Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সব বাড়িতে শৌচাগার, তবুও ছুট ঝোপেঝাড়ে

পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা ৭ ডিসেম্বর পার হয়ে গেলেও বাঁকুড়ার তিনটি পুরসভা খোলা জায়গায় শৌচ বন্ধ করতে পারেনি। কোথায় সমস্যা? খোঁজ নিল আনন্দবাজারপুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা ৭ ডিসেম্বর পার হয়ে গেলেও বাঁকুড়ার তিনটি পুরসভা খোলা জায়গায় শৌচ বন্ধ করতে পারেনি।

আবডালে: বিষ্ণুপুর শহরে প্রায়ই দেখা যায় এমন দৃশ্য।— নিজস্ব চিত্র।

আবডালে: বিষ্ণুপুর শহরে প্রায়ই দেখা যায় এমন দৃশ্য।— নিজস্ব চিত্র।

অভিজিৎ অধিকারী
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৩০
Share: Save:

দেড় দশক আগেও খাটা পায়খানা ছিল এই শহরে। তার পরে বহু বৈঠক, আলোচনা করেছে প্রশাসন। বিষ্ণুপুর পুরসভার দাবি, ছবিটা বদলে গিয়েছে আমূল। শহরে একশো শতাংশ শৌচালয় নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসনের প্রশংসা পেয়েছে পুরসভা। তবুও শহরের আনাচে-কানাচে, মাঠে-ঘাটে এখনও শৌচকর্ম সারছেন অনেকে। তা হলে কী এই শহরকে ‘নির্মল’ বলা যাবে?— প্রশ্ন তুলছেন বাসিন্দারাই।

পুরসভার দাবি, ১৯টি ওয়ার্ডে ৫,৩১৫টি শৌচাগার নির্মাণ করার কথা। তা পূরণ হয়েছে। কিন্তু বাস্তব ছবিটা অন্য রকম। অনেক বস্তি এলাকায় এখনও শৌচাগার তৈরি হয়নি। বিষ্ণুপুর রাসমঞ্চের সামনে, বাইপাস এলাকা (প্রস্তাবিত বাস টার্মিনাস), সাক্ষীগোপালপাড়ার পিছনের ফাঁকা জায়গা, কুসুমবনি হাইস্কুলের পিছনে, ভুজন টিলা, যমুনাবাঁধের চার পাশের পাড়, তুড়কির অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকা, ভৈরবতলা, সানপুকুর, কলাপুকুর ইত্যাদি জায়গায় এখনও খোলা জায়গাতেই ভোর হলেই ছুটছেন বাসিন্দাদের অনেকে।

বিষ্ণুপুর পুরসভার নির্বাহী আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ সরকার অবশ্য স্বীকার করছেন, “আমরা উপভোক্তাদের চাহিদা মতো একশো শতাংশ শৌচাগার নির্মাণ করতে পেরেছি। তবে বস্তি এলাকায় শৌচাগার তৈরির জমির সমস্যা রয়েছে। সে কারণে প্রয়োজন থাকলেও শৌচাগার নির্মাণ করা যায়নি। ২০টি সাধারণ শৌচাগার (কমিউনিটি টয়লেট) তৈরি করা হয়েছে। তা যথেষ্ট নয়। প্রতিটি ওয়ার্ডে কমপক্ষে তিনটি করে কমিউনিটি টয়লেট প্রয়োজন।’’ তিনি জানান, সে জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

পুরসভার দাবি, অন্য ভাবেও শৌচাগারের সংখ্যা শহরে বাড়তে চলেছে। রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, ২০২২ সালের মধ্যে সাত হাজার ‘সকলের জন্য গৃহ’ প্রকল্পে বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।

সেই সব বাড়ির সঙ্গে শৌচাগার তৈরি করা হবে। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত বাড়ি তৈরি হয়েছে দু’হাজারের কিছু বেশি। তবে রবীন্দ্রনাথবাবুর দাবির সঙ্গে সহমত নন কাউন্সিলরদের অনেকেই। তাঁদের অভিযোগ, পুর-এলাকায় ২০টি কমিউনিটি টয়লেট নির্মাণের জন্য বরাদ্দ থাকলেও তা সব ওয়ার্ডে হয়নি। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালপুরের এক বাসিন্দা জানান, বাড়িতে শৌচাগার নেই। তাই ফাঁকা জায়গায় শৌচকর্ম করেন। অন্য দিকে, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘শৌচাগার নির্মাণে গলদ রয়েছে। আট জনের পরিবারের পক্ষে তা ব্যবহার উপযোগী নয়। তাই আমরা বাইরেই যাই।’’ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রাসতলা এলাকার আদুরি মাঝি, সুবল মাঝি, মদন লোহারদেরও দাবি, এলাকায় শৌচালয় থাকলে ভাল হত।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাজুলা হাঁড়িপাড়া, কাদাকুলি বাউরিপাড়া, কলাপুকুর মাঝিপাড়া, বিশ্বাসপাড়ার মাঝিপাড়া, সাক্ষীগোপালপাড়ার হাঁড়িপাড়া, দিঘিরপাড় মাঝিপাড়া, মল্লেশ্বর হাড়িপাড়া, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালপুর, তেজপাল, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভুঁইয়াবাড়ি, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাউরিপাড়া-ছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ডে একাধিক বস্তি এলাকা আছে। সে সব জায়গায় বাসিন্দাদের শৌচালয় নির্মাণের নিজস্ব জায়গা অনেকেরই নেই। কমিউনিটি শৌচাগার ছাড়া ওই সব এলাকায় কোনও ভাবেই ঝোপে-ঝাড়ে শৌচকর্ম বন্ধ করা যাবে না বলে মনে করছেন কাউন্সিলর শ্রীকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, উদয় ভগত, রেখা রজক ঘোষাল থেকে বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়ের মতো কাউন্সিলরেরা।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একাধিক বস্তি এলাকা থাকলেও জায়গার অভাবে কমিউনিটি শৌচাগার তৈরি করা যাচ্ছে না। বিকল্প কিছু ভাবতে হবে।” বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় বলেন, “জায়গা থাকা সমস্ত পরিবারেই শৌচাগার হয়েছে। অন্তত আরও ৩০টি কমিউনিটি টয়লেট বরাদ্দ হলে অনেকটা সমাধান সম্ভব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Toilet Open Defecation Bishnupur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE