Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কাজ কেমন হচ্ছে, গ্রামে যাবেন বিডিও

জেলার ১৭০টি পঞ্চায়েতের মোট ২,৬৬৭টি গ্রামের মধ্যে কীসের নিরিখে বেছে নেওয়া হল ২৯০টি গ্রামকে?

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:০৯
Share: Save:

বিচ্ছিন্ন ভাবে একটি-দু’টি গ্রামে নয়, এ বার তালিকা ধরে পুরুলিয়া জেলার সমস্ত অনু্ন্নত গ্রামে সরকারি প্রকল্পের হালহকিকত দেখতে চাইছে প্রশাসন। প্রাথমিক ভাবে জেলার ২০টি ব্লকের ২৯০টি গ্রামকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সব গ্রামে ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ম করে যেতে বলা হচ্ছে। এ নিয়ে সোমবারই সরকারি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার।

এই জেলার ১৭০টি পঞ্চায়েতের মোট ২,৬৬৭টি গ্রামের মধ্যে কীসের নিরিখে বেছে নেওয়া হল ২৯০টি গ্রামকে? জেলাশাসক বলেন, ‘‘২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে যে গ্রামগুলিতে অর্ধেক বা তারও বাসিন্দা মানুষ সাক্ষর এবং যে গ্রামের আদিবাসী অধ্যুষিত জনজাতির সংখ্যা সংশ্লিষ্ট গ্রামের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ, সেই গ্রামগুলিকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।’’

কী ভাবে কাজ হবে? জেলাশাসক জানান, আগামী শুক্রবার থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রতিটি ব্লকের বিডিও বা জয়েন্ট বিডিও এই তালিকা ধরে দু’টি করে গ্রামে যাবেন। বিডিও বা জয়েন্ট বিডিও-র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা গ্রামে গিয়ে সরকারি পরিষেবা বা গ্রামীণ মানুষজনের জীবন জীবিকার বেশকিছু বিষয় জড়িত সাতটি বিষয় খতিয়ে দেখবেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন কোন বিষয় কী ভাবে দেখতে হবে, তা সোমবার বিডিওদের নিয়ে বৈঠকে তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। একশো দিনের প্রকল্পে বেশি করে কাজ দেওয়া এবং কাজ শেষে দ্রুত মজুরি পাওয়া নিশ্চিত করতে জোর দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সবুজ বাড়াতে ওই সব এলাকায় জল সংরক্ষণের জন্য ঊষরমুক্তি প্রকল্পে কী কাজ করা যেতে পারে, সেই মর্মেও একটি রিপোর্ট আধিকারিকদের জমা করতে বলা হয়েছে। রেশন পাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা রয়েছে কি না, স্কুলে মিড-ডে মিল কেমন চলছে, শৌচাগার পরিচ্ছন্ন কি না তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।

ব্লক প্রশাসনের এই দলে থাকবেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরাও। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে মা ও শিশুদের পুষ্টিকর যে খাবার পাওয়ার কথা তা দেওয়া হচ্ছে কি না এবং টিকাকরণ, স্বাস্থ্যপরীক্ষার কাজেও গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। গবাদি পশুর চিকিৎসার জন্য প্রাণীবন্ধু বা প্রাণীমিত্রকে কোথায় পাবেন, কৃষিজীবীরা কী ভাবে ফসলবিমা করাতে পারবেন সে সম্পর্কেও জানাতে হবে।

কিন্তু এ নিয়ে নির্দেশিকা কেন জারি করতে হল? জেলাশাসকের কথায়, ‘‘সম্প্রতি বেশ কিছু গ্রামে গিয়ে আমাদের মনে হয়েছে, প্রশাসনের সঙ্গে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষজনের কোথাও একটা দূরত্ব থেকে যাচ্ছে। সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে গ্রামগুলিকে উন্নয়নের ধারার সঙ্গে যুক্ত করাই এই কর্মসূচির লক্ষ্য।’’

যদিও জেলা প্রশাসনের এই কর্মসূচির কথা জেনে বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘বিজেপির আন্দোলনের চাপে পড়েই এখন জেলা প্রশাসনকে গ্রামে গ্রামে ছুটতে হচ্ছে। এটা তো অনেক আগেই করার কথা ছিল। প্রশাসনিক পরিষেবা মানুষের কাছে পৌঁছক, সেটা ভাল। তবে সবই তো ভোটের লক্ষ্যে। এতে কি আর দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত মানুষের ক্ষোভ কমবে?’’

কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘জেলাশাসকের এই পদক্ষেপ অবশ্যই সাধুবাদ যোগ্য। তবে এখন পর্যন্ত আমরা দেখছি, কেবল অভিযোগই শোনা হচ্ছে। সমস্যার সমাধান না হলে এই পদক্ষেপও আর একটি গল্প হয়েই থেকে যাবে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের কটাক্ষ, ‘‘সমস্যা গভীরে। জেলা প্রশাসনের প্রসাধনী প্রলেপে ক্ষত সারবে না।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘আগে সরকারের এত প্রকল্পই ছিল না। তৃণমূল সরকার অনেক জনমুখী প্রকল্প চালু করেছে। তাই দরজায় গিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Purulia Development Ground Level
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE