Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

কাগজের তৈরি কলম বানাচ্ছেন ওঁরা, ব্যবহারের পর ফেলে দিলেই গাছ!

পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকে স্বনির্ভর দলের সদস্য আর কন্যাশ্রীরা বানাচ্ছেন এমন আজব কলম। এনআরএলএম-এ (ন্যাশনাল রুলাল লাইভলিহুডস মিশন) ব্লকের প্রোজেক্ট ম্যানেজার মৌমিতা মাহাতো জানান, এক বার পুরুলিয়ার শিল্প মেলায় গিয়ে এই কলম দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।

নিপুণ: পাড়ায় কাজে ব্যস্ত স্বনির্ভর দলের সদস্য ও কন্যাশ্রীরা। (ইনসেটে) সেই কলম। ছবি: সঙ্গীত নাগ

নিপুণ: পাড়ায় কাজে ব্যস্ত স্বনির্ভর দলের সদস্য ও কন্যাশ্রীরা। (ইনসেটে) সেই কলম। ছবি: সঙ্গীত নাগ

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
পাড়া শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:০০
Share: Save:

কাগজের কলম। পরিবেশের বন্ধু।

কিন্তু গাছ কেটে তৈরি করা কাগজ দিয়ে পরিবেশের কোন উপকারটা হবে? ‘‘হিসেবটা অত সাদামাটা নয়,’’ বলছিলেন মৌমিতা, ‘‘প্রত্যেকটা কলমের মধ্যে একটা করে বীজ রাখা আছে। ব্যবহার করে ফেলে দিলে সেটা থেকেই গজিয়ে উঠবে গাছ।’’ তাঁর আশা, এ ভাবেই এক দিন রুক্ষ জেলার মাটি হয়ে উঠবে শ্যামলে শ্যামল।

পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকে স্বনির্ভর দলের সদস্য আর কন্যাশ্রীরা বানাচ্ছেন এমন আজব কলম। এনআরএলএম-এ (ন্যাশনাল রুলাল লাইভলিহুডস মিশন) ব্লকের প্রোজেক্ট ম্যানেজার মৌমিতা মাহাতো জানান, এক বার পুরুলিয়ার শিল্প মেলায় গিয়ে এই কলম দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। কলমের স্টলটা ছিল পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা শম্পা রক্ষিত সেনের। তিনি ব্লকে ব্লকে ঘুরে সরকারি প্রকল্পে মহিলাদের নানা রকমের প্রশিক্ষণ দেন। তবে কাগজের কলম তৈরি শেখাননি আগে।

শম্পার সঙ্গে কথা এগিয়ে রেখে মৌমিতা যোগাযোগ করেছিলেন মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) আকাঙ্ক্ষা ভাস্করের সঙ্গে। ব্লকের ৩২ জন মহিলাকে বেছে নিয়ে শুরু হয়েছে ২১ দিনের প্রশিক্ষণ। সম্প্রতি পাড়া ব্লকের এসএইচজি হলে গিয়ে দেখা গেল, খবরের কাগজ, কাঁচি আর আঠা নিয়ে গুছিয়ে বসেছেন স্বনির্ভর দলের সদস্য ও কন্যাশ্রীরা। শম্পা জানালেন, সহজ পদ্ধতি! বাজার থেকে রিফিল কিনে আনা হয়েছে। সেটার গায়ে কাগজ জড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। শেষের পরতে একটা রঙিন কাগজ। ব্যস! বাহারি কলম তৈরি।

মৌমিতা বলেন, ‘‘আমাদের স্লোগান— একটি কলম একটি গাছ/ একটি গাছ হাজার প্রাণ।’’ কলমের পিছনে ফাঁকা জায়গায় থাকছে একটা করে বীজ। শম্পা জানান, কলমগুলি গড়ে দিন পঁচিশেক ব্যবহার করলেই কালি ফুরিয়ে যাওয়ার কথা। তখন ফেলে দিতে হয়। বেছে বেছে এমন বীজ দেওয়া হচ্ছে, যাতে মাসখানেক পরে মাটিতে পড়লেও গাছ গজাতে পারে। কী গাছ? পুরুলিয়ার মাটি আর জলস্তরের কথা চিন্তা করে বেছে নেওয়া হয়েছে পলাশ, নিম, কাপাস তুলো, শিরীষ, কৃষ্ণচূড়া, পেঁপে, পেয়ারা। আপাতত শম্পা নিজে বীজ নিয়ে যাচ্ছেন। পরে স্বনির্ভর দলের সদস্যরাই বীজ তৈরি করবেন।

এই কলম তিনি প্রথম দেখেছিলেন এক আত্মীয়ের কাছে। শম্পা জানান, কেরল থেকে সেই আত্মীয় কলমটা এনেছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, লক্ষ্মী মেনন নামে এক জন সেটি তৈরি করেন। নিজের মতো করে শম্পাও কাজ শুরু করছিলেন। বললেন, ‘‘স্বনির্ভর দলের মেয়েদের শেখানোর প্রস্তাব পেতেই এক কথায় লুফে নিই।’’ এখন তাঁর কাছে কলম তৈরি শিখছেন স্বনির্ভর দলের ১৮ জন সদস্য আর ১৪ জন কন্যাশ্রী ছাত্রী।

মৌমিতা বলেন, ‘‘সাধারণত টেলারিং, বিউটিশিয়ানের মতো প্রশিক্ষণ দিয়ে মেয়েদের স্বনির্ভর করার চেষ্টা হয়। আমরা একটু অন্য রকমের চেষ্টা করছি।’’ তিনি জানান, এক একটি কলম তৈরি করতে খরচ পড়ে সাকুল্যে দেড় টাকা। দাম রাখা হয়েছে তিন টাকা। বাজারে প্লাস্টিকের কলমও তার থেকে সস্তায় মিলবে না। কাজের ফাঁকে তুলসী দাস, রূপালী মুখোপাধ্যায়, ইয়াসমিন পারভিন, প্রথমা মাহাতোরা বলেন, ‘‘কয়েকটা কলম তৈরি করতে দেখার পরেই অনেকটা শিখে গিয়েছি। এখন সহজেই বানিয়ে ফেলছি।’’

তাঁদের তৈরি এই কলম প্রশাসনই কিনে নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক আকাঙ্খা ভাস্কর। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি অফিস এমনিতেই কলম কেনে। তার উপরে লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই কাজে আরও কলম লাগবে। আমরা মেয়েদের তৈরি ওই কলম কিনে নেব।” আকাঙ্ক্ষা জানান, কলমের কথা শুনে জেলাশাসকও উৎসাহ দেখিয়েছেন। তাঁদের আশা, গোটা জেলাতেই পাড়ার এই কলম ব্যবহার করা হবে।

মৌমিতার দাবি, তেমন দিন এলে জোগান দিতে তাঁরাও প্রস্তুত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Self Help Group Kanyashree
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE