয়া আর তাঁর দুই নাবালক ছেলেমেয়ে শিবম ও প্রিয়াঙ্কা ট্রাকের ধাক্কায় এই সেতুর মুখেই প্রাণ হারান। আহত হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিলেন কৃষ্ণপদর স্ত্রী ও আর এক মেয়ে।’’ তিনি জানান, দুর্ঘটনার পরে গ্রামবাসী সেতু সংস্কারের দাবি তুলে আন্দোলনও করে। প্রতিশ্রুতিও আসে। কিন্তু, সংস্কার হয়নি। এমনকী সেতুর মুখে সর্তকীকরণ বোর্ডও লাগানো হয়নি বলে তাঁর আক্ষেপ।

বাসিন্দারা জানান, নীল-সাদা রং যথারীতি ভগ্নপ্রায় রেলিংয়ে দেওয়া হয়েছে। তার বেশি সংস্কার কিছু হয় না। এমনকী, এত দিন সেতুর দু’পাশ ঢেকে ফেলা ঝোপাঝাড় কাটাতেও উদ্যোগী হয়নি প্রশাসন। মাঝেরহাট সেচু ভাঙার পরে অবশেষে আগাছা সাফ করা হয়েছে। কিন্তু, বাকি সংস্কার আর হয়নি। অথচ, ওই সেতু দিয়েই প্রশাসনের কর্তা ও নেতারা যাতায়াত করেন।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা গেল, সেতুতে ওঠার দুই প্রান্তের রাস্তায় তিনটি করে হাম্প রয়েছে। রেলিংয়ের বেশ কয়েকটি পিলার বেঁকে গিয়ে খালের দিকে ঝুলছে। সেতু দিয়েই যাচ্ছে বাস, মালবাহী ট্রাকও। বাঁকুড়া জেলা মোটর মজদুর সঙ্ঘের সম্পাদক সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘৪০টি বাস ওই রুটে নিত্য যাতায়াত করছে। আলোহীন ওই সেতু দিয়ে সন্ধ্যাতেও দু’টি বাস চলে। ড্রাইভাররা রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী নিয়ে যান।’’

পূর্ত বিভাগ (রোড) বিষ্ণুপুর হাইওয়ে সাব ডিভিসনের সহকারী বাস্তুকার নরেন্দ্রনাথ সোরেনের আশ্বাস, ‘‘পুরনো সেতু ভেঙে নতুন তৈরি করা হবে। পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০ মিটার দীর্ঘ, ১৪ মিটার চওড়া চার লেনের রাস্তা তৈরি করা হবে। সে জন্য মাটি পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। দরপত্র হয়ে গিয়েছে।’’ তিনি জানান, অক্টোবর মাসে কাজ শুরু হবে। এক বছর সময় বাঁধা হয়েছে। মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই সেতুতে সৌর আলো লাগানো যায় কি না, দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bridge Colour Blue and White
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE