সরকারি এবং সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলের শিক্ষকদের একাংশের বিরুদ্ধে প্রাইভেট টিউশনে যুক্ত থাকার অভিযোগ নিয়ে সরগরম বাঁকুড়া। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এবার ময়দানে নেমেছে জেলা প্রশাসন। গত ৩ জানুয়ারি বাঁকুড়ার জেলা স্কুল পরিদর্শক (সেকেন্ডারি) পঙ্কজ সরকার বেশ কয়েকটি ব্লকের বহু স্কুলের প্রধান শিক্ষককে একটি নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন। তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, অভিযোগ সত্য হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে।
গত ২৪ ডিসেম্বর গৃহশিক্ষকদের সংগঠন ওয়েস্টবেঙ্গল প্রাইভেট টিচার অ্যাসোসিয়েশন বাঁকুড়ার স্কুল পরিদর্শকের (সেকেন্ডারি) কাছে একটি অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন। রবিবার সংগঠনের বাঁকুড়া জেলার নেতা শঙ্কুরাজ বিশ্বাস বলেন, ‘‘রাইপুর, সারেঙ্গা, সিমলাপাল এবং তালড্যাঙড়ার সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলের একশোর-ও বেশি শিক্ষক প্রাইভেট টিউশনে যুক্ত। ওই বিষয়ে চিঠি লিখেছিলাম। তাঁদের নামের তালিকাও আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’
সংগঠনের সারেঙ্গা ব্লকের সভাপতি পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘সারেঙ্গার চার-পাঁচটি স্কুলের ২৬ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রাইভেট টিউশনে যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছি। তাঁদের নাম প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এমন অনেক শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা স্কুল ফাঁকি দিয়েও প্রাইভেট টিউশন করেন। মাসে তাঁদের আয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।’’ তিনি বলেন, ‘‘তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই অভিযোগ জানানোর পরেই আমাকে হেনস্থা করা হয়েছে।’’
অভিযোগের প্রেক্ষিতে পঙ্কজবাবু ওই স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকদের চিঠি পাঠান। আনন্দবাজারের কাছে তাঁর পাঠানো দু’টি চিঠির প্রতিলিপি এসে পৌঁছেছে। একটি চিঠিতে ১৮টি স্কুলের নাম রয়েছে। অন্যটিতে রয়েছে চারটি স্কুলের নাম।
দু’টি চিঠির সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয়েছে ‘ওয়েস্টবেঙ্গল প্রাইভেট টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের’ দায়ের করা অভিযোগপত্র। পঙ্কজবাবু চিঠিতে লিখেছেন, ‘অভিযোগ সত্য হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে।’
পঙ্কজবাবুর বক্তব্য, ‘‘শিক্ষার আইন অনুযায়ী সরকারি এবং সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলগুলির শিক্ষকেরা অর্থের বিনিময়ে টিউশন করতে পারেন না। এই বিষয়ে সরকারি নির্দেশও রয়েছে। আমি চিঠি দিয়ে বিষয়টি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের জানিয়েছি।’’ সরকারি এবং সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলর কোনও শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রাইভেট টিউশনে যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণ হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিবিধ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সাসপেনশন এবং চাকরি থেকে বরখাস্তও করা হতে পারে তাঁদের।
শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ শোরগোল ফেলেছে জেলায়। শনিবার রাইপুরের বহু মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাইপুর ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখান। পড়ুয়াদের দাবি, তাঁদের পছন্দের স্কুল শিক্ষকেরা যাতে নির্বিঘ্নে শিক্ষকতা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকদের ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে ওই পড়ুয়ারা বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্যসড়ক অবরোধ করেন। যে ঘটনার প্রেক্ষিতে এদিন রাইপুরে সভা করে গৃহশিক্ষকদের সংগঠন।
শঙ্কুরাজের অভিযোগ, ‘‘বিষয়টির গুরুত্ব বোঝার মতো বয়স পড়ুয়াদের হয়নি। তাঁদের পথে নামিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে চান অভিযুক্ত শিক্ষকেরা। আমরা পড়ুয়া এবং তাঁদের অভিভাবকদের বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy