Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছেলের স্মৃতিতে বৃদ্ধাশ্রমে দান দম্পতির

শোভনকে ছোটবেলায় পড়িয়েছেন হরিসাধন দে। তিনি জানাচ্ছেন, পড়াশোনাতেও বরাবর ভাল ছিল সে। পদার্থবিদ্যায় প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর। সরকারি চাকরিও পেয়েছিলেন। কিন্তু টানটা ছিল ছাত্র পড়ানোর। তাই সব ছেড়ে বিষ্ণুপুরের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষকতা শুরু করেন। 

স্মৃতি: ছেলের ছবি নিয়ে নেপালবাবু ও মাধবীদেবী। নিজস্ব চিত্র

স্মৃতি: ছেলের ছবি নিয়ে নেপালবাবু ও মাধবীদেবী। নিজস্ব চিত্র

 শুভ্র মিত্র
জয়পুর শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:০০
Share: Save:

বেঁচে থাকলে তার বয়স হত ৩২। ছবি আঁকড়ে এখন সেই কথাটাই ভাবেন মাধবীদেবী আর নেপালবাবু। বুধবার ছিল তাঁদের একমাত্র ছেলে শোভনের জন্মদিন। তাঁরা চলে এসেছিলেন বিষ্ণুপুরের ভড়া গ্রামের বৃদ্ধাশ্রমে। দান করেছেন এক লক্ষ টাকা।

জয়পুরের থানাগোড়ায় গাছগাছালি ঘেরা দোতলা বাড়ি নেপালবাবুদের। বারান্দায় বসেছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি। কোলে এসে পড়েছে সকালের রোদ। এখন তাঁদের দিন কাটে বাগানে গাছের যত্ন করে। নেপালবাবু বলেন, ‘‘ছেলের একটা ইচ্ছে অন্তত পূরণ করতে পারলাম।’’ তাঁরা জানাচ্ছেন, বরাবর এক ডাকে অসহায় মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন শোভন। ক্লাবের রক্তদান শিবির হোক আর রাত বিরেতে পথে শুয়ে থাকা দুঃস্থ মানুষের গায়ে কম্বল বিছিয়ে দিয়ে আসা— সমস্ত কাজেই তিনি থাকতেন একেবারে সামনের সারিতে। ভাল ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসাবেও নামডাক ছিল।

শোভনকে ছোটবেলায় পড়িয়েছেন হরিসাধন দে। তিনি জানাচ্ছেন, পড়াশোনাতেও বরাবর ভাল ছিল সে। পদার্থবিদ্যায় প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর। সরকারি চাকরিও পেয়েছিলেন। কিন্তু টানটা ছিল ছাত্র পড়ানোর। তাই সব ছেড়ে বিষ্ণুপুরের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষকতা শুরু করেন।

ভূমি সংস্কার দফতর থেকে অবসর নেওয়া নেপালবাবুর মনে পড়ে, সেটা ছিল ২০১১ সাল। তাঁর রুটিন চেকআপের জন্য ভেলোরে যাওয়া হয়। দিন পনেরোর ছুটি নিয়ে সঙ্গী হয়েছিলেন শোভন। আর বিনা মেঘে বাজের মতো তাঁরই জটিল অসুখ ধরা পড়ে সেখানে গিয়ে। ছুটে বেড়িয়েছেন মুম্বই, কলকাতা। বছরও ঘোরেনি। ২০১২-র ৩ মে সবাইকে ছেড়ে চলে যান শোভন। মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে।

সম্প্রতি ভড়া গ্রামের বৃদ্ধাশ্রমে গিয়েছিলেন নেপালবাবু আর মাধবীদেবী। জানাচ্ছেন, পরিবেশটা ভাল লেগে যায় তাঁদের। বৃদ্ধ দম্পতি বলেন, ‘‘কত বয়ষ্ক মানুষ যন্ত্রণা ভুলে একসঙ্গে বেঁচে আছেন। কিছু ছেলে কী আশ্চর্য উদ্যমে সব সামলাচ্ছে। তখনই ঠিক করি, আমাদের দিক থেকে যতটা পারি সাহায্য করব। ছেলেটা থাকলে ও নিজেই ছুটে যেত।’’

ভড়া গ্রামের বৃদ্ধাশ্রমটি সামলান স্থানীয় বাসিন্দা বলাই গড়াই ও গোরাপদ দে। বৃদ্ধ দম্পতির সঙ্গে আলাপে এবং তাঁদের সাহায্য পেয়ে অভিভূত তাঁরা। গোরাপদবাবু বলেন, ‘‘ওঁদের মতো মানুষই আমাদের অনুপ্রেরণা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Donation Old Age Home Purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE