Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
সহমর্মীসভায় গিয়ে শুনলেন জেলাশাসক

গ্রামবাসীর মুখে ক্ষোভ

বুধবার বিকেলে তালড্যাংরার বিবরদা পঞ্চায়েতের মহদা প্রাইমারি স্কুলের মাঠে বসেছিল ‘সহমর্মী সভা’। গ্রামবাসীরা প্রথমেই তাঁর কাছে অভিযোগ করেন, একশো দিনের প্রকল্পে কাজ পাচ্ছেন না।

অভিযোগ জানাচ্ছেন মহদা গ্রামের বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র

অভিযোগ জানাচ্ছেন মহদা গ্রামের বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
তালড্যাংরা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৯ ০১:১৫
Share: Save:

ঠান্ডা ঘরের কুশন আঁটা চেয়ার ছেড়ে জেলাশাসক গিয়ে বসলেন খোলা আকাশের নীচে ত্রিপলের উপরে। শুনতে এসেছিলেন গ্রামবাসীর মনের কথা। কথা গড়াতেই অভাব-অভিযোগের আঁচ পেলেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস।

বুধবার বিকেলে তালড্যাংরার বিবরদা পঞ্চায়েতের মহদা প্রাইমারি স্কুলের মাঠে বসেছিল ‘সহমর্মী সভা’। গ্রামবাসীরা প্রথমেই তাঁর কাছে অভিযোগ করেন, একশো দিনের প্রকল্পে কাজ পাচ্ছেন না। যেটুকু কাজ পেয়েছেন, অনেকে আবার তার টাকাও পাননি বলে দাবি করেন। অনেকে এমনও দাবি করেন, কিছু প্রকল্পের কাজ কাগজে-কলমে দেখানো হলেও, বাস্তবে তা হয়নি। জেলাশাসক বলেন, ‘‘মহকুমাশাসক (খাতড়া) রাজু মিশ্রের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয়েছে। তাঁরাই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন।’’

সাধারণ মানুষের মনে কথা জানতে নবান্নের নির্দেশে জেলায় জেলায় ঘুরতে শুরু করেছেন জেলাশাসকেরা। বাঁকুড়ায় জেলায় এ দিনই জেলাশাসকের প্রথম ‘সহমর্মী সভা’ ছিল। গোড়াতেই কয়েকজন অভিযোগ করেন, বিরোধী দল করার জন্য তাঁদের একশো দিনের কাজ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এমনকি সরকারি গৃহ নির্মাণ প্রকল্পেও রাজনৈতিক রং দেখা হচ্ছে। জেলাশাসক তাঁদের একজনকে ডেকে এনে সামনে বসিয়ে বলেন, ‘‘এতদিন আমার কাছে অভিযোগ জানাননি কেন?’’

তিনি দাবি করেন, ‘‘অভিযোগ করলে তো খুন হয়ে যেতাম। আপনি এলেন বলে সব বললাম।’’ জেলাশাসকের আশ্বাস, আগামী দিনে যাতে যোগ্য লোকেরাই সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পান, সেই চেষ্টাই তাঁরা করছেন।

স্থানীয় প্রৌঢ় নিখিল লোহার অভিযোগ করেন, ‘‘১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করে টাকা পাইনি।’’ জেলাশাসক তাঁর ব্যাঙ্কের পাশবই দেখে নিয়ে বলেন, ‘‘কেন পাননি দেখছি। তবে কেউ যদি টাকা তুলে নেন, তাহলে তিনি ছাড়া পাবেন না।’’ গ্রামের অনেকে অভিযোগ তোলেন, দীর্ঘদিন ধরে নতুন জবকার্ড তৈরি বন্ধ। কয়েক বছর আগে একশো দিনের প্রকল্পে ওই এলাকায় একটি আমের বাগান তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই বাগান আর নেই। সমস্ত গাছ রাতারাতি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পাশে থাকা আধিকারিক ও কর্মীরা অভিযোগ লিখে নিচ্ছিলেন। নথিপত্রের ছবিও তুলে রাখা হচ্ছিল।

অন্ত্যোদয় প্রকল্পের মতো ওই গ্রামের রেশনের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করে জানতে চাওয়া হয়, তাঁদের মধ্যে সবাই যোগ্য কি না। কেই অবশ্য অভিযোগ করেনি। তবে এলাকার কয়েকটি রাস্তার কাজ হওয়ার কথা সরকারি ভাবে দেখানো হলেও, বাস্তবে তা হয়নি বলে নাম ধরে ধরে বাসিন্দারা জেলাশাসককের কাছে দাবি করেন।

তালড্যাংরা ব্লকের এক আধিকারিক গ্রামবাসীর কাছে জানতে চান, ‘‘পুরনো স্কুল থেকে বিষ্ণু মন্দির পর্যন্ত রাস্তা ঢালাই করার কথা। তা হয়েছে কি?’’ বাসিন্দারা সমস্বরে বলে ওঠেন, ‘‘হয়নি।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, সরকারি ভাবে ওই রাস্তাটি শেষ হয়েছে। কিন্তু বাসিন্দারা এ দিন কাজ না হওয়ার অভিযোগ তোলায়, কোথায় গোলমাল হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে নামছে প্রশাসন। পরে অবশ্য পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের প্রশান্ত দুলে দাবি করেন, ‘‘টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় ওই রাস্তার অর্ধেক কাজ হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তা জানেন।’’ তিনি জানান, একশো দিনের প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত তাঁর পঞ্চায়েতে ৮২ দিন কাজ দেওয়া গিয়েছে। কত মানুষ কাজ পেয়েছেন, তা অবশ্য জানাতে পারেননি। ওই প্রকল্পে টাকা না পাওয়ার অভিযোগ যা উঠেছে, তা পঞ্চায়েত থেকে যথাস্থানে জানানো আছে বলেও দাবি করেন। গ্রামবাসী বিবরদা-মহদা রাস্তা সংস্কারের দাবি তোলেন।

ফেরার পথে জেলাশাসক জানান, প্রতি সোমবার তিনি, মহকুমাশাসক এবং বিডিওরা নিজেদের অফিসে সাধারণ মানুষের কথা শোনার জন্য বসবেন। কারও কোনও অভিযোগ থাকলে সেখানে গিয়ে জানাতে পারবেন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা মানুষের আরও কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

100 Days Work District Magistrate Taldangra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE