Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নয়া ফন্দিতে ডাম্পার লুঠ, ধৃত তিন জন

নিতুড়িয়া থানার ওসি পঙ্কজ সিংহ ডাম্পারের চালকের সঙ্গে বিশদে কথা বলে যে এলাকা দিয়ে ডাম্পার ও ভাড়া গাড়িটি গিয়েছে, সেখানকার রাস্তায় লাগানো সিসিক্যামেরার ওই দিনের ফুটেজ জোগাড় করেন।

চুরি যাওয়া ডাম্পার। নিজস্ব চিত্র

চুরি যাওয়া ডাম্পার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নিতুড়িয়া শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৪২
Share: Save:

ঋণের কিস্তি বকেয়া রয়েছে— এমনই বলে ধোপধুরস্ত পোশাকের তিন যুবক নিজেদের ঋণদাতা সংস্থার কর্মীর পরিচয় দিয়ে ডাম্পার নিয়ে গিয়েছিল। ডাম্পারের মালিক পরে খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারেন, ঋণদাতা সংস্থা আদৌ ডাম্পার তুলতে লোক পাঠায়নি। তবে কারা নিয়ে গেল ডাম্পার? পুরুলিয়ার পারবেলিয়া থেকে ওই ডাম্পার লুঠের তদন্তে নেমে সিসিক্যামেরা ও অ্যাপসের সহায়তায় নিতুড়িয়া থানার পুলিশ ধরে ফেলল আসানসোলের হিরাপুর থানার হুসেননগরের তিন দুষ্কৃতীকে। উদ্ধার করা হয় চুরি যাওয়া ডাম্পারটিও।

পুলিশের দাবি, অভিযোগ পাওয়ার চার দিনের মধ্যে মঙ্গলবার রাতে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতেরা হল আরবাজ খান, আমানুল্লা খান ও ইমরান আসলাম। তাদের বাড়ি থেকে ধরা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করে বুধবার সন্ধ্যার দিকে রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর এলাকার একটি পরিত্যক্ত খনি এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় ডাম্পারটি। এ দিন ধৃতদের রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হয়। তিন জনেরই পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়েছে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, ‘‘ধৃতেরা সকলেই আন্তঃরাজ্য দুষ্কৃতী। তারা আগেও এই ভাবে গাড়ি বিশেষত ডাম্পার, ট্রাক চুরি করেছে বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। তাদের জেরা করে অপরাধের বিষয়ে আরও বিশদে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ডাম্পার চুরির পদ্ধতি বেশ অভিনব। ভাড়া গাড়িতে চেপে ৮ অগস্ট দুপুরে তিন যুবক নিতুড়িয়ার পারবেলিয়া বাজারে এসে রাস্তার পাশে রাখা একটি ডাম্পারের চালককে ডাকে। তারা নিজেদের ঋণদাতা সংস্থার আধিকারিক, কর্মী পরিচয় দিয়ে ডাম্পারের চালককে বলে, ওই গাড়ির ঋণের ছ’টি কিস্তি বাকি আছে। মালিককে কিস্তি শোধ করার কথা বলেও লাভ হয়নি। তাই গাড়িটি তারা দুর্গাপুরে নিজেদের অফিসে নিয়ে যেতে এসেছে। চালক বীরভূমের পাড়ুই থানা এলাকার বাসিন্দা ডাম্পারটির মালিক শেখ ওয়াসিন হককে ফোন করতে গেলে, তাকে বারণ করা হয়। চালককে নিজেদের গাড়িতে তুলে, অন্য এক জন ডাম্পারটি চালিয়ে নিয়ে সেখান থেকে তারা বেরিয়ে যায়। দুর্গাপুরের কিছু আগেই অবশ্য চালককে গাড়ি থেকে জোর করে নামিয়ে ডাম্পার নিয়ে তারা পালায়।

ধৃত তিন জন।

পরে খবর পেয়ে ডাম্পারের চালক ঋণদাতা সংস্থায় যোগাযোগ করে জানতে পারেন, তাঁরা গাড়ি তুলতে যাননি। এরপর কিছু দিন নিজের মতো ভাবে খোঁজাখুঁজি করেন। লুঠের দিন দশেক পরে ১৭ অগস্ট তিনি নিতুড়িয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

নিতুড়িয়া থানার ওসি পঙ্কজ সিংহ ডাম্পারের চালকের সঙ্গে বিশদে কথা বলে যে এলাকা দিয়ে ডাম্পার ও ভাড়া গাড়িটি গিয়েছে, সেখানকার রাস্তায় লাগানো সিসিক্যামেরার ওই দিনের ফুটেজ জোগাড় করেন। নিতুড়িয়া-সহ পশ্চিম বর্ধমানের কয়েকটি থানা এলাকার সিসি ক্যামেরার ছবি দেখানো হয় চালককে। দু্কৃতীদের ব্যবহার করা গাড়ি চিহ্নিত করেন তিনি। গাড়ির নম্বর স্পষ্ট বোঝা না গেলেও আন্দাজ করে ‘বাহন’ অ্যাপের মাধ্যমে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, গাড়িটি কলকাতার সল্টলেকের একটি পরিবহণ সংস্থার। ওই সংস্থা কিছু টাকা জমা নিয়ে গাড়ি ভাড়া দেয়। কিন্তু চালক দেয় না।

ওই সংস্থা থেকে জানা যায়, ৫ অগস্ট হিরাপুর থানার আরবাজ খান গাড়িটি ভাড়া নেয়। সেখান থেকে ফোন নম্বর নিয়ে পুলিশ আরবাজের ফোনে আড়ি পাতে। ফোনের টাওয়ার লোকেশন দেখায় ৮ অগস্ট তা দীর্ঘক্ষণ পারবেলিয়া এলাকায় ছিল। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে যে এগিয়েছে, তখনই বুঝে নেন তদন্তকারীরা। আরবাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ জেরা শুরু করে। পুলিশের দাবি, তখন সে লুঠে জড়িত আরও দু’জনের নাম জানয়। ধরা হয় তাদেরও।

পুলিশের দাবি, তিন যুবক শিক্ষিত ও স্বচ্ছল পরিবারের। শিল্পাঞ্চল এলাকায় অনেক গাড়ি এই ভাবে ঋণদাতা সংস্থার কর্মীরা তুলে নিয়ে যায়, দেখে এক মাস আগে তারা লুঠের পরিকল্পনা করে। পুলিশের দাবি, পরে তারা গাড়ির চেচিস নম্বর, ইঞ্জিন নম্বর বদলে ভিন্‌ রাজ্যে গাড়িটিকে বিক্রি করে দেওয়াই পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু, তার আগেই ধরা পড়ে গেল তিন-মূর্তি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Theft Snatching Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE