Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভিজছে সাজ, চিন্তায় উদ্যোক্তা

আকাশের নিচে মাটি, বাঁশ, খড় দিয়ে মণ্ডপ সাজানোর কাজ থমকে দিয়েছে কয়েক দিন ধরে চলতে থাকা বৃষ্টিতে। কী ভাবে সময়ে মণ্ডপের কাজ শেষ করবেন, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন শিল্পী।

দুর্যোগ: জমা জলে মণ্ডপের প্রতিবিম্ব। শনিবার দুবরাজপুরে। নিজস্ব চিত্র

দুর্যোগ: জমা জলে মণ্ডপের প্রতিবিম্ব। শনিবার দুবরাজপুরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৪২
Share: Save:

একে চন্দ্র, দুইয়ে পক্ষ— ছোট বেলার ধারাপাতের কথা পুজোয় মনে করানোর পরিকল্পনা দুবরাজপুরের স্পোর্টস অ্যাসেসিয়েশনের। সেটাই তাদের থিম। কিন্ত একটানা বৃষ্টিতে চট, খড়, বাঁশ, মাটি দিয়ে সময়মতো তেমন মণ্ডপের কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন শিল্পী সৌম্যপ্রিয় পাল।

একই রকম সংশয়ে সিউড়ি বড়বাগান একের পল্লির ‘থিম মেকার’ মুকুলকুমার দোলাই। এ বার ওই পুজোর থিম হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির শিকড়ের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের পরিচয় করিয়ে দেওয়া। আকাশের নিচে মাটি, বাঁশ, খড় দিয়ে মণ্ডপ সাজানোর কাজ থমকে দিয়েছে কয়েক দিন ধরে চলতে থাকা বৃষ্টিতে। কী ভাবে সময়ে মণ্ডপের কাজ শেষ করবেন, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন শিল্পী।

শারদোৎসবের আকাশের চেনা ছবি নীল দিহন্তে পেঁজা তুলো মেঘ। কিন্তু মহালয়ার দিনও আকাশের মুখ ভার। হাওয়া অফিসের খবর, নিম্নচাপের ‘সৌজন্যে’ কয়েক দিন ধরে জলভরা মেঘে ঢেকেছে আকাশ। যখন-তখন সেই মেঘ ফুঁড়ে নামছে বৃষ্টি। গত মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে জেলায়। ভারী ও লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে শুক্রবাব দুপুরের পর থেকেই।

তাতেই ধুয়ে যাচ্ছে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মণ্ডপের সাজও। মুকুল, সৌম্যপ্রিয়দের আক্ষেপ— ‘‘এ ভাবে বৃষ্টি পড়লে খোলা মাঠে মণ্ডপ তৈরি হবে কী ভাবে। তা ছাড়া বৃষ্টিতে শ্রমিক পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে।’’

পুজোর মুখে এমন একটানা বৃষ্টিতে কপালে ভাঁজ জেলার অন্য মণ্ডপশিল্পী, পুজো উদ্যোক্তা এবং প্রতিমাশিল্পীদেরও।

দুবরাজপুরের উত্তরাঞ্চলের এ বারের থিম ‘ইতি কথা’। একটি জীর্ণ রাজবাড়ির দুর্গাপুজো ফুটিয়ে তুলছেন শান্তিনিকেতনের শিল্পী মৃণাল দে, রাম দাস। তাঁরা জানান, মণ্ডপ তৈরির মূল উপাদান প্লাইউড, বাঁশ, থার্মোকল, চট। বৃষ্টিতে সব ভিজে গিয়েছে। চুঁইয়ে পড়ছে জল। মেঝে তৈরির জন্য সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছিল, সে সবও ধুয়ে গিয়েছে। ক্লাবের সম্পাদক সুচিন্ত দেওয়াসী বলছেন, ‘‘ভীষণ মনখারাপ হয়ে গিয়েছে।’’

একই অবস্থা সিউড়ির সবুজ সঙ্ঘ ক্লাবের। খবরের কাগজের মণ্ড, প্লাস্টার অফ প্যারিস, বাঁশ, চট দিয়ে সেই ক্লাবের এ বারের পুজোর থিম ‘বিপন্ন প্রকৃতি’ ফুটিয়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন সৌরেন্দ্র ভাণ্ডারী। শিল্পীর কথায়, ‘‘প্রকৃতির উপর হাত চলে নাকি!’’

আর উদ্যোক্তারা বলছেন, ‘‘দিনচারেক সময় পেলে কাজ উঠে যাবে। তখন ভিজে মাঠে বালি বা কাঠের গুঁড়ো ছড়াতে হবে। আগে বৃষ্টি তো বন্ধ হোক।’’ শনিবার সন্ধে পর্যন্ত প্রকৃতির রূপবদল অবশ্য হয়নি। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হয়েছে জেলার বিভিন্ন প্রান্তেই।

সাধারণ ভাবে বর্ষা-বিদায়ের পরেই আসে শারদোৎসব। কিন্তু এ বার পুজোর তারিখ এগিয়েছে অনেক। ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি ভাবে সক্রিয় থাকার কথা বর্ষার। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, মরসুমের প্রথম দিকে বর্ষা যথেষ্ট ‘কৃপণ’ ছিল এ জেলায়। তবে শেষ বেলায় পৌঁছে টি-২০ ক্রিকেটের ঢঙে ব্যাট করছে। পরিমণ্ডলে সক্রিয় মৌসুমী অক্ষরেখা ছিলই, ঘূর্ণাবর্তের জেরে তা বাড়তি শক্তি পেয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, রবিবার পর্যন্ত এই পরিস্থিতির বদল হওয়ার কথা নয়। তা-ই বৃষ্টি চলবে। উত্তরপ্রদেশে আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। সেটি কোন দিকে এগোয়, তার উপরে পুজোয় বৃষ্টি হওয়া না হওয়া নির্ভর করছে। উৎসবের মুখে তা-ই জেলাবাসীর আশঙ্কার প্রশ্ন, ‘পুজোর কয়েকটা দিন কি রেহাই মিলবে না।’’

পুজো উদ্যোক্তাদের অনেক বলছেন, কলকাতায় মহালয়া বা তার দু’এক দিনের মধ্যেই প্রস্তুতি শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ছোট শহর বা মফস্সলে পুজো-প্রস্তুতির কাজ শেষ হতে হতে পঞ্চমী এমনকী ষষ্ঠীও গড়িয়ে যায়। কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের অন্য জেলার মতো বীরভূমের বাসিন্দাদের এখন একটাই প্রার্থনা— ‘‘পুজোর দিনে আবহবিদদের পূর্বাভাস যেন মিথ্যা প্রমাণ করেন মা দুর্গা।’’

আর পুজো উদ্যোক্তা ও থিম মেকাররা বলছেন, ‘‘পুজোর কয়েকটি দিনের পাশাপাশি আগের কয়েকটি দিনও বৃষ্টির হাত থেকে মুক্তি দিন জগজ্জননী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suri Durga Puja 2019 Rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE