Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ডায়রিয়া দুই গ্রামে, ৩৪ জন অসুস্থ

বর্ষা পড়তেই ডায়রিয়ার প্রকোপ শুরু হয়েছে পুরুলিয়া জেলায়। ইতিমধ্যেই পুরুলিয়া ২ ব্লকের পাথরডি ও হুড়া ব্লকের কুদলুং গ্রামে ডায়রিয়া ছড়িয়েছে। দু’টি গ্রাম থেকেই আক্রান্তদের পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

হুড়ার কুদলুং গ্রামের পুকুরে ছড়ানো হচ্ছে ব্লিচিং। নিজস্ব চিত্র

হুড়ার কুদলুং গ্রামের পুকুরে ছড়ানো হচ্ছে ব্লিচিং। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৮ ০১:২১
Share: Save:

বর্ষা পড়তেই ডায়রিয়ার প্রকোপ শুরু হয়েছে পুরুলিয়া জেলায়। ইতিমধ্যেই পুরুলিয়া ২ ব্লকের পাথরডি ও হুড়া ব্লকের কুদলুং গ্রামে ডায়রিয়া ছড়িয়েছে। দু’টি গ্রাম থেকেই আক্রান্তদের পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পেটের রোগ ছড়ানোর খবর পেয়ে ইতিমধ্যেই দু’টি গ্রামেই মেডিক্যাল টিম ও প্রশাসনিক আধিকারিকেরা সরেজমিনে গিয়েছেন। মলের নমুনা ও বাসিন্দারা যে জল পান করেন, তার নমুনাও পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

শনিবার দু’টি গ্রামেই যান জেলা স্বাস্থ্য দফতরের মহামারি বিশেষজ্ঞ সতীনাথ ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘‘পাথরডি গ্রামের নামোপাড়ার বাসিন্দারা কুয়োর জল পান করেন বলে জানিয়েছেন। সেই জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া পুকুরের জলও তাঁরা ব্যবহার করেন। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, এই দু’টি জায়গার কোনও একটি উৎস থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে।’’ তিনি জানান, কুয়ো এবং পুকুরে ব্লিচিং, চুন ইত্যাদি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পানীয় জলে হ্যালোজেন ট্যাবলেট ব্যবহার করার জন্য দেওয়া হয়েছে। প্রতি লিটার জলে একটি ট্যাবলেট ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। একই ভাবে হুড়ার কুদলুং গ্রামেও পুকুরে ব্লিচিং দেওয়া হয়েছে ও হ্যালোজেন ট্যাবলেটও দেওয়া হয়েছে। দু’টি গ্রাম থেকেই পানীয় জলের ও মলের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া ২ ব্লকের পাথরডি গ্রামের নামোপাড়ার বাসিন্দারা একটি কুয়োর জল পান করেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় নলকূপ থাকলেও তা থেকে জল পড়ে না। তাই দীর্ঘদিন ধরেই কুয়োক জল তাঁরা পান করছেন। স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিদের ধারণা, কুয়োর জল থেকেই ডায়রিয়া ছড়িয়েছে। দিন দুয়েক আগে থেকে পেটের গোলমাল শুরু হয়। বাসিন্দাদের কথায়, পেটে ব্যথা, বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এই এলাকার বাসিন্দারা এক এক করে ১৮ জন পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অনেকেই ফিরে গিয়েছেন। শনিবার পাথরডির তিন জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

একই অবস্থা হুড়া ব্লকের কুদলুং গ্রামেও। এই গ্রাম থেকেও পেট ব্যথা, বমি ও পাতলা পায়খানার উপসর্গ নিয়ে ইতিমধ্যেই ১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অনেকে ছাড়া পাওয়ার পরে এ দিন ওই গ্রামের আট জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। প্রশাসনিক আধিকারিকদের অবশ্য গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাঁরা নলকূপের জল পান করেন। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা শনিবার গ্রামে গিয়ে দেখেন, নলকূপের পাশেই নোংরা জল জমে রয়েছে। সেই জলই নীচে চলে যাচ্ছে।

বিডিও (পুরুলিয়া ২) বীথি প্রামাণিক জানান, পাথরডি গ্রামে গাড়িতে পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডায়রিয়ার সমস্যা এখন নিয়ন্ত্রণে। ওই গ্রামের নামোপাড়ায় মাটির তলায় পাথরের স্তর থাকায় নলকূপ খননের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে বলে শুনেছি। কী ভাবে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা যায়, দেখা হচ্ছে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।

পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই গ্রামের পাশ দিয়েই নলবাহিত পানীয় জলের প্রকল্প রয়েছে। মাটির নীচে পাথরের স্তর রয়েছে বলে এই গ্রামে নলবাহিত পানীয় জলের প্রকল্প গড়ার বিষয়টি আমি ইতিমধ্যেই একাধিকবার প্রশাসনিক স্তরে দাবি জানিয়েছি।’’ কিন্তু সেই দাবি ফেলে রাখা হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ।

শনিবার বেঙ্গল কেমিস্ট ও ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও পাথরডি গ্রামে গিয়ে আক্রান্তদের বাড়িতে ওআরএসের প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়েছে বলে সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে। সংগঠনের পক্ষে শুভাশিস দাশগুপ্ত জানান, তাঁদের দলে পুরুলিয়া পুরসভার উপপুরপ্রধান বৈদ্যনাথ মণ্ডলও ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Diarrhea Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE