Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বাড়িতে প্রসব রুখতে কড়া জেলা প্রশাসন

বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এই পদক্ষেপ নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, “প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বাঁকুড়া জেলায় অনেকটাই বেড়েছে। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এই পদক্ষেপে সাধারণ মানুষ আরও সতর্ক হবে বলেই আশাবাদী।”

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

বাড়ির বদলে হাসপাতালে স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে সন্তান প্রসব করাতে এতদিন নানা ভাবে সচেতনতার চেষ্টা করেছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর। তাতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে অনেকখানি পথ এগনো গেলেও সাফল্য পুরোপুরি মিলছিল না। এ বার তাই প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব একশো শতাংশ নিশ্চিত করতে কড়া হল জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার নির্দেশিকা জারি করে বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস জানিয়ে দিলেন, বাড়িতে প্রসব করালে আর শিশুদের জন্মের শংসাপত্র দেওয়া হবে না। সে ক্ষেত্রে মহকুমাশাসকের কাছ থেকে ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র পেলে তবেই শিশুর জন্মের শংসাপত্র দিতে পারবে গ্রাম পঞ্চায়েত বা পুরসভা।

বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এই পদক্ষেপ নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, “প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বাঁকুড়া জেলায় অনেকটাই বেড়েছে। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এই পদক্ষেপে সাধারণ মানুষ আরও সতর্ক হবে বলেই আশাবাদী।”

জেলাশাসক বলেন, “রাজ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর একশো শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব নিশ্চিত করতে চায়। সেই লক্ষেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই জেলায় বাড়িতে জন্ম নেওয়া শিশুর জন্মগত সংশাপত্র এ বার থেকে তার পরিবারকে দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট মহকুমাশাসকের নো-অবজেকশন শংসাপত্র নিতে হবে পঞ্চায়েত বা পুরসভাকে।’’ আধিকারিকদের একাংশের অভিমত, জেলাশাসকের এই নির্দেশের ফলে বাড়িতে জন্ম নেওয়া শিশুর জন্মগত সংশাপত্র নিতে গিয়ে ঝক্কি পোহাতে হবে। তা এড়াতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের ঝোঁক বাড়বে বলে আশাবাদী তাঁরা।

চলতি বছরের গোড়ায় জেলা সফরে এসে রবীন্দ্রভবনের প্রশাসনিক বৈঠকে এই জেলার প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বাড়াতে উদ্যোগী গতে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে জেলার ওন্দা ব্লকে পুলিশ, প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরকে যৌথ ভাবে এ নিয়ে প্রচার চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রশাসনিক তৎপরতাও বাড়ে। ওন্দার পুনিশোলে নিয়মিত সচেতনতা শিবির করে ও নজরদারি চালিয়ে সেখানকার মানুষকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের সুবিধা নিয়ে সচেতন করা হচ্ছে। বাসিন্দাদের দাবি মেনে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মহিলা চিকিৎসকও নিয়োগ করা হয়েছে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সাম্প্রতিকতম তথ্য অনুসারে, বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর দু’টি স্বাস্থ্য জেলাতেই প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ধাপে ধাপে বাড়ছে। চলতি অর্থবর্ষের জুলাই মাস পর্যন্ত বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার যথাক্রমে ৯৯.৭৯ শতাংশ ও ৯৯.২২ শতাংশ। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহুর্তে রাজ্যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ৯৭.৮ শতাংশ।

রাজ্যের প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হারের তুলনায় এই জেলা কিছুটা এগিয়েই রয়েছে। বাঁকুড়া স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস জানান, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জেলায়। গর্ভবতী মহিলাদের সম্ভাব্য প্রসব তারিখ ধরে চিহ্নিত করে স্থানীয় আশা কর্মীদের মাধ্যমে তাঁদের বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। গর্ভবতী মহিলাদের ফোন করে জেলা প্রশাসন বা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা সরাসরি ফোন করে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের সুযোগ সুবিধাগুলি জানাচ্ছেন। জেলাশাসক বা জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিকেরাও অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি ফোন করছেন গর্ভবতী মহিলাদের নম্বরে। বিভিন্ন এলাকায় গজিয়ে ওঠা হাতুড়ে ডাক্তার বা ধাইমাদের চক্র ভাঙতেও এলাকায় গিয়ে কড়া নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। যে সব এলাকায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার কম, সেখানে শিবির করা হচ্ছে।

তারপরেও ১০০ শতাংশ অধরা কেন? জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, অনেক ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছনোর গাড়ির অভাব বা মাতৃযান সঠিক সময় মত না পাওয়াকে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন মানুষজন। এ ছাড়া এক শ্রেণির মানুষের মনে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবকে কেন্দ্র করে নানা কুসংস্কারও কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “জেলাশাসকের নতুন নির্দেশিকার ফলে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের ক্ষেত্রে কোথায় সমস্যা হচ্ছে, তা আরও ভালভাবে আমাদের সামনে উঠে আসবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pregnancy Woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE