Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সং সেজে হারানো দিন ফিরিয়ে আনলেন প্রার্থী

মাথায় ঝাঁকড়া কাচা-পাকা চুল, পরনে সাদা ফতুয়া ও রংচঙে লুঙ্গি, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। কাঁধের বাঁকের দু’প্রান্তে ঝুলছে প্লাস্টিকের ঘড়া। পাড়ায় পাড়ায় তিনি হাঁকছিলেন— হাঁড়ি, ঘড়া নেবেন গো...। সেই ডাক শুনে ঘর থেকে যাঁরাই বেড়িয়ে এসেছেন, সব দেখে তাঁরা হেসে খুন! তাঁর সঙ্গে যে ভোটের পোস্টার লেখা একপাল অনুগামীরা আসছেন। ভোটাররা তখনই বুঝে যান, এ মোটেই হাঁড়ি-ঘড়া বিক্রেতা নয়।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৩
Share: Save:

মাথায় ঝাঁকড়া কাচা-পাকা চুল, পরনে সাদা ফতুয়া ও রংচঙে লুঙ্গি, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। কাঁধের বাঁকের দু’প্রান্তে ঝুলছে প্লাস্টিকের ঘড়া। পাড়ায় পাড়ায় তিনি হাঁকছিলেন— হাঁড়ি, ঘড়া নেবেন গো...। সেই ডাক শুনে ঘর থেকে যাঁরাই বেড়িয়ে এসেছেন, সব দেখে তাঁরা হেসে খুন!

তাঁর সঙ্গে যে ভোটের পোস্টার লেখা একপাল অনুগামীরা আসছেন। ভোটাররা তখনই বুঝে যান, এ মোটেই হাঁড়ি-ঘড়া বিক্রেতা নয়। বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনে সং সেজে ভোটারদের একটা নির্মল আনন্দের বিকেল উপহার দিলেন পুরুলিয়া শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী গোবিন্দ মুখোপাধ্যায়।

একটা সময় ছিল পয়লা বৈশাখে পুরুলিয়া শহরের পাড়ায় পাড়ায় নানা সাজে, নানা বেশে ঘুরে বেড়াত সঙের দল। শহরের আদি বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এক সময়ে পয়লা বৈশাখের অন্যতম বিনোদন ছিল এই সঙ। পাড়ার বা এলাকার পরিচিত মুখকে কখনও হনুমান, কখনও পাগল, কখনও বা শিব এ রকম নানা বেশে ঘুরে বেড়াতে দেখতেন বাসিন্দারা। শুধু ছোটরাই নয়, সংদের দেখে আমোদে মাততেন বড়রাও। তাই অনেকেই চেয়ে থাকতেন শুধু এই দিনটির দিকে। এখন শহর বেড়েছে আড়ে বহরে, বদলে গিয়েছে বিনোদনের সংজ্ঞাও। তাঁদের কথায়, এখন আর বিভিন্ন পাড়ায় দলে দলে সঙের দেখা মেলে না। তাঁদের ঘিরে সেই উন্মাদনাও আর নেই। বছর শুরুর প্রথম বিকেলে সেই হারানো দিনই ফিরিয়ে আনলেন গোবিন্দবাবু।

তিনি পুরুলিয়া চেম্বার অব কমার্স ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি পদে রয়েছেন টানা ২৩ বছর। ঢাকার বিক্রমপুরের থোড়গাঁও থেকে তাঁর ঠাকুরদা এসেছিলেন এই শহরে। বাবা নৃপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও কাকা খগেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় দু’জনেই ছিলেন চিকিৎসক। গোবিন্দবাবুর কথায়, ‘‘আমি দীর্ঘদিন ধরেই ডানপন্থী ঘরানার মানুষ। বিভূতিভূষণ দাশগুপ্ত থেকে দেবেন মাহাতো সকলের হয়েই পোলিং এজেন্টের কাজ করেছি। আমার স্ত্রী (মৃদুলা মুখোপাধ্যায়) পুরুলিয়া পুরসভার উপপুরপ্রধানও ছিলেন।’’

হঠাৎ সঙ সাজার ইচ্ছে হল কেন? গোবিন্দবাবুর কথায়, ‘‘পয়লা বৈশাখ সং সাজা পুরুলিয়ার অনেক দিনের রেওয়াজ। কিন্তু দিন বদলানোর সাথে সাথে এই রেওয়াজ ফিকে হয়ে আসছে। এখন আর সে ভাবে প্রতিটি পাড়ায় সং বেরোতে দেখা যায় না। অথচ এই সংস্কৃতি শহরের শিকড়ে রয়েছে। ১৯৭৬ সালে আমি কলকাতায় একটি প্রতিযোগিতায় সং সেজে প্রথম হয়েছিলাম। বছর দশেক আগে মাদারি কা খেল দেখিয়েছিলাম সং সেজে। এ বার আমি ভোটে দাঁড়িয়েছি। তাই ভোট চাওয়ার সঙ্গে মানুষকে আনন্দও দিতে আবার সং সাজলাম।’’

সং যে তিনি একাই সেজেছেন তা নয়। তাঁর মিছিলে অনুগামীদের মধ্যে কেউ হনুমান, কেউ ভূত, কেউ পেত্নীও সেজেছেন। তবে সামনে হাঁড়ি বিক্রেতার সাজে প্রার্থী নিজে। তাঁর ঝাঁপিতে রাখা ঘড়ার গায়ে তাঁর প্রতীক ‘চশমা’ আঁকা। বললেন, ‘‘কেউ কিনতে চাইছে না। আসলে শহরে জলই তো নেই।’’ এটাই যে এই শহরের সব দলরেই প্রার্থীর প্রচারের মূল বিষয়। পরিচিত গোবিন্দবাবুকে এই বেশে দেখে এলাকার বাসিন্দা হরিপদ মাঝি, সুজন দাস, প্রতিমা দাসেরা বললেন, ‘‘ওনাকে এই অদ্ভুত সাজে দেখে প্রথমে চিনতে পারিনি। পরে বুঝতে পেরে বেশ মজা লেগেছে।’’

তৃণমূলের জেলা কমিটির নেতা গোবিন্দবাবু কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হওয়ার পরেই দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করেছে। তাই এ দিন তাঁর সং চেয়ে ভোটারদের আমোদ দেওয়ার কথা শুনে এলাকার তৃণমূল নেতাদের কটাক্ষ, ‘‘উনি সং সেজেছেন বটে। কিন্তু এ সব করে তো ভোট পাবেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE