Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Illegal Sand Mining

বালি পাচার রুখতে কড়া জেলাশাসক

প্রতি বর্ষায় নদী থেকে বালি তোলা বন্ধ থাকে। এ বছর ১ জুলাই থেকে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে জেলার সমস্ত নদী থেকে বালি তোলা বন্ধ।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২৩:৪৯
Share: Save:

প্রশাসনের নির্দেশের তোয়াক্কা না করে পুরুলিয়ার বিভিন্ন নদী থেকে রাতের অন্ধকারে বালি তোলার অভিযোগ লেগেই রয়েছে। শনিবার জেলার সমস্ত ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে নিজেই সেই প্রসঙ্গ তুলে কড়া হওয়ার নির্দেশ দিলেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘বালির কারবারের জন্য বেআইনি কিছু চিরকুট কারবারিদের হাতে হাতে ঘুরছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকদের বিষয়টি খতিয়ে দেখে সরাসরি জেলা স্তরে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।’’

প্রতি বর্ষায় নদী থেকে বালি তোলা বন্ধ থাকে। এ বছর ১ জুলাই থেকে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে জেলার সমস্ত নদী থেকে বালি তোলা বন্ধ। কিন্তু তার পরেও যথেচ্ছ বালি তোলার অভিযোগ উঠছে পুরুলিয়া শহরের উপকন্ঠে কংসাবতী নদীর তীরের বিভিন্ন গ্রাম, ঝালদা, মানবাজার, কাশীপুর, পুঞ্চা, নিতুড়িয়া-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে। সারা রাত ধরে গ্রামের রাস্তা দিয়ে কংসাবতীর বালি ট্রাক্টরে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে ক’দিন আগেই জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত মর্মে অভিযোগ করেছেন টামনা থানার কোটলুই গ্রামের বাসিন্দারা।

অগস্টে ঝালদা-বাঘমুণ্ডি রাস্তায় ইচাগের কাছে গরুকে ধাক্কা দিয়ে উল্টে গিয়েছিল বালি বোঝাই ট্রাক্টর। সে বার যানজটে পথে আটকে পড়েছিলেন খোদ জেলার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন। অগস্টেই ঝালদার ডড়পা গ্রামে সারা রাত বালি বোঝাই ডাম্পার আটকে রেখেছিলেন স্থানীয় কিছু বাসিন্দা। জুনের শেষের এক ভোরে পুরুলিয়া মফস্সল থানার গাড়াফুসড় গ্রামের কিছু বাসিন্দা কয়েকটি বালি বোঝাই ট্রাক্টর আটকে দেন।

বালির বেআইনি কারবার যে চলছে, প্রশাসনের আদায় করা জরিমানার অঙ্ক থেকেও তা স্পষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। এ বছর শুধু জুলাই এবং অগস্টে বিভিন্ন নদীতে বালি পাচারের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১ কোটি ৯৩ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকার জরিমানা আদায় হয়েছে। গত আর্থিক বছরে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর পাথর ও বালির বেআইনি পাচার রুখতে অভিযান চালিয়ে ১৭ কোটি ৪০ লক্ষেরও বেশি টাকা জরিমানা বাবদ আদায় করেছিল। দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘সেই টাকার বেশিটাই এসেছে বালির থেকে।’’ পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যত বালি পাচার হচ্ছে, তার কতটুকুই বা ধরা পড়ে? জরিমানার হিসেবেই পরিষ্কার, পুরুলিয়ায় বালির বেআইনি কারবার কী ভাবে রমরমিয়ে চলছে।’’

অভিযোগ, অবৈধ বালির কারবারে চলে নানা সাংকেতিক ছাপ দেওয়া চিরকুট। উঠে আসে ‘প্রভাবশালী’ নেতাদের নাম। অভিযোগ ওঠে স্থানীয় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ভুয়ো চালান ব্যবহার করে বা শাসকদলের নেতাদের নাম করে বালি পাচারের অভিযোগ তাঁর কাছেও এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘ভূমি দফতরের আধিকারিকেরা যাওয়ার আগেই কারবারিরা খবর পেয়ে সরে পড়ে। সর্ষের মধ্যে ভূত না থাকলে এটা হতে পারে না। পুলিশের একাংশের ভূমিকা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। সরকারি রাজস্বের নয়ছয় রুখতে আমি নিজে অভিযানে নামব।’’ পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপবাবু বলেন, ‘‘পুরুলিয়া শহরেরর কাছেই কংসাবতী নদী থেকে বেআইনি ভাবে বালি তোলা রুখতে গিয়ে সিভিক ভলান্টিয়ারেরা মার খেয়েছিলেন। বালির কারবারিরা কতটা বেপরোয়া, তাতেই বোঝা যায়।’’

জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন অবশ্য বলেন, ‘‘খবর পেলেই বালি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal Sand Mining Purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE