Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডাক্তার নেই, ফার্মাসিস্ট-ও উধাও, ক্ষোভ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে

বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র সারাদিনে দুই থেকে তিন ঘণ্টা খোলা থাকে। তাই সামান্য পেট ব্যথা, জ্বর হলেও তাঁদের বাইরে চিকিৎসা করাতে যেতে হয়। অথবা হাতুড়ে চিকিৎসকই ভরসা। 

ক্ষোভ। রাজনওয়াগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। নিজস্ব চিত্র

ক্ষোভ। রাজনওয়াগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কেন্দা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৩৮
Share: Save:

পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দরজায় তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন বাসিন্দারা। পরে ব্লক প্রশাসন ও পুলিশের আশ্বাসে তালা খোলা হয়। বৃহস্পতিবার পুঞ্চা ব্লকের রাজনওয়াগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘটনা।

মানবাজার-পুরুলিয়া মূল রাস্তা থেকে প্রায় চার কিমি ভিতরে রাজনওয়াগড় গ্রামে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে অনেকগুলি গ্রামের বাসিন্দা নির্ভরশীল। কারণ কাছে-পিঠে আর কোথাও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। ৩০ কিমি দূরে মানবাজার কিংবা পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে
দৌড়তে হয়।

এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য রূপালী মুখোপাধ্যায়, রীতা চক্রবর্তীদের অভিযোগ, ‘‘এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে কয়েক হাজার বাসিন্দা নির্ভর করেন। কিন্তু, কয়েক মাস ধরে কোন চিকিৎসক নেই। ফার্মাসিস্ট রোগীদের দেখে ওষুধ দেন। কিন্তু তিনিও নিয়মিত আসেন না।’’ সেই ক্ষোভে কিছু দিন আগে বাসিন্দারা স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, সেই সময় ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল ফার্মাসিস্ট নিয়মিত থাকবেন, ওষুধও দেবেন। কিন্তু, ফের যে কে সেই অবস্থা।

এ দিন ফার্মাসিস্ট রোগীদের না দেখে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তাতেই গোলমাল পাকে। স্থানীয় বাসিন্দা শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় ও কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়দের দাবি, ‘‘পায়ে চোট লাগায় ক্ষতে ব্যান্ডেজ এবং ওষুধ লাগাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছিলাম। ফার্মাসিস্ট আমাদের রেখে বেরিয়ে গেলেন।’’ তার কিছুক্ষণ পরেই সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় রাজনওয়াগড়ের বাসিন্দা গোপীনাথ কুণ্ডুকে। এ দিন বাড়িতে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে তিনি গুরুতর জখম হন। তাঁর মাথা ফেটেছে, হাতেও যন্ত্রণা। গোপীনাথবাবুকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পরে ফার্মাসিস্ট তাঁর চিকিৎসা না করে বল খেলা দেখতে চলে যান বলে অভিযোগ। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোলমাল পাকায়। ক্ষোভে দরজায় তালা পড়ে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র সারাদিনে দুই থেকে তিন ঘণ্টা খোলা থাকে। তাই সামান্য পেট ব্যথা, জ্বর হলেও তাঁদের বাইরে চিকিৎসা করাতে যেতে হয়। অথবা হাতুড়ে চিকিৎসকই ভরসা।

খবর পেয়ে কেন্দা থানা থেকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ পরে পুঞ্চা ব্লক প্রশাসন থেকে কয়েক জন আধিকারিক যান।

বিডিও (পুঞ্চা) গৌতম দত্ত জানান, আজ, শুক্রবার বিএমওএইচ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের তিনি আলোচনায় বসবেন। সেখানের পরিস্থিতি জেনে কী ভাবে সমস্যা মেটানো সম্ভব, স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান। চেষ্টা করেও পুঞ্চার বিএমওএইচের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তা বলেন, ‘‘বর্তমানে জেলা জুড়েই চিকিৎসকের সঙ্কট রয়েছে। জেলায় অল্প সংখ্যক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ চালু রয়েছে। বেশির ভাগ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শুধুমাত্র বহির্বিভাগ চালু রয়েছে। আবার সব প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকও নেই। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা ঠিক রাখতে অনেকসময় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসকদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

রাজনওয়াগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিছু দিন ধরে চিকিৎসক নেই। ফার্মাসিস্টকেই বলা হয়েছে পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা, জ্বর এ সব ছোটখাটো সমস্যার চিকিৎসার জন্যে যেন কাউকে বাইরে যেতে না হয়।’’

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘ওই ফার্মাসিস্টকে ডেকে পাঠানো হয়। তাঁকে নিয়মিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা চিকিৎসা পরিষেবা থেকে যাতে বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করতে বলেছি। গোটা ঘটনাটি স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE