Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নতুনডিহিতেই দুগ্গা খোঁজেন লক্ষ্মীরা

পুজোর সময় এলাকার অধিকাংশ বধূ ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যেতেন। আবার অনেকেই মনখারাপ করে শ্বশুরবাড়িতেই থেকে যেতে বাধ্য হতেন। বড়জোর একদিন স্বামীর সঙ্গে শহরে গিয়ে ঠাকুর দেখতে পেতেন।

পুজোর প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ততা। মহম্মদবাজারের নতুনডিহি গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

পুজোর প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ততা। মহম্মদবাজারের নতুনডিহি গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৪২
Share: Save:

পুজোর সময় এলাকার অধিকাংশ বধূ ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যেতেন। আবার অনেকেই মনখারাপ করে শ্বশুরবাড়িতেই থেকে যেতে বাধ্য হতেন। বড়জোর একদিন স্বামীর সঙ্গে শহরে গিয়ে ঠাকুর দেখতে পেতেন। মহম্মদবাজারের ঝাড়খণ্ড সীমানায় থাকা দুই রাজ্যের আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামগুলির সেই ছবিটা পাল্টে দিতেই এলাকার যুব সম্প্রদায় এবং স্থানীয় একটি ক্লাবের উদ্যোগে কমিটি গড়ে স্থানীয় নতুনডিহি গ্রামে শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজোর আয়োজন। সেই পুজোয় এ বার পাঁচে পা দিল। উদ্যোক্তাদের দাবি, পুজোর সময় আর কেউ গ্রাম থেকে চলে যায় না। বরং এখন পুজোর সময় পরিবার নিয়ে বাপের বাড়ি চলে আসে এলাকার দূরে বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েরাও।

স্থানীয় সূত্রের খবর, নতুনডিহি কদমহির, ছাগলাকুরি, কুমারডিহি, নিমদাসপুর, মহুলডাঙা, এবং লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের পাড়জোড়, রাজুডিহি, বুলান্দ প্রভৃতি আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে অন্যান্য পুজোর চল থাকলেও দুর্গাপুজোর চল ছিল না। মূলত আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকায় যার মূল কারণ ছিল। বছর চারেক আগে সবাই মিলিত হয়ে বীরভূম আদিবাসী গাঁওতা সংগঠনের সম্পাদক রবিন সোরেনকে পুজো কমিটির সভাপতি এবং নতুনডিহি গ্রামের বলরাম গোস্বামীকে সম্পাদক করে দুর্গাপুজোর আয়োজন শুরু হয়। গত বছর থেকে এই পুজো কমিটির সম্পাদক হয়েছেন শ্যামলাল গোস্বামী।

প্যান্ডেল, আলো বা অর্থের জৌলুস না থাকলেও এতগুলো গ্রামের মানুষ মেতে থাকেন একটি পুজোকে নিয়েই। তাই পুজোর ক’টা দিন গমগম করে গাছ-গাছালিতে ভরা নতুনডিহি বর্ডার মোড়। এলাকার বাসিন্দা বাবুধন মারান্ডি, শিবনাথ টুডুরা বলছেন, ‘‘পুজোর ক’দিন এত ব্যস্ত থাকি, কী ভাবে যে দিনগুলো কেটে যায় বুঝতেই পারি না।’’ একই কথা শোনা যায় এলাকার বধূ লক্ষ্মী সোরেন, শরিকা গোস্বামীদের মুখেও। তাঁরা বলছেন, ‘‘আমাদের এখানে কোনও ভেদাভেদ নেই। সবাই একসঙ্গে ঘট ভরতে যাই। পুজোর কাজকর্ম, খাওয়াদাওয়া নিয়েই মেতে থাকি। সবাই মিলে পুজোর ক’দিন আনন্দ করে কেটে যায়।’’

এ বার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল নতুনডিহি জনকল্যাণ ক্লাবের চালায় প্রতিমা গড়ছেন ঝাড়খণ্ডের পাড়জোড়ের মৃৎশিল্পী কাতু রায়। পাশে বসে ঠাকুর গড়া দেখছেন ক্লাবের সম্পাদক ওমপ্রকাশ গোস্বামী। পুজো কমিটির সভাপতি রবিন সোরেন বলেন, ‘‘দুর্গাপুজো বাংলার বড় উৎসব। অথচ আমাদের এই এলাকায় পুজো হতো না। ছোটবেলায় পুজোর সময় খুব কষ্ট হতো। পুজোর সময় মায়ের সঙ্গে হয় মামার বাড়ি, নয়তো অষ্টমী বা নবমীর দুপুরে বাবাদের হাত ধরে সিউড়ি যেতাম ঠাকুর দেখতে।’’ তাই চার বছর আগে এলাকার সকলে মিলে এই পুজো করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বর্তমান সম্পাদক শ্যামলালবাবু জানালেন, এলাকার অধিকাংশ লোকজনই খেটে খাওয়া দিনমজুর পরিবারের। সবাই একত্রিত হওয়ায় দুর্গাপুজো আয়োজনের টাকা-সহ সব সমস্যা দূর হয়ে গিয়েছে। কোষাধক্ষ্য চঞ্চল গোস্বামীর বলেন, ‘‘আমাদের বাজেট মাত্র ৬০ হাজার টাকা। আলো, প্যান্ডেলের জাঁকজমক নেই ঠিকই। কিন্তু আনন্দ আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

natundihi durga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE